X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

শনির হাওরে হুমকির মুখে ১০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল

হিমাদ্রি শেখর ভদ্র, শনির হাওর থেকে ফিরে
২৩ এপ্রিল ২০১৭, ১৬:২৬আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০১৭, ১৭:২০

শনির হাওর শনির হাওরের লালু গোয়ালা ও ঝালোখালী ফসল রক্ষা বাঁধ। বাঁধের পাশেই বৌলা নদী। নদীর দুই তীর উপচে ঢলের পানি প্রবেশ করছে জেলার অন্যতম শনির হাওরের ফসলি জমিতে। প্রতি মুহূর্তে বাঁধে বাড়ছে পানির চাপ। একদিকে বস্তা ফেলে বাঁধ দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করলে অন্যদিকে সজোরে ঢুকছে ঢলের পানি। কিছুতেই আটকানো যাচ্ছে না পানি। পুরো শনির হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের নিচে দেখা দিয়েছে শত শত চোরাই ছিদ্র। আর এসব ছিদ্র দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে হাওরে। ফলে হুমকির মুখে রয়েছে এ হাওরের ১০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল।

শনির হাওরে বালির বস্তা ফেলে ফসল রক্ষার চেষ্টা শনিবার সরেজমিন শনির হাওরে গিয়ে দেখা যায়, বালির বস্তা, বাঁশ, রশি দিয়ে পানি আটকানোর প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। তবুও কিছুতেই বাঁধ মানছে না। চোরাই গর্ত ও সুরঙ্গ। হাওরের ভেতরের অনেক জমি জলাবদ্ধতায় তলিয়ে গেছে কিন্তু অপেক্ষাকৃত উচু অংশের জমির ফসল রক্ষার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার কৃষক বালির বস্তা, বাঁশ ও মাটিকাটার উড়া, কোদাল নিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করে চলেছেন। অপর দিকে শনিবার প্রবল বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাসে নদীর পানি ফুলে ফেঁপে উঠে হাওরটিকে আরও হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। ১৩ হাজার হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট শনির হাওরে তাহিরপুর, জামালগঞ্জ ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার আড়াই লাখ কৃষকের ২২ হাজার একর জমির বোরো ফসল রয়েছে। এসব জমির ধান পাকা ও আধা পাকা অবস্থায় রয়েছে। কোনও কোনও কৃষক গরুর খাদ্যের জন্য কাঁচা ধান কেটে আনছেন। কেউ কেউ আবার আধাপাকা ধানও কাটছেন কারণ যদি বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যায়। হাওরের চারদিকের গ্রামগুলোর মানুষ ভাঙন আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করছেন। কোথাও গ্রামের মসজিদেও মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলা হচ্ছে, ওমুক বাঁধের অবস্থা খারাপ স্থানীয় কৃষকরা যেন উড়া, কোদাল নিয়ে ফসল রক্ষা বাঁধে গিয়ে কাজ করেন। পুরো শনির হাওর জুড়ে এ দৃশ্যই দেখা গেছে। আকাশের কোনে মেঘ জমলে শনির হাওরের তীরবর্তী কৃষকের মনেও সবহারানোর কালো মেঘ জমে ওঠে। শনির হাওরের রাধানগর ও বেহেলী গ্রামের শতশত মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে বিভিন্ন বাঁধে কাজ করছেন।

শনির হাওরে হুমকির মুখে ১০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল সাহেবনগনর গ্রামের কলমদর আলী বলেন, ‘জীবনেও এত পানি দেখিনি। চারদিকে পানি আর পানি, হাওর গিলে খাওয়ার জন্য হা করে বসে আছে।’

একই গ্রামের লিয়াকত মাস্টার বলেন, ২০ দিন যাবৎ হাওরে মাটির কাজ করছেন। যদি প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে হাওর আর কিছুদিন টিকিয়ে রাখা যায় তাহলে ঘরের খুরাকটা হলেও তুলতে পারবেন।

উজ্জ্বলপুর গ্রামের শামীম মিয়া বলেন, একদিকে মাটির বস্তা ফেললে অন্যদিকে পানি ডুকে। এভাবে যুদ্ধ করে এত দিন ফসল রক্ষা বাঁধ টিকিয়ে রাখা হয়েছে। পানি আর কিছু বাড়লেই ফসল তলিয়ে যাবে।

রামজীবনপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, নদী খনন না করলে বাঁধ দিয়ে আর কোনও লাভ হবে না। কারণ সামান্য পানিতেই নদী টইটুম্বর হয়ে পড়ে।

মধ্যতাহিরপুর গ্রামের মিজান মালিক বলেন, ৫১ হাল জমি করে এক মণ ধানও কাটতে পারি নাই। বেশি লাভের আশায় উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান লাগিয়ে ছিলেন তিনি। তার সম্পূর্ণ জমির ধান এখনও কাঁচা রয়ে গেছে।

সোলেমানপুর গ্রামের শহীদ মিয়া বলেন, সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা খরচ করে হাওরে বাঁধ দেয় আর অনিয়ম, দুর্নীতির জন্য বাঁধ ভেঙে ফসল ডুবে যায়। গত দুই বছর যাবৎ এভাবেই চলছে।

শনির হাওরে হুমকির মুখে ১০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল আলীপুর গ্রামের হিরামন তালুকদার বলেন, তাদের ঘরে এখন একমুঠ ধান, চাল নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, নদীতে পানি বাড়ছে। হাওরের চারপাশের পানি বাঁধে অতিরিক্ত চাপ দিচ্ছে। যেকোনও সময় বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যেতে পারে। তাই তিনি নিজ উদ্যোগে সারাদিন এলাকাবাসীদের সঙ্গে নিয়ে বাঁধের তদারকি করেন। প্রতিদিন শতশত মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমের বিনিময়ে বাঁধ মেরামতের কাজ করে। আগামীতে স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস বলেন, শনির হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত থাকুক তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুনামগঞ্জের দ্বিতীয় বৃহতম শনির হাওরে তাহিরপুর জামালগঞ্জ ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দুই লাখ কৃষকের চাষের জমি রয়েছে। কোনও কারণে বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে গেলে এলাকায় মানবিক বিপর্যয় নেমে আসবে। 

/বিএল/

আরও পড়ুন:
‘হাওরে বোরো ধানের ৮৬ শতাংশই নষ্ট হয়েছে’

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইসরায়েলের নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নেবে হামাস, আশা যুক্তরাষ্ট্রের
ইসরায়েলের নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নেবে হামাস, আশা যুক্তরাষ্ট্রের
রাজশাহীতে তীব্র গরমে মরছে মুরগি, আতঙ্কে খামারিরা
রাজশাহীতে তীব্র গরমে মরছে মুরগি, আতঙ্কে খামারিরা
সিগারেট বাকি না দেওয়ায় দোকানিকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ
সিগারেট বাকি না দেওয়ায় দোকানিকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চার কর্মকর্তা নিহত
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চার কর্মকর্তা নিহত
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে