শীতের শুরুতেই আগুন পোহাতে গিয়ে গত তিন দিনে পাঁচ নারী দগ্ধ হয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে এক বৃদ্ধা ও গৃহবধূর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের ঢাকা বার্ন হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এবার পৌষ মাস শুরুর আগেই রংপুর বিভাগে শীতের তীব্রতা মারাত্মক বেড়েছে। সেই সঙ্গে প্রচণ্ড ঘন কুয়াশায় জনজীবন অচল হবার উপক্রম হয়েছে। শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে শীতের তীব্রতা অনেক বেশি হওয়ায় শীতের কবল থেকে রক্ষা পেতে খড়কুটা জ্বালিয়ে এবং জ্বলন্ত চুলায় আগুন পোহাতে গিয়ে অসাবধানতাবশত পরনের কাপড়ে আগুন ধরে যায়। এসব ঘটনায় গত তিন দিনে পাঁচ নারী দগ্ধ হয়ে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন।
এর মধ্যে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ওসমানপুর গ্রামের জফুনা বেগম (৮৫) ও দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার আলুবাড়ি গ্রামের গৃহবধূ পপি আক্তারের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে বার্ন ইউনিটের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন। তাদের দুই জনের শ্বাসনালীসহ ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে। দুই জনেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের জরুরি ভিত্তিতে ঢাকা বার্ন হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে রোগীর স্বজনরা জানিয়েছেন।
বৃদ্ধা জফুনা বেগমের বড় মেয়ে আফরোজা বেগম জানান, তার মা শীতের কবল থেকে রক্ষা পেতে অন্যদের সঙ্গে খড়কুটা জ্বালানো স্থানে আগুন পোহানোর সময় অসাবধানতাবশত তার শাড়িতে আগুন ধরে যায়। মুহূর্তের মধ্যে সারা শরীরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে পা থেকে মুখসহ বেশির ভাগ জায়গা মারাত্মক দগ্ধ হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে তাকে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকরা তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য ভর্তি হতে বললে মঙ্গলবার রাতে সেখানে ভর্তি করা হয়। ডাক্তাররা বলেছে, তার মায়ের শ্বাসনালীসহ শরীরের ৭০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
তিনি জানান, এ অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় ভর্তি হতে বলেছে। কিন্তু ঢাকায় নিয়ে যাওয়া ও চিকিৎসার খরচ চালানোর মতো অবস্থা তাদের নেই।
একই কথা বললেন দিনাজপুরের বিরল উপজেলার আলুবাড়ি গ্রামের গৃহবধূ পপি আকতারের ভাই শাহ আলম। তিনি জানান, তার বোনের ৪০ দিন বয়সী একটি সন্তান রয়েছে। বাড়ির চুলায় জ্বলন্ত আগুনে তার সন্তানকে আগুনের তাপ দেওয়ার জন্য যায়। কিন্তু অসাবধানতাবশত তার পরনের কাপড়ে আগুন ধরে যায়। তার শ্বাসনালীসহ শরীরের ৭০ ভাগের বেশি অংশ পুড়ে গেছে। ডাক্তাররা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেছে, কিন্তু তাদেরও সেই আর্থিক সঙ্গতি নেই।
এ বিষয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটটি মাত্র ১৫ বেডের মধ্যে তিনটি বিকল। ১২ বেড দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে হয়। যার জন্য সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের বারান্দায় বার্ন ইউনিটের রোগীদের অস্থায়ীভাবে রাখা হয়। এখানে মাত্র দুই জন চিকিৎসক, তার ওপর প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকট আছে। ইচ্ছে থাকলে বার্ন ইউনিটের দগ্ধ রোগীদের ভালো চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ কম।
এ বিষয়ে বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. পলাশ জানান, দুই জন রোগীর ৭০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তাদের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। সে কারণে তাদের ঢাকার বার্ন হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, প্রতি বছর শীতকালে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এভাবে দগ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কোনও এভাবে আগুন পোহানো বন্ধের আহ্বান জানান।
এদিকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে ৭০০ বেশি নারী, বৃদ্ধ ও শিশু দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। গুরুতর আহত হয়েছে প্রায় দেড় হাজারের বেশি মানুষ।