X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘শিক্ষাবিদ হিসেবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসিকে ট্রাস্টি করা আইনের ব্যত্যয়’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৯ আগস্ট ২০২২, ২২:০২আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২২, ২২:২০

বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পুনর্গঠন করে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে (ভিসি) শিক্ষাবিদ হিসেবে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য করা আইনের ব্যত্যয় হয়েছে বলে মনে করছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি। সমিতি বলছে— বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বেতন নেন। পদাধিকার বলে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সচিব। তাহলে শিক্ষাবিদ হিসেবে তাকে আবারও কেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য করা হবে। এটা আইনের ব্যত্যয়।

গত ১৬ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পুনর্গঠন করা হয়। ট্রাস্টিজ পুনর্গঠন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় আদেশে। বর্তমানে দায়িত্বরত উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলামকে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য করা হয়েছে শিক্ষাবিদ হিসেবে। 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদাধিকার বলে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সচিব। তাহলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তিনি আবারও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হবেন কীভাবে? ৩৫(৭) ধারা অনুযায়ী যদি দেওয়া হয়, তাহলে তিনি ভিসি হতে পারেন না। কারণ, ভিসিও হবেন আবার ট্রাস্টিও হবেন, তা তো আইনে নেই। আইনে আছে—ট্রাস্টিরা কোনও সুবিধা নিতে পারবেন না। কিন্তু  উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে বেতন নেন। চ্যান্সেলরের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন। তাহলে তিনি আবার ট্রাস্টি হন কীভাবে? শিক্ষাবিদ যদি হতে পারেন, তাহলে  দেশে কি আর কোনও শিক্ষাবিদ নেই?  যিনি ট্রাস্টি তিনি বেতন নিতে পারেন না, ট্রাস্টি বেতন নেবেন এটি আইনে নেই। আমার মনে হয়, এটি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সরকার যদি চায়, আইনে যদি থাকে, তাহলে দিতে পারে। তাহলে একজন শিক্ষাবিদকে দিতে হবে, সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নয়। বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি মনে করে, এটি আইনের ব্যত্যয় হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৩৫(৭) ধারার প্রয়োগ করে আচার্যের অনুমোদনে এটি করা হয়েছে।  আচার্যকে আইনের এই ধারায় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, এই ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন আচার্য। ’

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৩৫(৭) ধারা অনুযায়ী, ‘কোনও কারণে কোনও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা দেখা দিলে কিংবা এর স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত ও শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে চ্যান্সেলর, কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে প্রয়োজনীয় আদেশ ও নির্দেশ দিতে পারবেন এবং এদ্ববিষয়ে চ্যান্সেলরের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।’

বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পুনর্গঠনের যুক্তি তুলে ধরে মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, ‘নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (বিওটি)-এর কতিপয় সদস্য ও অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ, জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় জড়িত, যা  বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্তে প্রমাণিত হয়। তাদের এই কর্মকাণ্ড বিদ্যমান আইনের ধারা ৬(১০) এবং দেশের প্রচলিত ফৌজদারি আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি ক্রয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিওটির চার জন সদস্য আর্থিক দুর্নীতি করায় দুদকের মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে বর্তমানে কারান্তরীণ রয়েছেন। এছাড়া ট্রেজারার নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারি নথিতে জালিয়াতির ঘটনায় একজন ট্রাস্টির বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বোর্ড অব ট্রাস্টে অন্তর্ভুক্ত থাকা সমীচীন নয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বোর্ড অব ট্রাস্ট পূর্ণাঙ্গভাবে পরিচালনা করতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা ও পরিচালনা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ার বিষয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, যেকোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন ঘটনা ঘটতে পারে। স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হলেই এমন ঘটনা যাতে না ঘটে, বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি সেটি চায়—এমন কাজ যেন না করা হয়। মন্ত্রণালয়ের যারা এ কাজটি করেছেন, তারা সরকারকে বিব্রত করেছেন বলে মনে হয়। এই আদেশ রেক্টিফাই করা হোক। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে এত টাকা চুরি হয়েছে, কিন্তু অর্থ পরিচালনায় থাকেন উপাচার্য এবং ট্রেজারার। দায়িত্বরত উপাচার্য কে ছিলেন, তাদের কী শাস্তি হলো? তার তো দায় রয়েছে। অথচ তাকেই আবার ট্রাস্টি করা হচ্ছে। অতএব, সরকার যদি দেখে ভালোভাবেই দেখা উচিত।’

ইউজিসিরও সঠিক ভূমিকা পালন করা উচিত উল্লেখ করে শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘ইউজিসিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন জন ডিন থাকেন খণ্ডকালীন সদস্য, তিন জন ভিসি থাকেন খণ্ডকালীন সদস্য। কিন্তু শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন প্রতিনিধিও রাখা হয় না। অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল আইনে বলা আছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি থেকে একজন প্রতিনিধি থাকবে, কিন্তু তা রাখা হয় না।’

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
এপিএ’র কর্মপরিকল্পনায় মানসম্মত উচ্চশিক্ষা ও গবেষণাকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ
দারুল ইহসানের বৈধ সনদধারীদের এমপিওতে বাধা নেই
আইএসইউর উপাচার্য পদে পুনরায় নিয়োগ পেলেন ড. আব্দুল আউয়াল খান
সর্বশেষ খবর
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
চতুর্থ ধাপে যে ৫৫ উপজেলায় ভোট
চতুর্থ ধাপে যে ৫৫ উপজেলায় ভোট
ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন ৫ জুন
ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন ৫ জুন
সোনার দাম ভ‌রিতে কমলো ৩ হাজার টাকা
সোনার দাম ভ‌রিতে কমলো ৩ হাজার টাকা
সর্বাধিক পঠিত
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী 
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী