X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রায় কোটি টাকার বিল, দায় নেয় না কেউই!

ওয়ালিউল বিশ্বাস
০৮ জুলাই ২০২১, ১৭:১৫আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২১, ১৪:৫৫

সরকারি বিশেষ অনুদান বা ভর্তুকিতে বেতন পান বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। সম্প্রতিক বছরগুলোতে এমনটাই ঘটেছে। এমনকি করোনা শুরুর সময় থেকে বেশ টানাপোড়েনেই গেছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীদের দিন। 

মাসের পর মাস বেতন বাকি, ঈদের সময়ও অনিশ্চয়তায় দিন পার করতে হয়েছে তাদের। অথচ প্রতিষ্ঠানটির আঙিনায় চলচ্চিত্রের সাত-সাতটি সংগঠনের কার্যালয়। ঘর ভাড়া, বিদ্যুৎ–পানির বিল ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ তাদের কাছে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি পায় প্রায় কোটি টাকা।

কিন্তু পরিশোধের নাম নেই কারও। এমনকি কেন পরিশোধ করা হয় না- জানতে চাইলে বেশ কয়েকজন চলচ্চিত্র নেতা উল্টো হুমকিই দিলেন। বললেন, ‌‘এমন বিল চাওয়াটাই অন্যায়।’

১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরে প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ ১ হাজার ৫০০ টাকাসহ বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, রক্ষণাবেক্ষণ খরচসহ চলচ্চিত্রের সংগঠনগুলোর কাছে ঘর ভাড়া দেয় বিএফডিসি। যা কয়েক দফায় ভাড়ার অঙ্ক বাড়ানো ও কমানো হয়েছে। বর্তমানে প্রতিমাসে তা ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকার ঘর ভাড়া, হাজার টাকার উপরে পানির বিল, আছে বিদ্যুৎ বিলও। কিন্তু অর্থ পরিশোধ করেনি সমিতিগুলো। এদের মধ্যে আছে- বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি, পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতি, চিত্রগ্রাহক সংস্থা, সিডাপ, ফিল্ম এডিটরস গিল্ড ও ব্যবস্থাপক সমিতি।

বিএফডিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা হিমাদ্রি বড়ুয়া বলেন, ‘সমিতিগুলো কোনোভাবেই বিল পরিশোধ করছে না। প্রতি মাসেই তাদের নোটিশ দেওয়া হয়। এখানে বিদ্যুৎ বিল, ঘর ভাড়া ও পানির বিল আছে। এটার পরিমাণ কোটি খানেক কিনা- তা আমি সঠিক বলতে পারব না। আমাদের হিসাব বিভাগ বলতে পারবে।’

বিষয়টি তোলা হয় এফডিসির হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা নিকেশ বড়ুয়ার কাছে। তিনি বললেন, ‘এ বিষয়টি দেখভাল করে প্রশাসন বিভাগ। আমরা শুধু নির্দেশ অনুযায়ী বিলটির নোটিশ পাঠাই। আমরা প্রতি মাসেই তাদের কাছে এটি পাঠাই; কিন্তু উনারা এ বিষয়ে মনযোগী নন। এটার পরিমাণ ৭০ লাখেরও অনেক বেশি।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের বকেয়া বিল ৭৪ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩ টাকা ছিল।

গত প্রায় দু বছরে এর পরিমাণ আরও ৮ লাখ টাকা মতো বেড়েছে। যার মধ্যে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির বিলই হয়েছে ২৬ লাখ টাকা। বামে পরিচালক ও ডানে প্রযোজক সমিতি

সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান বললেন, ‘এটি মূলত আমাদের কার্যালয় নয়; আবদুল জব্বার খান পাঠাগার। এখানে আমরা বসি পাঠাগারের জন্যই। এর জন্য বিল চাওয়াটাই তো অন্যায়। তারা প্রতিমাসে আমাদের নামে বিল পাঠিয়েই যায়।’

বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ আবদুল জব্বার খান। তাঁর সম্মানে এফডিসিতে আবদুল জব্বার খান পাঠাগার নামে একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। 
তবে সেখানে পরিচালকদের বসার আলাদা রুম ও চেম্বার আছে। পাশেই লাগোয়া শিল্পী সমিতির কার্যালয়।

পরিচালক সমিতির প্রধানের এমন দাবির প্রেক্ষিতে হিমাদ্রি বড়ুয়া বললেন, ‘এটা কেমন কথা! তারা নিয়মিত সেখানে বসেন। মেম্বারিং হয়, নির্বাচন করেন। তাহলে সেটাকে পাঠাগার বলে পাশ কাটানো সম্ভব?’

প্রত্যুত্তরও প্রস্তুত সোহানের। তার বক্তব্য, ‘‘পরিচালকরা এখানে আসেন, প্রযোজকদের ‘পটায়ে’ অর্থ বের করেন বলেই এফডিসি চলে। নইলে কিছুই হতো না। এখন যদি আমাদের এ সুবিধা দেওয়া না হয়, আমরা কাজ করব না। তাহলে এফডিসি কীভাবে চলে দেখবো।’’

ঠিক একই সুরে কথা বললেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। তিনি তুলে ধরলেন- কেন এফডিসি আজ লোকসানের মুখে, কেন কর্মচারীরা বেতনও ঠিকমতো পান না।

তার ভাষ্য, ‘এটা আব্দুল জব্বার খান পাঠাগারের অংশ। শিল্পীরা এখানে পেপার পড়েন। পরিচালক-প্রযোজকরা আসনে বলেই এফডিসিতে কাজ চলে। তারা (এফডিসি) হুট করে বিভিন্ন বিল বাড়ায়। লাইট, ক্যামেরা- সবকিছুর বিলই তারা মনমতো বাড়ায়। আমরা যারা কাজ করি তাদের কিছু জানায়ও না। অন্যদিকে, মিলনায়তন, ফ্লোরগুলোরও ভাড়া বাড়িয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে শুনে এলাম জহির রায়হান অডিটোরিয়ামের ভাড়া সাত হাজার টাকা। হুট করে শুনি, এখন তা ২৫ হাজার টাকা। এগুলো করাতে এখন কোনও পার্টি আসে না কাজ করতে। যার ফলে লোকসানে এফডিসি। এখন লোকসানের জন্য যদি সমিতিগুলোকে চেপে ধরেন তারা, আমরাও কিন্তু তাদের চেপে ধরবো। আমরা কাজ না করলে, এফডিসিতে একটা বাতিও জ্বলে না।’

সমিতি ও বিএফডিসির এই দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। বিষয়টি নিয়ে এর আগে প্রকাশ্যে কথা বলেছিলেন নায়করাজের ছেলে নায়ক বাপ্পারাজ। সেখানে সমিতির কার্যালয় থাকাও ‘ঠিক নয়’ বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি।

তবে সকল সুবিধা ব্যবহার করলেও কোনকিছুই পরিশোধ করতে রাজি নয় এই সমিতিগুলো। অন্যদিকে, মাসের পর মাস বাড়তে থাকে বিলের অংক।

/এম/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
ক্যানসারে আক্রান্ত অভিনেতা রুমি, ভর্তি হাসপাতালে
ক্যানসারে আক্রান্ত অভিনেতা রুমি, ভর্তি হাসপাতালে
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীকন্যা ইলহাম!
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীকন্যা ইলহাম!
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)