X
বুধবার, ০১ মে ২০২৪
১৮ বৈশাখ ১৪৩১

টানা ২৫ দিন তবলা বাজিয়ে বাংলাদেশির বিশ্ব রেকর্ড

তানভীর আহমেদ, লন্ডন
২৩ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৭:৩৫আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৩:১৬

হাতে চালিত বাদ্যযন্ত্র বিভাগে টানা ৫৬০ ঘণ্টা তবলা বাজিয়ে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশি তবলা বিশারদ সুদর্শন দাস। ভারতীয় বংশোদ্ভূত কুজলমান্নাম রামকৃষ্ণানের গড়া ৫০১ ঘণ্টার রেকর্ড ভেঙে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বই-এ নিজের নাম লেখালেন তিনি।

বিশ্ব রেকর্ডের জন্য তবলা বাজাচ্ছিলেন সুদর্শন দাস চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার অমূল্য রঞ্জন দাশ ও বুলবুল রাণী দাসের সন্তান সুদর্শন দাস ৪ বছর বয়সে চট্টগ্রামের আলাউদ্দিন ললিতকলা একাডেমিতে তবলায় হাতেখড়ি নেন। ১৯৯১ সালে আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জেতেন সুদর্শন।  ১৯৯২ সালে ভারতের শান্তিনিকেতনে পণ্ডিত বিজন চ্যাটার্জির কাছে তবলা বিষয়ে তালিম নেন তিনি। ১৯৯৮ সালে ভারতের বোলপুরের শান্তি নিকেতন থেকে সুদর্শন দাসকে তবলা বিশারদ উপাধি দেওয়া হয়।

পরে ২০০৪ সালে যুক্তরাজ্যে আইন পেশায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিলেও সুদর্শনের মন পড়ে ছিলো তবলায়। লন্ডনে প্রতিষ্ঠা করেন ‘তবলা ও ঢোল’ একাডেমি। বর্তমানে লন্ডনের নিউহ্যাম কাউন্সিলে আর্ট ও মিউজিক ইন্সট্রাকটর হিসেবে কাজ করছেন সুদর্শন। এছাড়া, ২০০৮ সালে ভারতের বেঙ্গালুরুতে আন্তর্জাতিক তবলা প্রতিযোগিতায় রৌপ পদক জেতেন তিনি।

২০০৯ সালে সুদর্শন জানতে পারেন ভারতের কুজলমান্নাম রামকৃষ্ণান নামের এক ব্যক্তি ৫০১ ঘণ্টা মৃদঙ্গ বাজিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন। সুদর্শন ভাবলেন রামকৃষ্ণান মৃদঙ্গ বাজিয়ে গিনেস বুকে নাম লেখাতে পারলে তিনি কেন পারবেন না, তিনি তো তবলা বাজাতে পারেন। তাছাড়া তবলা বাজিয়ে ইতিপূর্বে কেউ বিশ্ব রেকর্ড করেননি। সেই থেকে স্বপ্ন দেখা শুরু। ২০১১ সালে প্রথমবারের মতো সুদর্শন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার আগ্রহের কথা জানান। সুদর্শন দাসের ধারণা ছিলো যেহেতু ইতিপূর্বে কেউ তবলা বাজিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েনি তাই তিনি ১০১ ঘণ্টা টানা তবলা বাজিয়ে এ বিশ্ব রেকর্ড গড়তে পারবেন। কিন্তু গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড কর্তৃপক্ষ জানায় তবলা, ঢোল, মৃদঙ্গ সব ধরণের হাতে চালিত বাদ্যযন্ত্রকে তারা অভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিবেচনা করে থাকে। বিশ্বরেকর্ড গড়তে হলে একটানা ৫০১ ঘণ্টার বেশি সময় তবলা বাজাতে হবে সুদর্শনকে। সেই যাত্রায় আর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড কর্তৃপক্ষের নিয়মকানুন মেনে আবারও ৩ বছর পর চেষ্টা করলেন সুদর্শন। কয়েকদিন পরীক্ষামূলকভাবে তবলা বাজিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড কর্তৃপক্ষকে পাঠালেন তিনি, মনোনীত হলেন না সুদর্শন। ২০১৬ সালে একসঙ্গে ১৫ দিন টানা তবলা বাজানোর ট্রায়াল পাঠালে প্রাথমিক ভাবে নির্বাচিত হন সুদর্শন। মোট ১১ জন প্রাথমিক ভাবে নির্বাচিত হলেও বাকি ১০ জনকে বাদ দিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড কর্তৃপক্ষ চলতি বছর ১ আগস্ট সুদর্শন দাসকেই বিশ্ব রেকর্ড ভাঙার উদ্যোগ নিতে আনুষ্ঠানিক অনুমতি দেয়।

