X
মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গীতিকবি জুলফিকার রাসেলের পাঁচ প্রস্তাবে সরগরম সংগীতাঙ্গন

সুধাময় সরকার
২৫ জুন ২০২০, ১৯:৩৮আপডেট : ২৬ জুন ২০২০, ১২:৪৭

ওপরের সারিতে যথাক্রমে নকীব খান, কবির বকুল, মিথিলা ফারজানা, রবি চৌধুরী, জ.ই মামুন ও পলাশ, মাঝে জুলফিকার রাসেল, আঁখি আলমগীর, ফরিদ আহমেদ, বাপ্পা মজুমদার ও টিনা রাসেল, নিচের সারিতে আহমেদ রিজভী, মিলন খান, প্রীতম আহমেদ, কিশোর, দিনাত জাহান মুন্নী, লুৎফর হাসান, সোমেশ্বর অলি, রবিউল ইসলাম জীবন ও মেহরাব চলমান ঘরবন্দি সময়ে নিজেদের নিয়ে ভাববার সুযোগ পেয়েছেন ব্যস্ত আর উদাসীন শিল্পীরা। আগেও যে এমনটা ভাবেননি, তা নয়। তবে সেসব ছিল বিচ্ছিন্ন ঘটনার মতো। ফলে শিল্পাঙ্গনে অনিয়ম আর অভিযোগ জমতে জমতে পাহাড়।

কথিত লকডাউনের তিন মাসের মাথায় সেসব ভাবনার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে ক্রমশ। ২৪ জুন অনেকটা হঠাৎ করেই গণমাধ্যমে যৌথ বিবৃতি পাঠান শতাধিক সংগীতশিল্পী। স্বাভাবিক, যেখানে বেশিরভাগ শিল্পী কণ্ঠের। তারা স্পষ্ট ভাষায় লিখিত সিদ্ধান্ত জানান, ‘অনেক ফ্রি অনুষ্ঠান করেছি। আর নয়। সম্মানী ছাড়া আমরা আর কোথাও অংশ নিচ্ছি না। সেটা টকশো হোক কিংবা গানের শো। কারণ, আমাদেরও খেয়ে-পরে বাঁচতে হবে।’
কণ্ঠশিল্পীদের এমন যৌথ সিদ্ধান্তে সাধুবাদ জানিয়েছেন দেশের অনেক শিল্পী। এটা তো সত্যি, কণ্ঠশিল্পীদেরও খেতে হয়, বাসা ভাড়া দিতে হয়, হাসপাতালেও যেতে হয়। কিন্তু এমন সত্যির পেছনে যে আরও বড় সত্যি রয়েছে, সেটি ভাববার সুযোগ করে দিলেন দেশের অন্যতম জ্যেষ্ঠ গীতিকবি জুলফিকার রাসেল।
শতাধিক সংগীতশিল্পীর যৌথ বিবৃতি দেওয়ার ২৪ ঘণ্টা না পেরুতেই ‘সম্মানী’ নামক আগুন যেন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো সোশ্যাল মিডিয়ার দেয়ালে দেয়ালে। দেশের সিংহভাগ গীতিকার-সুরকার-সংগীত পরিচালক কথা শুরু করলেন একই ভাষায়। ২৫ জুন দুপুরে যে আগুনের সলতেটা জ্বালালেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতিকবি জুলফিকার রাসেল।
বেশি নয়, তিনি মাত্র পাঁচটি দাবি তুলেছেন কণ্ঠশিল্পীদের কাছে। সঙ্গে সাধুবাদ জানিয়েছেন ‘সম্মানীর’র বিষয়ে কণ্ঠশিল্পীদের এই ঐক্যের জন্য।
কণ্ঠশিল্পীদের প্রতি জুলফিকার রাসেলের তোলা পাঁচটি দাবির মধ্যে রয়েছে:
এক. এখন থেকে সম্মানীর বিনিময়ে কণ্ঠশিল্পীরা যেসব গান পারফর্ম করবেন তার একটা ভাগ গীতিকবি, আরেক ভাগ সুরস্রষ্টা এবং আরেকটি ভাগ সহশিল্পীদের জন্যেও রাখবেন! শিল্পীরা নিজেরাও জানেন গানটা হাওয়া থেকে ভেসে আসেনি।

দুই. এখন থেকে যথাযথ সম্মানী গ্রহণ না করে কোনও গান কোম্পানিকে দেবেন না তারা! যথাযথ সম্মানী না দিয়ে কোনও লিরিক বা সুর ব্যবহার করবেন না! অনেক নতুন গীতিকবি বা সুরস্রষ্টা একটি গান প্রকাশের আশায় আপনার কাছে যাবেন, এটাই স্বাভাবিক! কিন্তু নৈতিক মূল্যবোধ থেকে আপনারা যথাযথ সম্মানী প্রদান করবেন। কেননা, ভবিষ্যতে এই গান আপনি বিভিন্ন শোতে সম্মানীর বিনিময়ে পারফর্ম করবেন।

