আজ ২৭ জানুয়ারি, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যার ১৯ বছর পূর্ণ হলো আজ। দফায় দফায় তদন্তের বেড়াজালে আটকে থাকা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার ঝুলে আছে এখনও। সাক্ষীদের না আসা, আসামিদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় ঠিকমতো আদালতে হাজির না হতে পারাসহ বিভিন্ন জটিলতায় বিচার কার্যক্রম দীর্ঘসূত্রতায় পড়েছে। এ অবস্থায় বিচার নিয়ে হতাশার পাশাপাশি ক্ষোভ বাড়ছে নিহতদের পরিবার ও স্থানীয়দের মনে।
২০০৫ সালের এই দিনে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া। বৈদ্যের বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সভা শেষে ফেরার সময় দুর্বৃত্তদের গ্রেনেড হামলায় শাহ এএমএস কিবরিয়া ও তার ভাতিজা শাহ মঞ্জুর হুদাসহ মোট পাঁচ জন নিহত হন। এতে আহত হন জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির এমপিসহ প্রায় ৫০ জন।
এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। কয়েক দফা তদন্ত শেষে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়েছে প্রায় ৮ বছর আগে। কিন্তু নানা কারণে বিচারকার্যে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে দিন দিন ক্ষোভ বাড়ছে নিহতদের স্বজনদের মাঝে।
গ্রেনেড হামলায় নিহত আবুল হোসেন, সিদ্দিক আলী ও আব্দুর রহিমের স্ত্রী-সন্তানরা বলেন, ১৯ বছর ধরে তারা বিচারের অপেক্ষায়। তবে আদৌ বিচার হবে কি না এ নিয়ে তারা সন্দিহান। তারা বলেন, আমাদের খবর কেউ রাখে না। ২৭ জানুয়ারি আসলে সাংবাদিকরা আসে আমাদের দুঃখের কথা জানার জন্য। পরে আর কেউ খোঁজখবর নেয় না।
সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী (পিপি) অ্যাড. সারোয়ার আহমেদ আবদাল বলেন, মামলায় ১৭১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫০ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। বিচারের ক্ষেত্রে আদালতের কোনও ত্রুটি নেই। তিনি বলেন, সাক্ষী নিয়মিত আসলে দেড় বছরের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, আজ আমার বাবার ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। এত দিনে এ ঘটনার সুষ্টু তদন্ত হয়নি। অনেককে এ মামলায় জড়ানো হয়েছে অন্যায়ভাবে। এ হত্যাকাণ্ড কারা ঘটিয়েছে, কী করে ঘটেছে হবিগঞ্জের মানুষ তা জানে। এ সরকারের আমলে বিচার পাবো এ আশা আমরা করি না। এ ধরনের অনেক ঘটনার বিচার মানুষ পাচ্ছে না। তবে একদিন খুনিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গ্রেনেড হামলায় আহত অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির এমপি বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া আপাদমস্তক একজন ভালো মানুষ ছিলেন। সম্মান রেখে সবার সঙ্গে সুন্দরভাবে কথা বলতেন। ২০০৫ সারের ২৭ জানুয়ারি কিবরিয়াসহ পাঁচ জন নিহত হন। আমি নিজেও ক্ষতবিক্ষত হয়েছি। অলৌকিকভাবে আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেন।
তিনি বলেন, ঘটনার পর আহতদের চিকিৎসায় আওয়ামী লীগ ভূমিকা রখেছে। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নিহতদের পরিবারকে ও আহতদের আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। ২৭ জানুয়ারি আসলেই আমার পরিবারের মাঝে উৎকণ্ঠা ও কষ্টের কথা স্মরণ হয়। আমার পরিবারসহ হবিগঞ্জবাসী অপেক্ষা করছে কবে এর বিচার হবে।