X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকি

করোনাকালে শিক্ষায় লাভ-ক্ষতি দুটোই আছে

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৮ অক্টোবর ২০২১, ২০:০৪আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২১, ২০:১৫

করোনাকালে প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে শিক্ষার সব ক্ষেত্রেই অনেক ক্ষতি হয়েছে। দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমরা প্রত্যাশিত শিখনফল পাইনি। তবে প্রযুক্তিগত দিক ছাড়াও করোনা আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। দেশের শীর্ষ স্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের আয়োজনে ‘কোভিডে শিক্ষার লাভ-ক্ষতি’ বিষয়ক বৈঠকিতে বক্তারা এসব কথা বলেন।

মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) বিকালে অনুষ্ঠিত হয় বাংলা ট্রিবিউনের নিয়মিত এই আয়োজন।

বৈঠকিতে অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক স্তর থেকে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে আমাদের। করোনার মধ্যে বন্যাও হয়েছে। নদী ভাঙ্গনে অনেক স্কুল তলিয়ে গেছে। দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে তো আমরা প্রত্যাশিত শিখনফল পেতে পারি না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমরা যেহেতু অনলাইন শিক্ষায় যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেছি, অনেক স্কুলে অনলাইন শিক্ষা কিছুটা পাওয়া যায়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সবার কাছে ডিজিটাল ডিভাইস নেই। এখানে আমরা একটি ডিজিটাল বৈষম্য তৈরি করেছি। গ্রামদেশে যারা একটু বিপন্ন পরিবারের সন্তান তাদের আমরা সুরক্ষা দিতে পারিনি। তাদের হাতে ইন্টারনেট সংযোগসহ একটি ল্যাপটপ কিংবা একটি এন্ড্রয়েড ফোন যদি পৌঁছে দিতে পারতাম তাহলে সেই বৈষম্যটি তৈরি হতো না। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে মোটামুটি সব শিক্ষার্থী সক্ষম হয়েছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি একটি খণ্ডকালীন কোর্স করাই,  সেখানে বড়জোর ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাস করতে পেরেছে। আমি তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য সরাসরি কয়েকটি ক্লাস নিবো। এই বৈষম্য আমাদের অনেক বৈষম্যের সঙ্গে অতিরিক্ত একটি বোঝা। অনেক শিশু ঝরে পড়েছে, অনেকে মেয়ের বাল্যবিবাহ হয়ে গেছে। তাদেরকে আমরা কিভাবে ফিরিয়ে আনবো সেটা নিয়ে আমাদের একটি রোড ম্যাপ থাকা দরকার।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, সরকার রোড ম্যাপ মূলত করে কারিকুলামের মাধ্যমে। সরকার এখন একটি কারিকুলাম করছে। এই কারিকুলামে আমরা ২০২২ সালে একটি পাইলটিং কাজ করবো এবং ২০২৩ সাল থেকে আমরা সেটি বাস্তবায়ন শুরু করবো। করোনার আগেই এই কারিকুলামের চিন্তা করা হয়েছিল। ফলে সেটি আমরা যখন বাস্তবায়ন করবো, তখন যে পদক্ষেপগুলো থাকবে সেটিকে একটি রোড ম্যাপ বলা যেতে পারে। এই কারিকুলামে সরকার একটি মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। এটি আবার একেবারে খুব বড় ধরনের পরিবর্তন যে তা নয়। আমরা এখন যেটা চাচ্ছি সেটি হচ্ছে একটি বাস্তবায়নযোগ্য কারিকুলাম, যেটি আমাদের শিক্ষার্থীদের একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহায্য করবে।তিনি আরও বলেন, এই কারিকুলামে মৌলিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একটা বড় সমস্যা হচ্ছে গ্রহণযোগ্যতা। অর্থাৎ আমাদের অংশীজনরা কতটা এটাকে গ্রহণ করবে। এছাড়া আমাদের যে রিসোর্স আছে সেটি দিয়ে কতটা বাস্তবায়ন করতে পারবো সেটিও একটি বিবেচনার বিষয়।

