X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

হ‌ুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে ডা. এজাজের পরামর্শ

কামরুল ইসলাম
১৩ নভেম্বর ২০২২, ০০:০৬আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২২, ১২:৫১

প্রথম যখন তাকে ফোন করা হলো, কল রিসিভ করে জানালেন, চেম্বারে আছেন, সামনে রোগী বসা। কিছুক্ষণ পরই কলব্যাক করলেন। আগ্রহ নিয়ে কথা বলতে চাইলেন; কারণ প্রসঙ্গ হ‌ুমায়ূন আহমেদ। বললেন, ‘আমি মাসে তিন সপ্তাহ চেম্বার করি, আর এক সপ্তাহ শুটিং। এখনও (১২ নভেম্বর সন্ধ্যা) রোগী দেখছিলাম। শেষ রোগীকে বিদায় করে দরজাটা চাপিয়ে এখন কথা বলছি, যেহেতু হ‌ুমায়ূন স্যারের প্রসঙ্গ টেনেছেন। স্যারের প্রসঙ্গে কেউ জানতে চাইবেন আর আমি কথা বলবো না, এটা তো আমার জীবনের পাপ মনে করি।’

কথাগুলো বললেন অভিনেতা ডা. এজাজুল ইসলাম। হ‌ুমায়ূন আহমেদকে যারা মনেপ্রাণে ধারণ করেন, যে’কজন মানুষ কথার জাদুকরের খুব কাছের ছিলেন, তিনি তাদেরই একজন। চিকিৎসা বিদ্যায় পড়াশোনা করা এই গুণী মানুষটি অভিনয় জগতে এসেছিলেন হ‌ুমায়ূন আহমেদের হাত ধরেই। তাই হিমু-স্রষ্টার জন্মদিন (১৩ নভেম্বর) উপলক্ষে তার কাছেই জানতে চাওয়া হলো অতীতের কিছু কথা।
 
রবিবার (১৩ নভেম্বর) হ‌ুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। তিনি বেঁচে থাকাকালীন এই দিনটি কীভাবে উদযাপন করতেন? সে প্রসঙ্গে ডা. এজাজ বলেন, ‘জন্মদিন বেশ আয়োজন করেই পালন করতেন তিনি। আয়োজন বলতে আড্ডা। স্যারের তো অনেক বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী। স্যার নিজেও ভীষণ আড্ডাপ্রিয় মানুষ ছিলেন। এবং যাদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, তাদেরকে একদম মোহিত করে রাখতেন। আমি যেটুকু দেখেছি, স্যার সারাদিন সবার সঙ্গে গল্প করতেন, খাওয়াদাওয়া করতেন। অন্য কোনও আয়োজন কিন্তু না।’

ডা. এজাজ জানালেন, তিনি শুভেচ্ছা জানাতে যেতেন রাতে। কারণ চেম্বার শেষ করতে করতে রাত হয়ে যেত। কখনও ফুল নিয়ে যেতেন, কখনও আবার ফুলের দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে খালি হাতেই নির্মাতার বাড়িতে হাজির হতেন। সে সময়ের স্মৃতি হাতড়ে এজাজ বলেন, ‘আমার সবসময়ের রুটিন ছিলো, জন্মদিনে স্যারের সঙ্গে দেখা করা এবং তার পা ছুঁয়ে দোয়া নেওয়া। স্যার যতদিন বেঁচে ছিলেন, এই কাজটা আমি কখনও মিস করিনি।’

হ‌ুমায়ূন আহমেদ নেই এক যুগ। তার সঙ্গে মিশে থাকা ব্যক্তিগত স্মৃতিগুলো স্বাভাবিকভাবেই মনে পড়ে ডা. এজাজের। তবে কাজের ক্ষেত্রে তার অভাব কেমন অনুভব হয়? এমন প্রশ্নের জবাবে গুণী এ অভিনেতার ভাষ্য, ‘অতো সুন্দর সংলাপ আর পাই না। সেই সুন্দর সংলাপগুলো মিস করি। অনেক সুন্দর অভিনয় করার সুযোগ উনি করে দিতেন, সেই সুযোগ এখন আর কেউ করে দেয় না। আরেকটা বিষয় হলো, কাজের সময় উনি সবসময় সিনসিয়ার/আন্তরিক ছিলেন। কোনোরকম ফাঁকিবাজি দেখিনি কখনও। তার সঙ্গে সব কাজেই এটা উপলব্ধি করেছি। তাই সুন্দর সংলাপ আর অভিনয়ের পাশাপাশি একজন সর্বোচ্চ সিনসিয়ার মানুষকে মিস করি।’

