X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

বর্ষপূর্তি বিশেষ: এই পরিস্থিতির দায় শিল্পী-সাংবাদিক দুই পক্ষেরই

হাবিব ওয়াহিদ, সংগীতশিল্পী
১৩ মে ২০১৯, ১০:১৮আপডেট : ১৩ মে ২০১৯, ১৪:৫৭

সাংবাদিকের মূল কাজ শিল্পীদের রোজকার প্রাসঙ্গিক খবরাখবর জনসম্মুখে তুলে ধরা। শুধু কর্মের প্রচারণাই নয়, প্রয়োজন পড়ে শিল্পকর্মের গঠনমূলক সমালোচনারও। এ ক্ষেত্রে শিল্পীদের ভূমিকা বেশ সীমিত; সহযোগিতা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। বিশ্ব বিনোদন মিডিয়া ঠিক এই ভাবধারাতেই চলছে- তা হলফ করে বলা যাবে না। তবে অনেকাংশে এই ধারাটি এখনও বলবৎ রয়েছে- বাংলাদেশের মিডিয়ায়। এ নিয়ে স্বস্তি রয়েছে দুই শিবিরেই। এর মাঝেও শিল্পী আর সাংবাদিক প্রতিপক্ষের ভূমিকায় দাঁড়ান। শিল্পীদের প্রতি সাংবাদিকদের এন্তার অভিযোগ, মাঝে মাঝে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে সংবাদমাধ্যমেও। শিল্পীরাও আজকাল আর মুখে কুলুপ এঁটে বসে নেই। যার কিছুটা ভেসে ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়, বাকিটুকু শিল্পীমনে জমে থাকে স্বস্তি অথবা বেদনার বুদবুদ হয়ে। মিডিয়া নিয়ে শিল্পীমনে জমে থাকা এমনই কিছু অপ্রকাশিত ‘বুদবুদ’ তুলে আনার চেষ্টা ছিল বাংলা ট্রিবিউন-এর পঞ্চম বর্ষপূর্তির এই বিশেষ আয়োজনে।

