টানা এক বছর পর ২ ফেব্রুয়ারি থেকে আবার প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হতে যাচ্ছে ২০১৬ সালের মেগা হিট সিনেমা ‘আয়নাবাজি’। আজ (১ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাংলা ট্রিবিউনকে এমনটাই জানালেন নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী।
যদিও বিস্ময়ের বিষয় এরকম একটি মেগা হিট সিনেমা মাঝের এক বছর সারা দেশের কোথাও না চলার কথা শুনে। কেন এমন হলো? এই প্রশ্নের জবাব নেওয়ার আগে জেনে নেওয়া যাক নতুন করে কোথায় কোথায় দেখা যাবে ছবিটি।
অমিতাভ জানান, লম্বা বিরতির পর কাল (২ ফেব্রুয়ারি) থেকে ঢাকার দুটি সিনেপ্লেক্সে ছবিটি আবার প্রদর্শিত হচ্ছে। এরমধ্যে প্রথম সপ্তাহে স্টার সিনেপ্লেক্সে চলবে দৈনিক দুটি করে আর শ্যামলী সিনেমাতে ৪টি করে শো। দর্শক চাহিদার কথা ভেবে এই শোয়ের সংখ্যা কমতে-বাড়তে পারে।
এবার মূল প্রশ্নের জবাবে অমিতাভ রেজা বলেন, ‘‘দেখুন এই বিষয়ে হল মালিকরা ভালো বলতে পারবেন। আমি শুধু এটুকু বলবো, ‘আয়নাবাজি’ গেল এক বছরে দেশের কোনও হল মালিকই চালানোর আগ্রহ দেখায়নি! অবিশ্বাস্য হলেও এটাই আমাদের ফিল্ম পাড়ার বড় বাস্তবতা।’’
অমিতাভের কণ্ঠে ক্ষোভ নাকি অভিমান, স্পষ্ট নয়।
২০১৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায় ‘আয়নাবাজি’। এরপর ২০১৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের প্রায় প্রতিটি প্রেক্ষাগৃহে হাউজফুল চলে এই ছবিটি। এরপর গেল বছর অক্টোবরে মাত্র একদিনের জন্য শ্যামলী সিনেপ্লেক্সে ছবিটি তাদের পর্দায় তোলে।
সুপারহিট ‘আয়নাবাজি’ বিষয়ে অমিতাভ এরপর যেটুকু ঝটপট শোনালেন তাতে বিস্ময়ে ভ্রু কুঁচকাবেন যে কেউ!
অমিতাভ রেজার বিস্ময়কর তথ্য, ‘‘সারাদেশের সিনেমা হল থেকে ‘আয়নাবাজি’র প্রযোজক প্রতিষ্ঠান এখনও প্রায় ৭০ লাখ টাকা পাওনা আছে! এই ছবি বানানোর সময়ে প্রচুর লোকসান করেছি বিজ্ঞাপন না বানিয়ে, টাকার অংকটা আর নাইবা বললাম। যে ক্ষতি এখন সাবান আর তেলের বিজ্ঞাপন করে তোলার চেষ্টা করছি। এটাই হচ্ছে আমাদের দেশের সিনেমা শিল্পের বড় বাস্তবতা। যা বেশিরভাগ মানুষই জানেন না অথবা অনুধাবন করতে চান না। আসলে যার যায়, একমাত্র সেই টের পায়।’’
অমিতাভের তথ্যে স্পষ্ট, ‘আয়নাবাজি’ দেশের হল মালিকরা নতুন করে না চালানোর কারণ পাওনা টাকা ফেরত দিতে হবে বলে! যদি তাই হয় তবে অন্য সিনেমাগুলো চলছে কেমন করে? এমন প্রশ্নের জবাবেও দ্ব্যর্থহীন অমিতাভ। তার ভাষায়, ‘এটা শুধু সিনেমায় নয়, মাছের ব্যবসাতেও তাই! আমাদের সঙ্গে হল মালিকরা এই কাজ করার একটাই কারণ, এখানে আমরা নতুন এবং আমাদের সঙ্গে তাদের নিয়মিত কোনও ব্যবসা নেই। সাধারণ সূত্র। এক্ষেত্রে আমি যতদূর জানি স্টার সিনেপ্লেক্স, বলাকা আর শ্যামলীর লেনদেন ঠিকঠাক। বাদবাকিদের অবস্থা তো বললামই।’
তাহলে ‘রিকসা গার্ল’ কেমন আছে? ‘আয়নাবাজি’র পর অনেক সময় তো গেল। এমন অভিমতের বিপরীতে অমিতাভের কণ্ঠে সাদামাটা জবাব, বিজ্ঞাপন তরঙ্গে ব্যস্ত আছেন তিনি। অর্থটা এমন দাঁড়ায়, বিজ্ঞাপন না করলে তিনি খাবেন কী!
অবশ্য বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি গেল এক বছরে ‘ঢাকা মেট্রো গ-৯১০৬’ শিরোনামে একটি বড় বাজেটের সিরিজের শুটিংও করেছেন তিনি। তবে কি ‘আয়নাবাজি’র অমিতাভ রেজাও এগুচ্ছেন ‘মনপুরা’র গিয়াস উদ্দীন সেলিমের পথেই? অমিতাভ বলেন, ‘‘সত্যি সত্যি গেল একটা বছর আমি আবার সাবান-তেলের বিজ্ঞাপন নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। ‘আয়নাবাজি’ করে আমি যে অর্থনৈতিক ধ্বংসের মুখে পড়েছি সেটা থেকে উদ্ধার হওয়ার চেষ্টা করছি। কারণ, এভাবে তো ছবি বানানো সম্ভব না। আমি তো সিনেমাই বানাতে চাই, সাবান আর তেল ঘুরানোর কী দরকার আমার? অথচ এমন একটি সাকসেস দেওয়ার পরে হাত দিয়ে দেখি পকেট ফুটো!’’
‘রিকসা গার্ল’ এর কি হবে তবে? এবার আশ্বস্ত করলেন অমিতাভ। বললেন, ‘আবার বিজ্ঞাপন করছি। একটু একটু করে ফের সঞ্চয় করছি। কিছু টাকা জমলে নেমে পড়বো কোনও এক সকালে। সিনেমা বানাবো- এই স্বপ্ন নিয়েই তো বেঁচে থাকা। হোক শত প্রবঞ্চনা।’
কনটেন্ট ম্যাটার্সের প্রযোজনায় ‘আয়নাবাজি’ অমিতাভ রেজা চৌধুরীর পরিচালনায় প্রথম ছবি। যার মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী। পরিচালক ছাড়াও এর মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়েছে নাবিলা ও পার্থ বড়ুয়ার।
ছবিটির চিত্রনাট্য লিখেছেন অনম বিশ্বাস ও গাউসুল আলম শাওন। এতে আরও অভিনয় করছেন লুৎফর রহমান জর্জ, হীরা চৌধুরী, শওকত ওসমান, বৃন্দাবন দাস, গাউসুল আলম, ইফফাত তৃষা প্রমুখ।