কোটা সংস্কার আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহতের ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় গ্রেফতার রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসির শিক্ষার্থী আলফি শাহরিয়ার মাহিমকে জামিন দিয়েছেন আদালত। দীর্ঘ ১৫ দিন রংপুর কারাগারে থাকার পর বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোস্তফা কামাল তার জামিন মঞ্জুর করেছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী জোবায়দুল ইসলাম বুলেট আদালতে জামিন শুনানিতে বলেন, ‘মাহিমের বয়স মাত্র ১৬ বছর ১০ মাস। তাকে পুলিশের গুলিতে নিহত বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাইদ হত্যা মামলায় আসামি করে পুলিশ আইন লঙ্ঘন করেছে। তারা শিশু মাহিমকে কোনোভাবেই হত্যা মামলায় গ্রেফতার করতে পারে না।’ একজনকে শিশু আইনে গ্রেফতার না করে হত্যা মামলায় গ্রেফতার করায় উচ্চ আদালতের নির্দেশ এবং শিশু আইন লঙ্ঘনের দায়ে গ্রেফতারকারী তাজহাট থানার এসআই জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির আহ্বান জানান তিনি।
সেই সঙ্গে নিরপরাধ শিশুকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার করে ১৫ দিন অপরাধীদের সঙ্গে কারাগারে আটক রাখা আইনের দৃষ্টিতে বেআইনি বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘সাঈদকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করার ভিডিও দেশের সব গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। সেই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ছাড়াও সারা বিশ্বের সব গণমাধ্যমে সেই ভিডিও প্রদর্শিত হয়েছে। এমন একটি সত্যকে গোপন করতে পুলিশ তাদের অপরাধ থেকে বাঁচতে সাঈদ হত্যা মামলায় মাহিমকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দিয়েছে।’
এই আইনজীবী বলেন, ‘গত ১৮ জুলাই কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পথে পুলিশ তাকে আটক করে পরদিন ১৯ জুলাই সাইদ হত্যা মামলার আসামি হিসেবে আদালতে চালান দিয়েছে। দীর্ঘ ১৫ দিন নিরপরাধ শিশু মাহিমকে জামিন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। অবশেষে বিজ্ঞ বিচারক আজ শুনানি শেষে তাকে জামিন প্রদান করায় সন্তোষ প্রকাশ করছি।’
জামিন শুনানিতে জোবায়দুল ইসলাম বুলেট ছাড়াও আরও অর্ধশতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
মাহিমের মা মর্জিনা বেগম বলেন, ‘আমার মেধাবী ছেলেকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে। বেরোবি শিক্ষার্থী আন্দোলনকারীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপের আঘাতে নিহত হওয়ার অভিযোগ এনে মিথ্যা মামলা করে আমার ছেলেকে আসামি বানিয়ে ১৫ দিন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে রেখে তার জীবনের ওপর যে কালিমা লেপন করেছে তার দায় কি পুলিশ নেবে? আমার শিশু ছেলেকে গ্রেফতারকারীদের বিচার দাবি করছি।’
অন্যদিকে, মাহিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করেন, তার ছেলেকে হত্যা মামলার আসামি বানিয়েছে পুলিশ। একজন শিশুকে শিশু আইনে গ্রেফতার না দেখিয়ে হত্যা মামলার আসামি দেখিয়ে আদালতে চালান দেওয়ার দায় পুলিশকে নিতে হবে।
এ বিষয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রফিক হাসনাইন বলেন, ‘সবার ওপরে আমি একজন মানুষ। মামলার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’
উল্লেখ্য, গত ১৮ জুলাই রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মাহিমকে নগরীর পুরাতন ট্রাকস্ট্যান্ড থেকে কলেজের ড্রেস পরা অবস্থায় গ্রেফতার করে। এরপর তাজহাট থানায় নিয়ে সারা রাত আটকে রেখে পর দিন বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাইদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দেয়। এ ঘটনা জানাজানি হলে নগরীজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। একজন শিশুকে কেন হত্যা মামলায় গ্রেফতার করা হলো তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি পুলিশ।