তিন. গান গাওয়ার সময় নিজের গান বলে চালিয়ে দেবেন না। আপনি কণ্ঠ দিয়েছেন। গানটা লিখেছেন এবং সুর করেছেন হয়তো অন্য আরেকজন। দয়া করে তাদের নাম সম্মানের সঙ্গে উল্লেখ করবেন।
চার. যন্ত্রশিল্পীদের কথাও ভাববেন। তারাও যেন যথাযথ সম্মানী পেতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করবেন। যেখানে এটা সম্ভব হবে না, সেই শো করবেন না। এই নীতিতে অটল থাকবেন।
পাঁচ. এখন যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেটা সারা জীবন মনে রাখবেন।

এই পাঁচটি দাবি প্রসঙ্গে জুলফিকার রাসেল বলেন, ‘শতাধিক শিল্পী এক হয়ে নিজেদের সম্মান ও সম্মানী নিয়ে যেভাবে কথা বলেছেন, সেটা দেখে আমি খুশি। কারণ, সবাই তার যোগ্য সম্মান পাবে—এটাই সবার প্রত্যাশা। এরজন্য আমি তাদের সাধুবাদ জানাই। আমি তাদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত জানিয়ে আরও পাঁচটি পয়েন্ট যোগ করলাম। যার মধ্য দিয়ে শুধু কণ্ঠশিল্পী নয়, পুরো মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির চেহারা বদলে যাবে। কারণ, ইন্ডাস্ট্রি তো শুধু কণ্ঠ দিয়ে হয়নি। এখানে একজন মন্দিরা বাদকেরও সমান কন্ট্রিবিউশন আছে বলে আমি বিশ্বাস করি। ফলে, তাকে ঠকানো মানে তো আপনি শিল্পী হিসেবে নিজেকেই অসম্মানিত করলেন।’
জুলফিকার রাসেলের ফেসবুক পোস্ট:

জুলফিকার রাসেলের এই পাঁচটি প্রস্তাবের সঙ্গে সহমত জানিয়েছেন ‘শতাধিক শিল্পী’র কেউ কেউ। তবে পুরো বিষয়টি নিয়ে গর্জে উঠেছেন দেশের সর্বস্তরের গীতিকার ও সংগীত পরিচালকরা। দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য সমর্থন জানাচ্ছেন সংবাদমাধ্যমসহ দেশের বিভিন্ন সেক্টরের শ্রোতা-সমালোচকরাও।
যেমন, এটিএন বাংলার বার্তাপ্রধান জ. ই. মামুন এই দাবিগুলোর সমর্থনে বলেন, ‘খুব ভালো লাগলো, যুক্তিসঙ্গত কথা। গানকে শুধুমাত্র কণ্ঠদানকারী শিল্পীর সম্পত্তি ভাবার মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে সবাইকে।’ সমর্থন জানিয়েছেন একাত্তর টিভির অন্যতম মুখ মিথিলা ফারজানাও।
অন্যদিকে এমন প্রস্তাবের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন দেশের অন্যতম সংগীতশিল্পী নকীব খান, রবি চৌধুরী, বাপ্পা মজুমদার, আঁখি আলমগীর, পলাশ, প্রীতম আহমেদ, লুৎফর হাসান, কিশোর, টিনা রাসেল, মেহরাব, সুরকার ফরিদ আহমেদ, রাজন সাহা, মুরাদ নূর, গীতিকার আহমেদ রিজভী, কবির বকুল, মিলন খান, নিয়াজ আহমেদ অংশু, রানা, জনি হক, সাকি আহমেদ, রবিউল ইসলাম জীবন, সোমেশ্বর অলি, এ মিজান, ওমর ফারুক বিশাল, অভিনেতা মাজনুন মিজানসহ মিডিয়া ও বাইরের অসংখ্য মানুষ।
একাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া দেশের অন্যতম গীতিকবি কবির বকুল বলেন, ‘সব শিল্পীদের মধ্যে এই শুভবুদ্ধির উদয় হোক। বলতে দ্বিধা নেই, তাদের অনেকের কাছেই পেছনের মানুষদের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি এতকাল।’
এদিকে শতাধিক শিল্পী নিয়ে ‘সম্মানী’ জোটের অন্যতম দুই সদস্য সুরকার ফরিদ আহমেদ ও কণ্ঠশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী। দুজনেই জুলফিকার রাসেলের এই দাবির সঙ্গে সহমত জানিয়েছেন। তবে মুন্নীর সহমতের সঙ্গে রয়েছে খানিক আত্মপক্ষ সমর্থনও।
ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘তর্কের ঊর্ধ্বে একটি কথাই সত্য, তা হলো- গানের মূল স্রষ্টা গীতিকার ও সুরকার। শত শত পারফর্মার হাজার হাজার মঞ্চে একই গান পরিবেশন করতে পারেন, কিন্তু সেই গানের গীতিকবি ও সুরস্রষ্টা বদলাবে না। তাই জুলফিকার রাসেলের এই দাবিগুলো চমৎকার ও যুক্তিসঙ্গত। আমার বিশ্বাস, ক্রান্তিকালে অনেক সমস্যা সহজে সমাধান হয়। সংগীতাঙ্গনের এসব সমস্যাও সমাধান হবে সহসা। মন থেকে গানের স্রষ্টাদের শ্রদ্ধা করলে কণ্ঠশিল্পীদের সেসব স্মরণ করিয়ে দিতে হবে কেন।’
অন্যদিকে দিনাত জাহান মুন্নী জুলফিকার রাসেলের পাঁচ দফা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও মন্তব্য না করলেও বাংলা ট্রিবিউনকে জানালেন তার প্রতিক্রিয়া। বললেন, ‘পাঁচটি দাবির সঙ্গে আমিও সহমত জানাই। তবে জুলফিকার রাসেল ভাইসহ অন্যান্য সিনিয়র গীতিকার-সুরকাররা যদি একটু সচেতনভাবে রয়্যালটির বিষয়টা নিয়ে কাজ করতেন, তাহলে হয়তো এই কথাগুলো এখন আর বলার দরকার হতো না। আমাদের অবস্থান থেকে আমরা শুধুমাত্র অনলাইনে বিনে পয়সায় গান না গাইবার পক্ষে কথা বলেছি বা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দাবি-দাওয়া পূরণে যদি পূর্বের এমন কোনও সফল কর্মকাণ্ডের দৃষ্টান্ত আমাদেরকে দেওয়া হয়, তবে অবশ্যই তা ফলো করবো। এবং সেভাবে চলবার চেষ্টা করবো। কারণ, আমরাও চাই কণ্ঠশিল্পী, সুরকার, গীতিকার ও যন্ত্রশিল্পীদের সঠিক মূল্যায়ন হোক।’

