ভারী হয়ে আছে গলা। থেমে থেমে ভিজে যাচ্ছে চোখ। বারবার দুঃখ প্রকাশ করছেন। ক্ষমাও চাচ্ছেন। ব্রিটিশ তারকা অ্যাডেলকে এভাবে দেখে অভ্যস্ত নয় ভক্তরা। যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে নিজের বহুল প্রতীক্ষিত ধারাবাহিক কনসার্ট কমপক্ষে একবছরের জন্য পিছিয়ে যাওয়ার খবর জানাতে এসে এভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। তার সংগীত দলের অনেক সদস্য করোনা আক্রান্ত হওয়ায় প্রথম অনুষ্ঠান শুরুর মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে সিদ্ধান্তটি জানালেন ৩৩ বছর বয়সী এই গায়িকা।
অ্যাডেল দাবি করেন, টানা ৩০ ঘণ্টা ঘুমাননি তিনি। তবুও জুতসই সমাধান বের করতে পারেননি। কারণ সময় যে ফুরিয়ে গেছে! ভক্তদের যারা ইতোমধ্যে লাস ভেগাসে চলে এসেছেন তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন গ্র্যামিজয়ী এই তারকা, ‘আমি দুঃখিত। জানি এটা শেষ মুহূর্ত। আমি খুব মর্মাহত এবং আমি সত্যিই বিব্রত। যারা অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন তাদের কাছে আমি দুঃখিত।’
ইনস্টাগ্রামে ভক্তদের উদ্দেশে ভিডিও বার্তায় অশ্রুসিক্ত অ্যাডেল বলেন, ‘আমি খুব দুঃখিত। কনসার্টের পুরো প্রস্তুতি এখনও সম্পন্ন হয়নি। আমার সহযাত্রীদের অর্ধেকই করোনায় আক্রান্ত। তাদের বাদ দিয়ে অনুষ্ঠানের কথা ভাবা অসম্ভব। এখন যে অবস্থায় আছি তাতে সংগীত পরিবেশন করা যাবে না। এ কারণে আমি হতাশ হয়ে পড়েছি।’
সিজারস প্যালেস হোটেলের কলোসিয়াম থিয়েটারে অ্যাডেলের ধারাবাহিক ২৪টি কনসার্টের প্রথমটি হওয়ার কথা ছিল শুক্রবার (২১ জানুয়ারি)। আগামী এপ্রিল পর্যন্ত সপ্তাহে দুটি করে অনুষ্ঠানে গাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। গত বছরের নভেম্বরে এই ঘোষণা দেন তিনি। থিয়েটারটিতে রয়েছে ৪ হাজার ৩০০ আসন।
লাস ভেগাসে অ্যাডেলের ধারাবাহিক কনসার্টের টিকিটের মূল্য ধরা হয় ৮৫ থেকে ৬৮৫ মার্কিন ডলার। আশা করা হচ্ছিল, প্রতিটি অনুষ্ঠানের সুবাদে তার ব্যাংকে ঢুকবে প্রায় ৭ লাখ ডলারের বেশি।
গত বছরের অক্টোবরে বাজারে আসে অ্যাডেলের চতুর্থ একক অ্যালবাম ‘থার্টি’। সারাবিশ্বে তুমুল সাড়া ফেলেছে এটি। এমন অভাবনীয় সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে পাঁচ বছর পর লাইভ কনসার্টে ফিরতে যাচ্ছিলেন অ্যাডেল। লাস ভেগাস ছাড়াও আগামী ১ ও ২ জুলাই লন্ডনের হাইড পার্কে সংগীত পরিবেশনের কথা ছিল তার। স্বাভাবিকভাবে সেগুলোও পিছিয়েছে।
অ্যাডেল আশ্বস্ত করেছেন, ‘আমরা সব কনসার্টের নতুন দিনক্ষণ সাজাচ্ছি। আমরা এখন এটাতেই সময় দিচ্ছি। আমি লাস ভেগাসে কনসার্ট করবোই। এটি যেভাবে হওয়ার কথা ছিল সেভাবেই করতে চাই। আমরা অনেক প্রতিকূলতার মুখে পড়েছি। এমন পরিস্থিতি গান-বাজনার জন্য প্রস্তুত নয়।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক ভক্ত অ্যাডেলকে সমর্থন জানিয়ে বলেছে, এটি সঠিক সিদ্ধান্ত। তবে বিমান টিকিট ও হোটেল বুকিংয়ে হাজার হাজার ডলার গচ্চা যাওয়ায় কারও কারও মেজাজ খারাপ। মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। শেষ মুহূর্তে এমন সিদ্ধান্তকে চপেটাঘাত হিসেবে দেখছেন তারা। তাদের মন্তব্য, ‘অ্যাডেল জানতেন একদিনের ব্যবধানে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে না। তাই তার আরও আগে জানানো উচিত ছিল। তখন অন্তত আর্থিক ক্ষতি কিছু কম হতো।’
অ্যাডেল ও তার সহশিল্পীরা সমস্যায় পড়লেও লাস ভেগাসে অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্বাভাবিকভাবেই চলছে।
২০১৭ সালে কণ্ঠনালী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে নির্ধারিত দুটি কনসার্ট বাতিল করতে বাধ্য হন অ্যাডেল।