এরপর শুরু হলো পৃষ্ঠপোষক খোঁজার কাজ। নিজের জমানো ৩ হাজার পাউন্ডকে পুঁজি করে মাঠে নামেন তিনি। বহু কাঠ-খড় পুড়িয়ে ২০ হাজার পাউন্ড স্পন্সর সংগ্রহ করে গত ২৭ নভেম্বর পূর্ব লন্ডনের ম্যানরপার্কের স্থানীয় একটি অডিটোরিয়ামে শুরু হয় সুদর্শন দাসের তবলা ম্যারাথন। ২৫ দিন একটানা ৫৬০ ঘণ্টা তবলা বাজিয়ে ২২ ডিসেম্বর বিকাল চারটায় নতুন এই বিশ্ব রেকর্ড গড়েন সুদর্শন। যদিও ২১ দিনের মাথায় সুদর্শন ৫০১ ঘণ্টার পূর্বের রেকর্ডটি ভেঙে ফেলেছিলেন। তারপরও সুদর্শন আগের গড়া রেকর্ডের চেয়ে একটু বেশি বাজিয়ে রাখলেন যেন ভবিষ্যতে কেউ সহজেই এই রেকর্ডটি আর ভাঙতে না পারেন।

পুরো প্রক্রিয়াটির সমন্বয়কারী আবদুল হান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘টানা ২৫ দিন তবলা বাজাতে গিয়ে সুদর্শন দাসকে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটি সিসি টিভির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করেছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড কর্তৃপক্ষ। ক্যামেরায় ধারণ করা ৫৬০ ঘণ্টার ভিডিও রেকর্ড জমা দিতে হবে গিনেস কর্তৃপক্ষকে। এছাড়াও প্রতি ঘণ্টায় ৫ মিনিট ও ২৪ ঘণ্টায় মোট ২ ঘণ্টা বিরতি নিতে পেরেছেন তিনি। এই সময়ের মধ্যেই খাওয়া-দাওয়া, টয়লেট এমনকি ঘুমের কাজটিও শেষ করতে হয়েছে।’

সুদর্শন জানান, এই অসাধ্য সাধনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো বসে বসে তবলা বাজনো। মৃদঙ্গের ক্ষেত্রে সুবিধা হলো বাদ্য যন্ত্রটি গলায় বেঁধে, হেঁটে বসে বা শুয়েও বাজানো যায়। যে সুযোগটি পেয়েছেন কুজলমান্নাম রামকৃষ্ণান, কিন্তু তাকে একটানা বসে থেকেই তবলা বাজাতে হয়েছে। তাছাড়াও তবলা বাজিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে চান এমন কথা শুনে তেমন উৎসাহব্যঞ্জক পৃষ্ঠপোষকও খুঁজে পাননি শুরুর দিকে। তবে তিনি মনে করেন এই বিশ্ব রেকর্ড গড়ে গিনেস বুকে বাংলাদেশের নামটি যুক্ত করতে পারাটাই ছিলো তার কাছে সবচেয়ে বেশি আনন্দের।

ধারণা করা হচ্ছে, সুদর্শন দাসই একমাত্র বাংলাদেশি যিনি সৃজনশীল পেশায় ওয়ার্ল্ড গিনেস রেকর্ড বুকে নাম লেখালেন। ইতিপূর্বে বাঙালি সাতারু ব্রজেন দাস ১৯৫৮ সালে সাঁতার কেটে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে এবং ব্রিটিশ বাংলাদেশি সেলিব্রেটি শেফ টিপু রহমান ২০১২ সালে সবোর্চ্চ পাপাডাম টাওয়ার বানিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন।

/এমও/এমএম/

সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
মে দিবসে ফুঁসে উঠলেন সিনেমা শ্রমিকরা
মে দিবসে ফুঁসে উঠলেন সিনেমা শ্রমিকরা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!
মদ ছেড়ে বললেন, ‘মাইলফলক’
মদ ছেড়ে বললেন, ‘মাইলফলক’
আন্তর্জাতিক মুক্তির আগেই বাংলাদেশে!
আন্তর্জাতিক মুক্তির আগেই বাংলাদেশে!