সম্মানী ছাড়া শো নয়: জোটবদ্ধ শতাধিক সংগীতশিল্পী

এই শিল্পী শেষে আরও যোগ করেন, ‘রাসেল ভাইয়ের স্ট্যাটাসটা যুক্তিসঙ্গত এবং সময়োপযোগী। তবে রয়্যালটির সিস্টেম দাঁড় না করিয়ে এসব কথা বলা অর্থহীন।’


এদিকে একই ইস্যুতে কথা বলেছেন আসিফ আকবরও। ফেসবুক পোস্টে তিনি দাবি তোলেন অবিলম্বে বাংলাদেশ কপিরাইট সোসাইটি গড়ে তোলার। তিনি মনে করেন, এছাড়া কোনও সুরাহা হবে না। তার ভাষ্যে, ‘অবিলম্বে গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পীদের সমন্বয়ে কপিরাইট সোসাইটি গঠন করতে হবে। সোসাইটি হতে হবে রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তিমুক্ত। প্রত্যেকটি পেশাদার শো থেকে কপিরাইট সোসাইটির জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ পার্সেন্টেজ কাটতে হবে। যেন গীতিকার-সুরকাররা সেখান থেকে তাদের সৃষ্টির ন্যায্য হিস্যা পায়।’
এভাবে তিনি মোট ১১টি দিকনির্দেশনা দেন সংগীতাঙ্গনের সমৃদ্ধি ও শৃঙ্খলা ফেরানোর লক্ষ্যে।

/এমএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
‘জীবনের সবচেয়ে মুমূর্ষু সময় পার করেছি এই দুইটা দিন’
‘জীবনের সবচেয়ে মুমূর্ষু সময় পার করেছি এই দুইটা দিন’
ইরফান সাজ্জাদ বললেন, আপুটা জোস!
ইরফান সাজ্জাদ বললেন, আপুটা জোস!
আসিফ নজরুল ও ফারুকীকে যে অনুরোধ করলেন জায়েদ খান
আসিফ নজরুল ও ফারুকীকে যে অনুরোধ করলেন জায়েদ খান
কানে জাহ্নবী, সঙ্গে কথিত প্রেমিকও!
কানে জাহ্নবী, সঙ্গে কথিত প্রেমিকও!
বলিউডে কেউ কারও বন্ধু না: নওয়াজউদ্দিন
বলিউডে কেউ কারও বন্ধু না: নওয়াজউদ্দিন