নতুন প্রজন্মের জন্য হ‌ুমায়ূন আহমেদের কাজের প্রতি মনোযোগ ও আন্তরিকতা দিকটি পরামর্শ হিসেবে দিতে চান ডা. এজাজ। তার মতে, ‘যদি লেখক হন, তাহলে স্যারের মতো মনোযোগ দিয়ে লিখবেন। নির্মাতা হলে স্যারের মতো মনোযোগী নির্মাতা হবেন। যদি অভিনেতা হন, স্যার যেভাবে মনোযোগ দিয়ে অভিনয় করতে বলতেন, সেভাবে করবেন। আর যদি প্রযোজক হন, তাহলে কত টাকা লাভ-লোকসান হলো সেটা হিসাব না করে স্যারের মতো ভালো কাজ করার প্রতি মনোযোগী হবেন। যেমন নির্মাতা-প্রযোজকের মাথায় যখন এটা থাকে যে, একদিনের মধ্যে পাঁচটা সিকোয়েন্স নামাতেই (সম্পন্ন করা) হবে; তখন আর কাজের মান তার মাথায় থাকে না। তাদের টার্গেট থাকে চারটি পর্ব নামানোর, কিন্তু সুন্দর দৃশ্য নামানোর টার্গেট থাকে না। এজন্য সবার প্রতি এটাই পরামর্শ, যেন ভালো কাজের লক্ষ্যে থাকেন।’

না থেমে এজাজ বলে গেলেন, ‘টাকার তো প্রয়োজন আছে। তবে টাকাটা হবে গৌণ। মুখ্য হবে কাজের মান। কিছু কম-বেশি টাকার হিসাব না করে কাজটা ভালো করা উচিত। সবাই শুধু টাকার ঘাড়ে দোষ দিয়ে দেয় যে, টাকা পেলেই সবকিছু হতো। কিন্তু অনেকে টাকা পেলেও ভালো কাজ করতে পারে না।’

বলে রাখা প্রয়োজন, ১৯৯২ সালে নিজের শিক্ষকের সুবাদে হ‌ুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে পরিচয় হয় ডা. এজাজের। তিনি গাজীপুরে থাকতেন জানতে পেরে হ‌ুমায়ূন আহমেদ তাকে শুটিংয়ে আসতে এবং মাঝেমধ্যে সহযোগিতা করার কথা বলেন। এভাবেই কথার জাদুকরের ক্যামেরার সামনে আসেন নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এজাজ।
 
হ‌ুমায়ূন আহমেদের পরিচালনায় বহু নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন ডা. এজাজ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সিনেমা হলো- ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’ ইত্যাদি। নাটকের মধ্যে ‘তারা তিনজন’ সিরিজ, ‘চন্দ্র কারিগর’, ‘ওয়াংপি’, ‘পুষ্প কথা’, ‘চৈত্র দিনের গান’, ‘চার দুকোনে চার’, ‘গৃহসুখ প্রাইভেট লিমিটেড’ ইত্যাদি।
 
উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোণায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন হ‌ুমায়ূন আহমেদ। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, গল্পকার, চিত্রনাট্যকার ও নির্মাতা ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বাংলা সাহিত্যিক তিনি। ১৯৭২ সালে ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তিনি লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর অসংখ্য গ্রন্থে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।
 
বাংলা চলচ্চিত্র ও নাটকের দুনিয়ায় অসামান্য জায়গা দখল করে আছেন হ‌ুমায়ূন আহমেদ। ১৯৯৪ সালে ‘আগুনের পরশমণি’ সিনেমার মধ্য দিয়ে নির্মাতা হিসেবে অভিষেক হয় তার। এরপর আরও সাতটি সিনেমা পরিচালনা করেছিলেন তিনি। ২০১২ সালে তার সর্বশেষ সিনেমা ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ মুক্তি পায়। একই বছরের ১৯ জুলাই মারা যান এই নন্দিত ব্যক্তিত্ব।

/এমএম/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: কড়া নিরাপত্তায় চলছে ভোটগ্রহণ
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: কড়া নিরাপত্তায় চলছে ভোটগ্রহণ
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
১৬ বছর পর জেনস সুমনের ফেরা (ভিডিও)
১৬ বছর পর জেনস সুমনের ফেরা (ভিডিও)