তিনি আরও বলেন, করোনায় শিক্ষায় ক্ষতি হয়েছে সেটা আমরা বলতে পারছি কিন্তু কতটা ক্ষতি হয়েছে তা এখনও পরিমাপ করা যায়নি। এ পরিমাপ করাও কঠিন। কিন্তু আমাদেরকে ক্ষতির হিসাব করতে হবে, সেই কাজ এখনও চলছে। জ্ঞানের দিক দিয়ে কিছুটা হলেও মাপা যাবে, কিন্তু অন্যান্য অনেক বিষয় মাপা একটু কঠিন হবে। সেটা আমরা কতটুকু পারবো জানি না তবে চেষ্টা করছি। একটা বছর কিন্তু একেবারে গায়েব হয়নি, আমাদের শিক্ষার্থীরা একেবারে কিছুই শিখেনি ব্যাপারটা তা নয়। আমরা যে অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছিলাম সেটি অনেক উৎসাহ নিয়ে শিক্ষার্থীরা করেছে। ২০২০ সালে আমরা অ্যাসাইনমেন্টের ওপর একটা গবেষণা করেছিলাম, সেখানে আমরা দেখেছি প্রায় ৭৫ ভাগ শিক্ষার্থী সশিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরিন বলেন, সব ক্রাইসিসই আমাদের কিছু দিক-নির্দেশনা দেয়, যাতে আমরা পরবর্তী সময়ের জন্য প্রস্তুত হই। আমরা যদি কোনও ক্রাইসিসের মুখোমুখি হই তাহলে পরবর্তীতে সেটা মোকাবিলা করার সক্ষমতা অর্জন করি। সেক্ষেত্রে করোনা আমাদের কিছু শিক্ষা দিয়েছে। প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে আমরা যতটা পিছিয়ে ছিলাম, এখন ততটা পিছিয়ে নেই। দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনার সময় আমার কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি ‑ করোনা আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। হয়তো সবার কাছে ডিজিটাল ডিভাইস ছিল না কিন্তু তার জন্য যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেটাকেও আমার কাছে ইতিবাচক মনে হয়েছে। পাশাপাশি আমরা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর শিখেছি, আরও ইতিবাচক দিক বলতে – আমাদের একসময় সাধারণ একটা স্লোগান ছিল ‘হাত ধোয়া’ , সেটা আমরা স্কুলে শিখাতাম। এখন আর শেখাতে হয় না। মানুষের অনুশীলনের মধ্যে চলে এসেছে। আর আমরা যারা জুলাই থেকে অনলাইনে ক্লাস নিয়েছি অ্যাকাডেমিক রিকভারি প্ল্যান কিন্তু পাবলিক প্রাইভেট সব বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারেক রহমান বলেন, করোনার কারণে শিক্ষকদের প্রাপ্তি অনেক। কারণ অনলাইনে ক্লাস শুরু করার আগে আমরা শিক্ষকরা কিছুটা ভীত ছিলাম। সেই ভীতি আমরা এখন কিছুটা কাটিয়ে ওঠতে পেরেছি। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানে কিন্তু প্রচুর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের ফ্যাকাল্টিদের লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম যেমন গুগল ক্লাসরুম, জুম ‑ এগুলোর বিষয়ে কিন্তু শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। যার কারণে এখন তারা খুব সাচ্ছন্দ্যে এগুলো ব্যবহার করে ক্লাস নিচ্ছেন। আমি বলবো না যে ‑ একেবারে সমাধান হয়ে গেছে কিন্তু বিষয়গুলো আগের তুলনায় সহজ হয়ে এসেছে।তিনি আরও বলেন, বিষয়গুলো এমন না যে আপনি চাইলেই কালকে কিছু টেকনোলোজি টিচিং লার্নিং প্রক্রিয়ায় যুক্ত করে দিবেন, এটার পেছনে কিন্তু যথেষ্ট পেডাগজি (শিক্ষাবিদ্যা) আলোচনা আছে। আমার কাছে মনে হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এদিক থেকে কিছুটা এগিয়ে আছে। তারা কিন্তু এই জিনিসগুলো সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পেরেছে।

বাংলা ট্রিবিউনের সিনিয়র রিপোর্টার এস এম আববাস বলেন, চ্যালেঞ্জ শেষ হয়নি, সেটি আছে এবং সেটি বোধ হয় দুই বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি সময়ের। করোনায় শিক্ষা ক্ষেত্রে লাভের পরিমাণের চেয়ে ক্ষতির তালিকা বেশ লম্বা। কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে সব স্তরেই এ ক্ষতি হয়েছে।

তিনি বলেন, অনেক কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। যেহেতু এগুলো বন্ধ হয়েছে, সেখানে শিক্ষকদের বেতন ওঠার প্রশ্নই আসে না। এরপর মাধ্যমিকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষার্থীরা, এখানে শিখনফল অর্জনের বিষয়টি ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। সে ব্যাপারে আমরা পিছিয়েছি, যদিও কিছু আশার কথা আছে। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা কিছুটা পুষিয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ ১৮ মাস কতটাই পোষানো যায়?

তিনি আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুটা অবহেলা দেখানো হয়েছে। কারণ সুযোগ থাকলেও শিক্ষার্থীদের শতভাগ টিকার আওতায় আনতে পারেনি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছে। তবে তারা ধন্যবাদ প্রাপ্য, কারণ খুব অল্প সময়ে তারা অনলাইন শিক্ষা আয়ত্তে আনতে পেরেছে। ক্ষতির তালিকা বিবেচনা করলে অনেক লম্বা।

এ বৈঠকি সরাসরি সম্প্রচার করেছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজ। পাশাপাশি বাংলা ট্রিবিউনের ফেসবুক ও হোমপেজে লাইভ দেখানো হয়েছে এই আয়োজন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) সহযোগিতায় বৈঠকিটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

/এসও/এমএস/
সম্পর্কিত
শিশু অধিকার বিষয়ে মিডিয়ার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ: স্পিকার
‘প্রকৃতি নারীকে দুর্বলভাবে তৈরি করেনি’
সবার যত্ন নিতে গিয়ে নারী নিজের যত্নই নিতে পারে না: ডা. হাসনা হোসেন আখী
সর্বশেষ খবর
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
উপজেলা নির্বাচনমন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা