X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
বিনোদন বিশেষ

রাজশাহীতে সিনেমার ঈদ উৎসব এখন শুধুই স্মৃতি

দুলাল আবদুল্লাহ, রাজশাহী
০২ মে ২০২২, ১৭:০৯আপডেট : ০২ মে ২০২২, ১৭:৪৪

বাঙালির সাংস্কৃতিক উৎসবের বেশিরভাগ জুড়ে আছে সিনেমা হলের নানা স্মৃতি। একসময় ঈদ এলেই সিনেমা হলে নতুন কী চমক থাকছে তা নিয়ে আগ্রহ থাকতো বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের। এখন হাতের নাগালে প্রযুক্তি চলে আসায় সেই আগ্রহ যেমন কমেছে তেমনি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে সিনেমা হলগুলো। রাজশাহী নগরীতে ছয়টি সিনেমা হল চালু ছিল। এখন সবক’টি বিলীন। দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদকে ঘিরে অনেক বন্ধ হল চালু হলেও রাজশাহীতে চালু হচ্ছে না একটিও।

নগরীতে একসময়ের আলোচিত সিনেমা হল বর্ণালী, লিলি, উৎসব, উপহার ও স্মৃতি এখন শুধুই অতীত ঐতিহ্য। নানা প্রতিবন্ধকতা ও সাংস্কৃতিমনা উদ্যোগের অভাবে বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে একটি সিনেমা হলও আর টিকে নেই। সিনেমা না চলার অজুহাতে হারিয়েছে উৎসবের সেই জৌলুস।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১০ পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে নগরীর পাঁচটি সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৮ পর্যন্ত টিকে ছিল ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ‘উপহার’ সিনেমা হল। ২০১৮ সালের ১২ অক্টোবর থেকে সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। 

এর এক বছরের মধ্যে জেলার আরও ছয়টি সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যায়। সেগুলো হলো দুর্গাপুর উপজেলার ‘নার্গিস’, পবা উপজেলার নওহাটায় ‘বাবুল’, তানোর উপজেলায় ‘আনন্দ’, মোহনপুর উপজেলার কেশরহাটের ‘দিগন্ত’, কাটাখালীর ‌‘রাজ তুলোক’ ও বাগমারা উপজেলার ‘শাপলা’ সিনেমা হল।

নগরীর একমাত্র সিনেমা হল ‘উপহার’ বন্ধ করার ঘোষণার পরপরই আন্দোলনে নামেন সাংস্কৃতিমনা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। কিন্তু তা আর আলোর মুখ দেখেনি।

স্থানীয় রিকশাচালক মতিউর রহমান ও মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘পাঁচ বছর আগেও ঈদের দিনে ভাড়া মারার পর রাতের শোতে সিনেমা দেখে বাড়ি ফিরতাম। গত কয়েক বছর ধরে সেই সুযোগ আর হয়নি। ঈদের সময় হলে সিনেমা দেখা যে কত আনন্দের, তা বলে বোঝাতে পারবো না।’

নগরীর বাসার রোড এলাকার শামীম, সান রাজু, বিপ্লব, ইয়াসিন সজলরা জানান, ‘আমরা আগে ঈদের দিন বন্ধুরা মিলে সিনেমা হলে যেতাম। কিন্তু এখন নগরীতে সিনেমা হল না থাকায় বিনোদনের জন্য পদ্মা পাড়ে ঘুরে বেড়াই। একটি সিনেমা হলও চালু হলো না এবারও।’

নাট্যজন কামারুল্লাহ সরকার বলেন, ‘দিন দিন বিনোদনের জায়গাগুলো ছোট হয়ে আসছে। এখন অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিনোদন খোঁজে। কিন্তু হলে গিয়ে হুড়োহুড়ি করে সিনেমা দেখার মজাই আলাদা ছিল। সেসব এখন শুধু স্মৃতি।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি ড. সাজ্জাদ বকুল বলেন, ‘বিভাগীয় শহরে একটি সিনেমা হলও থাকবে না, এটা ভাবাই যায় না। ব্যক্তিমালিকানা হলেও হল ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন দিক থেকে পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজশাহীর মতো এত বড় একটা বিভাগীয় শহরে একটাও সিনেমা হল নেই, দ্রুত বর্ধনশীল এই শহরে কোনও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নেই। যেখানে মানুষ নানা উৎসবে, দিবসে বা অন্য সময়ে একত্রিত হবে, নিজেদের ভাবের আদান-প্রদান করবে। এটা খুবই দুঃখজনক।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিনোদন কেন্দ্র মানে তো শুধু বিনোদনের জায়গা নয়। এর মাধ্যমে মানুষে-মানুষে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি বাড়ে। আমার মনে পড়ে, ঈদে রাজশাহীতে নতুন সিনেমা মুক্তি পেলে মানুষ দলবেঁধে হলে যেতেন সিনেমা দেখতে। পরিবার-পরিজন নিয়ে সবাই সিনেমা দেখতেন। এখন রাজশাহীতে একটাও সিনেমা হল নেই। আমার প্রত্যাশা, মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহীকে যেভাবে ঢেলে সাজাচ্ছেন তার সঙ্গে এখানে সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হল; অথবা একটা মাল্টিপ্লেক্স চালু করবেন। অলোকার মোড়ে রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের যে ভবন হয়েছে, সেটা নির্মাণের সময় সেখানে একটা সিনেমা প্রদর্শনের উপযোগী স্থাপনা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। সংশ্লিষ্টরা সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন বলে প্রত্যাশা রাখি।’

/এএম/এমএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
পুরনো লাইনআপে ফিরছে ‘ব্ল্যাক’!
পুরনো লাইনআপে ফিরছে ‘ব্ল্যাক’!
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’