X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

কী হবে স্কুল ফিডিং প্রকল্পের?

এস এম আববাস
২৬ জুন ২০২১, ১৩:০০আপডেট : ২৬ জুন ২০২১, ১৩:০০

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্কুলগামী করা, ঝরে পড়া রোধ ও অপুষ্টি দূর করতে চলমান ‘দারিদ্র্য পীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং প্রকল্পের’ মেয়াদ চলতি মাসেই শেষ হচ্ছে। কিন্তু শিগগিরই নতুন প্রকল্প চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এই কারণে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর চলমান প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। 

এ পরিস্থিতেতে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে করোনায় দীর্ঘ সময় বিদ্যালয় বন্ধ থাকা অবস্থায় শিক্ষার্থীদের এনরোলমেন্ট ঠিক রাখা যাবে না। আর শিক্ষার্থীও ঝরে পড়বে, অন্য যেকোনও সময়ের চেয়ে বেশি। 

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।’

গণসাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক কে এম এনামুল হক বলেন, ‘চলমান প্রকল্পে বরাদ্দ বাজেট সব খরচ হয়নি। ফলে সাময়িকভাবে এটি চালিয়ে নেওয়া যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনা অনুযায়ী, নতুন প্রকল্প চালু না করা পর্যন্ত কর্মসূচি চালু রাখা প্রয়োজন।’ তিনি বলেন,  ‘প্রকল্পটি বন্ধ হলে দুটো সমস্যা হবে— করোনাকালে মানুষের খাদ্যাভাব রয়েছে, এতে শিক্ষার্থীদের ওপর সেই চাপ পড়বে। এছাড়া দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের পুষ্টিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে।’

কে এম এনামুল হক আরও বলেন, ‘বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে— করোনার কারণে প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে নেমে গেছে। এই পরিস্থিতিতে কর্মসূচিটি বন্ধ রাখা ঠিক হবে না।’  

২০১১ সালে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘স্কুল ফিডিং কর্মসূচির আওতাভুক্ত এলাকায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার আট শতাংশ বেড়েছে, ঝরে পড়া কমেছে। ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে ভর্তির হার বেড়ে যাওয়ায় জেন্ডার রেশিও এক দশমিক শূন্য এক থেকে বেড়ে এক দশমিক শূন্য ছয় হয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পুষ্টিমান সম্পন্ন বিস্কুট খাওয়ায় তাদের প্রোটিন ঘাটতি কমেছে। অতিদরিদ্র পরিবারের দৈনিক খাদ্য ব্যয় চার দশমিক চার শতাংশ কমে গেছে, যা তাদের বার্ষিক আয়  চার শতাংশ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।’

এসব বিবেচনায় গত ১০ জুন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ‘দারিদ্র্য পীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং প্রকল্পের’ মেয়াদ বাড়াতে চিঠি দেন।

মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘‘দারিদ্র্য পীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং প্রকল্প’ ২০২১ সালের জুনে শেষ হবে। ইতোমধ্যেই এই প্রকল্পের স্কুল মিল কার্যক্রম চলমান রাখা এবং মার্চ ২০২১ থেকে ৫ বছর ৪ মাস মেয়াদে পর্যায়ক্রমে দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সম্প্রসারণের জন্য প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনের পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু গত ১ জুন একনেক সভায় অনুমোদনের সুপরিশ করা হয়নি। সভায় চলমান ‘মিল মোডালিটি’ পর্যালোচনা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। যেহেতু ৩০ জুন প্রকল্পটি শেষ হচ্ছে, সে কারণে জুলাই থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে খাদ্য বিতরণ সম্ভব হবে না। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় চলাকালীন পুষ্টির অভাব পূরণ এবং ক্ষুধা নিবারণে স্কুল মিল দেওয়া না হলে শিশুদের স্বাস্থ্যের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। চলমান প্রকল্পসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়/বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন স্কুল ফিডিং কার্যক্রম পর্যালোচনা করে একটি কার্যকর মডেল নির্ধারণ এবং প্রাক্কলনের যথার্থতা যাচাই করার জন্য কমপক্ষে এক বছর সময় প্রয়োজন হবে।’’

প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর যুক্তি তুলে ধরে মহাপরিচালকের চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘‘চলমান প্রকল্পের পুঞ্জিভূত ব্যয় হবে ৪ হাজার ৫১৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে জিওবি খাতে ব্যয় হবে ৩ হাজার ২৬৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা এবং প্রকল্পে সমুদয় অর্থ ব্যয় হবে। অর্থাৎ জিওবি ফান্ডে অব্যয়িত থাকবে  ৪৭৩ কোটি টাকা। এই অবস্থায় অব্যয়িত অর্থ দিয়ে স্কুল ফিডিং প্রকল্পের চলমান বিদ্যালয়গুলোতে কেবল উচ্চ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ বিস্কুট দেওয়া হলে জুলাই থেকে ১২ মাস এ কার্যক্রম চালানো সম্ভব। এমতাবস্থায় সার্বিক দিক বিবেচনা করে চলমান ‘দারিদ্র্য পীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি’ প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো প্রয়োজন।’’  

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, দেশের দরিদ্র পীড়িত এলাকায় ২০১০ সাল থেকে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি শুরু হয়। বর্তমানে ১০৪টি উপজেলায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন ৭৫ গ্রামের এক প্যাকেট বিস্কুট বিতরণ করা হয়। বিস্কুট থেকে একজন শিক্ষার্থী প্রতিদিন ৩৩৮ কিলোক্যালরি শক্তি পায়। এছাড়া মিড ডে মিল কর্মসূচির আওতায় দেশের ১৬টি উপজেলায় শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবারও দেওয়া হয়।

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলছে কাল
অষ্টম শ্রেণির স্কুল বাড়াতে চায় সরকার
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
সর্বশেষ খবর
টেকনাফে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
টেকনাফে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ ছিল এক ঘণ্টা
ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ ছিল এক ঘণ্টা
‘স্বাভাবিক পরিবেশে বাঁচতে প্রত্যেককে গাছ রোপণ করতে হবে’
‘স্বাভাবিক পরিবেশে বাঁচতে প্রত্যেককে গাছ রোপণ করতে হবে’
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস