পথচলায় কিছুটা পরিবর্তন এনেছেন সামিরা খান মাহি। শুরুটা যেমন ছিল, এখন আর তা নয়; বরং নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কারের ভাবনায় মত্ত হয়েছেন তরুণ এই অভিনেত্রী। যেটার ছাপ স্পষ্ট হয়ে ধরা দিয়েছে তার সাম্প্রতিক ওড়াউড়ি আর নিকট অতীতে প্রচার হওয়া বিভিন্ন নাটকে।
প্রায় এক মাস আনন্দের দেশ থাইল্যান্ডে কাটিয়ে এসেছেন মাহি। না, অবকাশযাপন নয়, কাজের সূত্রেই তার থাইযাত্রা। সম্প্রতি ঢাকায় নেমেই অবকাশের আশায় উড়াল দিলেন আরেক পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারে! বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপে দুটি সফর, কিছু গুঞ্জন আর নতুন দিনের ভাবনার কথা জানিয়েছেন সময়ের আলোচিত এই টিভি নায়িকা।
আলাপের শুরুতে প্রাসঙ্গিকভাবেই থাইল্যান্ডের খবর দিলেন মাহি। বললেন, ‘পাঁচটি একক নাটকে কাজ করেছি। এরমধ্যে একটিতে অতিথি চরিত্রে; তাই ওটা কাউন্ট করছি না। সেক্ষেত্রে চারটি। আর একটি ধারাবাহিক নাটকে কাজ করলাম। মোট ২২ দিন শুটিং করেছি।’
জানা গেছে, ধারাবাহিক নাটকটির নাম ‘এমন যদি হতো’। এটি নির্মাণ করছেন আবু হায়াত মাহমুদ ও সাইদুর রহমান রাসেল। একক নাটকগুলোর নাম তৎক্ষণাৎ মনে করতে পারলেন না মাহি, তবে এটুকু জানালেন, চারটি নাটক পরিচালনা করেছেন মাবরুর রশীদ বান্নাহ। যেগুলোর দুটিতে মাহির সহশিল্পী মিশু সাব্বির, একটিতে তৌসিফ মাহবুব এবং একটিতে ফারহান আহমেদ জোভান। আরেকটি নাটকের নির্মাতা মাহমুদুর রহমান হিমি; এতে মাহির বিপরীতে আছেন জোভান।
মাহির তথ্যমতে, এটিই তার প্রথম বিদেশে শুটিং। তাই উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি কষ্টের মাত্রাও ছিল বেশি। অভিনেত্রীর ভাষ্য, ‘বিদেশে আমি আগেও ঘুরতে গিয়েছি। তবে শুটিং এটাই প্রথম। সে হিসেবে আমার জন্য অনেকটা কঠিন ছিল। আমাদের গাড়ির ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু তারপরও যেহেতু বিদেশ, লোকেশন বেছে বেছে কাজ করতে হয়েছে; সেজন্য আমাদের অনেকটা পথ হাঁটতে হয়েছে। নিজের ব্যাগ, সরঞ্জাম বহন করতে হয়েছে। আমি আমার অ্যাপল ওয়াচে দেখেছি, প্রতিদিন আমরা ১৬ থেকে ১৮ হাজার স্টেপ হেঁটেছি; যেটা প্রায় সাড়ে নয়-দশ কিলোমিটারের মতো। সে হিসেবে অনেক কষ্ট হয়েছে, তবে কাজগুলো খুব ভালো হয়েছে, তাই কষ্টটা সার্থক।’
বিশ্বের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র থাইল্যান্ড, সেখানে গিয়ে শুধু কাজেই ডুবে ছিলেন মাহি? না, শুটিং শেষে আরও ছয় দিন ছিলেন সেখানে। কিন্তু ঘোরাফেরা হয়নি সেভাবে। মাহি বললেন, ‘আসলে সেভাবে ঘোরা হয়নি। কারণ, চারদিন শুধু শপিং করেছি, আর দুই দিন ডাক্তারের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল। এভাবেই দিনগুলো চলে গেছে। তাই আলাদাভাবে কোথাও ঘুরতে পারিনি।’
নিজেকে পরিবর্তন করে ভিন্ন ধাঁচের কাজে মগ্ন হওয়ার প্রসঙ্গ এলো আলাপের একপর্যায়ে। এ বিষয়ে মাহির জবাব, ‘প্রথম দিকে যখন আমি কাজ করছিলাম, তখন সব প্রায় একই ধরনের চরিত্র ছিল। আমি জানি না অন্যদের ক্ষেত্রে কেমন হয়; তবে আমি কেন জানি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। কাজে মনোযোগ দিতে পারছিলাম না। মনে হতো প্রতিদিন একই জিনিস করছি। তখন আমার মনে ভাবনা আসে, যদি ভিন্ন ধাঁচের চরিত্রে কাজ করি তাহলে কেমন হয়? তখন নিশ্চয়ই এরকম একঘেয়েমি আসবে না। এরপরই ব্যতিক্রম চরিত্রগুলোতে কাজ শুরু করলাম।’
