তখনও ঘণ্টাদুয়েক বাকি। কিন্তু মূল প্রতিযোগিতা শাখার বিচারকদের সংবাদ সম্মেলন, তাই আসন ফাঁকা না পাওয়ার দুশ্চিন্তা ছিলই। সেজন্য এত আগে এসে দাঁড়িয়ে আছি। কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রাণকেন্দ্র পালে দে ফেস্টিভাল ভবনের তৃতীয় তলায় সবার সামনে আমি। সময় গড়ানোর সঙ্গে ধীরে ধীরে পেছনে সংবাদকর্মীদের সংখ্যা বাড়তে থাকলো। আমার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই! দীপিকা পাড়ুকোনকে প্রশ্ন করার সুযোগ লুফে নিতে হবে।
মঙ্গলবার (১৭ মে) ঘণ্টা দেড়েক দাঁড়িয়ে থাকার পর দুপুর ২টায় (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা) সংবাদ সম্মেলন কক্ষে ঢোকার ফটক খুললো। দীপিকা যেখানে বসবেন, সেই বরাবর আসন দখল করলাম। চেয়ারে ব্যাগ রেখেই প্রশ্নোত্তরের সমন্বয়ককে শুভেচ্ছা জানাতে এগিয়ে গেলাম। সাত বছর ধরে আমাকে দেখছেন তিনি। তাই সামনে যেতেই বেশ আনন্দের সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন। দীপিকাকে প্রশ্ন করার সুযোগ চাইতে দেরি করলাম না। তিনিও মেনে নিলেন।
দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে সংবাদ সম্মেলন কক্ষে হাজির দীপিকা পাড়ুকোন। সিল্কের প্রিন্ট শার্ট। সবুজ ঢিলেঢালা প্যান্ট। কোমরে বাদামি বেল্ট। গলায় কুন্দন-মুক্তা ও পাথরের নেকলেস। মাথায় সিল্কের ব্যান্ড। তার রূপ থেকে যেন চোখ ফেরানো দায়!
সংবাদকর্মীদের মধ্যে তৃতীয় হিসেবে প্রশ্ন করার সুযোগ এলো। দীপিকাকে নাম-পরিচয় ও বাংলাদেশের কথা জানালাম। তার প্রতিবেশী দেশ কথাটাও উল্লেখ করলাম। তার মুখে তখন মিষ্টি হাসি।
প্রশ্ন ছিল, আপনার সবশেষ দুই ছবি ‘গেহরাইয়া’ এবং ‘এইটি থ্রি’ ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দেখেছি। এরমধ্যে একটির প্রযোজক তিনি। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ভবিষ্যতের চলচ্চিত্রকে শাসন করবে কিনা, তার মন্তব্য কী?
দীপিকা মোটামুটি যে উত্তর দিলেন তা এরকম, ‘আমার মনে হয় না, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম কিংবা সিনেমা হল একটি আরেকটিকে ক্ষতি করতে পারে। বরং এতে করে অভিনয়শিল্পী, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, প্রযোজকসহ সবার জন্য সুযোগ বেড়েছে।’
মূল প্রতিযোগিতা শাখার বিচারকদের একজন হিসেবে মঙ্গলবার (১৭ মে) দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন দীপিকা। সংবাদ সম্মেলনে আসার আগে পালে দে ফেস্টিভাল ভবনে ফটোকলে অংশ নেন দীপিকাসহ অন্য বিচারকরা। এরপর সন্ধ্যায় লালগালিচায় কালো ও সোনালি রঙা সিকোয়েন্সের শাড়িতে দ্যুতি ছড়িয়েছেন দীপিকা। মাথায় ছিল পট্টি, কানে কুন্দনের দুল এবং হাতভর্তি আংটি। আজ সন্ধ্যায় গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে অন্য বিচারকদের মতো তাকেও পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
গত কয়েক বছর লরিয়াল প্যারিসের দূত হিসেবে কানের লালগালিচায় জৌলুস ছড়িয়েছেন দীপিকা। এবারই প্রথম উৎসবটির বিচারক হলেন ৩৬ বছর বয়সী এই তারকা। সোমবার (১৬ মে) দক্ষিণ ফ্রান্সের সাগরপাড়ের শহরে পা রাখেন তিনি।
১৫ বছরের ক্যারিয়ারে বলিউডের গণ্ডি পেরিয়ে হলিউডেও পা রেখেছেন দীপিকা, কিন্তু দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগসহ এমন বৈশ্বিক স্বীকৃতি পেলেন এবারই প্রথম।
১৯৮২ সালে প্রয়াত পরিচালক মৃণাল সেন প্রথমবার কানে মূল প্রতিযোগিতা শাখার বিচারক হন। ভারতীয় অভিনেত্রীদের মধ্যে ২০০৩ সালে প্রথমবার কানে বিচারক হয়েছিলেন ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন। এছাড়া পরিচালক মীরা নায়ার (১৯৯০), কথাসাহিত্যিক অরুন্ধতী রয় (২০০০), শর্মিলা ঠাকুর (২০০৯), পরিচালক শেখর কাপুর (২০১০) এবং বিদ্যা বালান (২০১৩) কান উৎসবের বিচারক হিসেবে কাজ করেছেন। অভিনেতা-পরিচালক নন্দিতা দাস ভারতের একমাত্র ব্যক্তি যিনি দু’বার কানে বিচারক হয়েছেন। ২০০৫ সালে মূল প্রতিযোগিতা শাখায় এবং ২০১৩ সালে সিনেফঁদাসো ও শর্টফিল্ম শাখার বিচারক ছিলেন তিনি।
৭৫তম আসরে মূল প্রতিযোগিতা শাখায় রয়েছে ২১টি সিনেমা। এতে বিচারকদের প্রধান হিসেবে আছেন ভাসোঁ লাদোঁ। ৬২ বছর বয়সী এই ফরাসি অভিনেতা গত বছর কানে স্বর্ণপাম জয়ী ‘তিতান’ ছবিতে অভিনয় করেছেন। ২০১৫ সালে কানে ‘দ্য মেজার অব অ্যা ম্যান’ ছবির সুবাদে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জেতেন তিনি।
বিচারকদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও চার জন নারী। তারাই এবারের স্বর্ণপামজয়ী ছবিসহ বিভিন্ন পুরস্কার জয়ীদের নির্বাচন করবেন। ভাসোঁ লাদোঁর নেতৃত্বে দীপিকা ছাড়াও বিচারক প্যানেলে আছেন যুক্তরাজ্যের অভিনেত্রী ও পরিচালক রেবেকা হল, সুইডেনের অভিনেত্রী নুমি রাপাস, ইতালির অভিনেত্রী ও পরিচালক জাজমিন ত্রিঙ্কা, ইরানের আসগর ফারহাদি, নরওয়ের ইওয়াকিম ত্রিয়ের, যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালক জেফ নিকোলস এবং ফ্রান্সের পরিচালক লাজ লি।