ব্যতিক্রম রূপ-চরিত্রে নিজেকে ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে জটিলতাও কম নয়। মাহির মতে, অনেক সময় কাজের আগে পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায় না। ফলে চরিত্রে ঢোকা কঠিন হয়ে যায়। তাই নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অভিনেত্রী। এখন অনেক বেশি এক্সপেরিমেন্ট করতে চান না। চেষ্টাটা জারি থাকবে বটে, তবে সময় নিয়ে; সঙ্গে কিছু হালকা কাজেরও মিশ্রণ থাকবে।
এদিকে সামিরা খান মাহিকে নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ের মোস্ট বার্নিং কোয়েশ্চেন হলো তিনি কি সিনেমায় আসছেন? প্রশ্ন শুনে একগাল হেসে দিলেন অভিনেত্রী। এরপর বললেন, ‘সিনেমা নিয়ে অনেক নিউজ হয়েছে, এটা সত্য। কিন্তু চূড়ান্ত কিছুই আসলে হয়নি এখনও। তবে হ্যাঁ, কয়েকজনের সঙ্গে কথাও হচ্ছে। মজার ব্যাপার হলো, নিউজ হওয়ার পরেই অনেকে আমাকে সিনেমার জন্য নক করেছেন। কিন্তু এখনও কিছু ফাইনাল হয়নি। গল্প-চিত্রনাট্য শুনবো, এরপর যদি মনে হয় চরিত্রটি আমার করার মতো, তাহলে করবো।’
মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) ঢালিউড তারকা শাকিব খান ঘোষণা দিয়েছেন, হালের আলোচিত নির্মাতা রায়হান রাফীর পরিচালনায় নতুন সিনেমা করতে যাচ্ছেন। এই সিনেমায় শাকিবের নায়িকা কে হবেন, তা নিয়ে চলছে আলোচনা, গুঞ্জন। কয়েকজনের নাম উঠে আসছে চর্চায়। এরমধ্যে অন্যতম তানজিন তিশা ও সামিরা খান মাহি। তিশা ইতোমধ্যে বিষয়টিকে স্পষ্ট ভাষায় ‘গুজব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। বাকি রইলেন মাহি। তার কী বক্তব্য?
এই প্রশ্নের জবাবেও হাসলেন তিনি। বললেন, ‘না না, আমার সঙ্গে এটার ব্যাপারে কোনও কথা হয়নি। বরং অন্য একজন নির্মাতা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, সম্প্রতি তিনি সিনেমা বানিয়েছেন। তবে তার নাম বলতে চাচ্ছি না। এখন আমি কক্সবাজারে আছি, ঢাকায় ফিরে তার সঙ্গে বসার কথা রয়েছে। তবে এক্ষেত্রেও গল্পের ওপর সবকিছু নির্ভর করছে। আমি গল্প এবং আমার চরিত্রের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রায়োরিটি দিতে চাই।’
সিনেমায় আসা নিয়ে মাহির ভাবনা পাকা; তাহলে কোন ধরনের প্রজেক্টে আগ্রহী তিনি? তার উত্তর, ‘একটু ভিন্ন ধাঁচের, অফট্র্যাকের সিনেমা হলে ভালো। প্রথম দিক থেকে আমি এ ধরনের কাজই করতে চেয়েছি। কিন্তু গল্প যদি আমাকে ছুঁতে পারে, তাহলে কমার্শিয়াল সিনেমাও করবো।’
এদিকে দেশে ফেরার পর এখন কক্সবাজারে অবকাশযাপন করছেন মাহি। শিগগির ঢাকায় ফিরে যোগ দেবেন নতুন কাজের শুটিংয়ে। আগামী নভেম্বর পর্যন্ত তার শিডিউল পুরোপুরি লকড। কয়েকটি বড় আয়োজনের নাটকে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন। সেগুলোর নাম-নির্মাতা-সহশিল্পী ক্রমশ প্রকাশ্য।