হাবিব ওয়াহিদ, ছবি: সংগৃহীত ক্যারিয়ারের শুরু থেকে আমি যেটা অনুভব করি, প্রতিটা সেক্টরে ভালো আর খারাপ মিলেমিশে আছে। যেমন, আমাদের এখানে প্রফেশনাল মেন্টালিটির অনেক সাংবাদিক আছেন, শিল্পীও আছেন। যেমন, অনেক সাংবাদিক আছেন এরকম, যারা মনে করেন- ‘আমি একজন মস্ত বড় সাংবাদিক। আমার হাতেই একজন শিল্পীকে ওঠানো আর নামানোর ক্ষমতা আছে!’
এই বিষয়টি আসলে কতটুকু লজিক্যাল?
সাংবাদিকতা এবং শিল্পী দুটোই রেসপেকটেবল সাবজেক্ট। আবার দুই পক্ষই মূলত কাজ করছে সাধারণ মানুষের জন্য। শিল্পী গান করছেন মানুষের মনের খোরাক জোগানোর জন্য। আবার সাংবাদিক সেই খবরটি প্রকাশ করে শিল্পীদের কাজের বিষয়টি দ্রুত পৌঁছে দিচ্ছেন সবার কাছে। দিন শেষে শিল্পী আর সাংবাদিক কিন্তু একে অপরের পরিপূরক- দুজনেই নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন মানুষের মনের খোরাক যোগাবার জন্য।
কিন্তু আমি দেখেছি অনেক সাংবাদিক এমনকি শিল্পীরাও বিষয়গুলোকে এভাবে ভাবেন না। আগেই বলেছি, কিছু সাংবাদিক আছেন যারা নিজেদের ক্ষমতাবান বলে মনে করেন। এর ফলে তারা ভাবেন, আমাকে যে শিল্পী খুশি রাখবেন, তাকে নিয়েই বেশি পজেটিভ লিখবো! একইভাবে কিছু শিল্পী আছেন, যারা এই নীতিকে সমর্থন দিয়ে আসছেন প্রকাশ্যে। ফলে এখানে ওই সাংবাদিককে একা দোষারোপ করছি না। আমি মনে করি, এই পরিস্থিতির দায় শিল্পী এবং সাংবাদিক দুই পক্ষেরই। সাংবাদিক যেভাবে ভাবছেন শিল্পীও যদি সেভাবে সায় দেন, পেম্পারিং করেন- তাহলে তো আমাদের পরস্পরের উন্নয়ন বা বিকাশ ঘটবে না।
যেমন একটা সিম্পল উদাহরণ দেই। লক্ষ করেছেন নিশ্চয়ই, সাধারণত আমাকে নিয়ে লেখা কোনও নিউজ সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করি না। একেবারেই রেয়ার ঘটনা এটা। আমি জানি না, এরকম আর কেউ আছেন কিনা। এরজন্য আমি বেশিরভাগ সাংবাদিকেরই বিরাগভাজন। কারণ, অন্য শিল্পীরা এই কাজটি বেশ উৎসাহ নিয়েই করেন। অথচ কাউকে এর পেছনে আমার যুক্তিটা বোঝাতে পারিনি। যুক্তিটা এমন, আমি কেন আমার প্রশংসাসূচক একটা নিউজ শেয়ার করবো? তাছাড়া নিউজটা যে নিউজ পেপার বা পোর্টালে ছাপা হয়েছে তাদের পেইজে তো সেটি শেয়ার হয়েছে। লাখ লাখ পাঠক সেই নিউজ পড়েছে। সেখানে নিজের প্রশংসার একটা নিউজ নিজেই কেন শেয়ার দিতে হবে! এটা আমার কাছে অস্বস্তিকর মনে হয়।
প্রশ্ন আসতে পারে, তবে কি আমি নিজের প্রশংসার নিউজ চাই না? অবশ্যই চাই। অবশ্যই সেসব নিউজ আমি মুগ্ধ হয়ে পড়ি। বারবার পড়ি। প্রয়োজনে বাবা-মা-স্বজন-বন্ধুদেরও পড়ে শোনাই। সেটা একেবারেই চার দেয়ালের ভেতরের বিষয়। এমনকি সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককেও আমি থ্যাংকস জানাই কিংবা পর্যালোচনা করি নিউজটা নিয়ে। কিন্তু সেই নিউজ শেয়ার দিতে হবে, ক্যাপশনে পাঁচ লাইন লিখে থ্যাংকস দিতে হবে- এটা আমি পারি না। পারা উচিত বলেও মনে করি না।
হ্যাঁ, আমি পারি। নিউজ শেয়ার আমিও দেই। ধরুন, আমার একটা বিশেষ কনসার্ট হবে সামনে। সেটির নিউজ হলে আমি শেয়ার করার চেষ্টা করি। কারণ, এই নিউজটি পড়লে মানুষ কনসার্টটির তারিখ, স্থান ও ধরন সম্পর্কে আগাম জানতে পারবে। মানে এটা শেয়ার করি আমি শ্রোতাদের আগাম তথ্য দেওয়ার জন্য। আবার কিছু নিউজ শেয়ার করি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে। ধরুন, আমার চোখে পড়লো এমন একটা নিউজ, যেখানে কারও চিকিৎসার জন্য প্রচুর অর্থ প্রয়োজন, রক্ত প্রয়োজন। সেসব নিউজ আমি নির্দ্বিধায় শেয়ার করি। আমার মনে হয়, এই বিষয়গুলো শেয়ার করা খুব দরকার- আমার শেয়ারের কারণে যদি একটা মানুষের প্রাণ বাঁচে, এরচেয়ে আনন্দের বিষয় আর কী হতে পারে? কিন্তু ‘অমুক গান করে মাতিয়ে দিলেন হাবিব’ এমন প্রশংসাসূচক নিউজ আমি শেয়ার করতে পারি না।
এখনও স্পষ্ট মনে আছে, আমাকে নিয়ে লেখা প্রথম নিউজটির কথা। যার শিরোনাম ছিল ‘রাধার কুঞ্জে কে এই কৃষ্ণ?’। সম্ভবত ২০০২ সালের দিকে ‘তারকালোক’ ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছে। সেই পত্রিকার কাটিং এখনও আমার কাছে আছে। কিন্তু সেটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে মাইকিং করা কি ঠিক? সোশ্যাল মিডিয়ার এই জামানায় আমাদের আত্মপ্রচারণাটা বেড়ে গেছে এটাও ট্রু। তার মানে এই নয়, চলমান অনলাইন জামানা আমাদের ক্ষতি করছে। আমি তো প্রিন্ট মিডিয়ার আমলের মানুষ। আর এখন বাস করছি অনলাইনে। ফলে আমি পার্থক্যটা ভালো অনুভব করতে পারি। অনলাইন আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করেছে। সেটা নিউজ বলেন আর ক্রিয়েটিভ ওয়ার্ক বলেন। আমরা খুব  দ্রুত নিজেদের এক্সপোজ করতে পারি। আমি গান বানাই তো মানুষের জন্য, তো সেটার খবর দ্রুত ছড়িয়ে যাক- এটাই তো চাই। আজকে অনলাইন না হলে আমি নিজের ইচ্ছামতো গান বানিয়ে প্রকাশ করতে পারতাম না।
কিন্তু এই সুযোগটা মিসইউজ হচ্ছে কিনা, সেটাও দেখার বিষয়।
সবচেয়ে বড় বিষয়- আমাদের শিল্পী আর সাংবাদিক- বোথ সাইডে প্রফেশনালিজম থাকাটা খুব জরুরি।

সংগীতশিল্পী হাবিব ওয়াহিদের কণ্ঠ থেকে লেখাটি গ্রন্থনা করেছেন মাহমুদ মানজুর।

/এমএম/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
পুষ্পা: আসবে তৃতীয় কিস্তি!
পুষ্পা: আসবে তৃতীয় কিস্তি!
সমুদ্র সৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্র সৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
যুক্তরাষ্ট্রে নোমান রবিনের ‘ছাই থেকে ফুল’
যুক্তরাষ্ট্রে নোমান রবিনের ‘ছাই থেকে ফুল’
২৪ বছর পরে আবার একসঙ্গে...
২৪ বছর পরে আবার একসঙ্গে...
সুবিধাবঞ্চিত ৪ শতাধিক বাচ্চার সঙ্গে ‘মেঘনা কন্যা’র ইফতার
সুবিধাবঞ্চিত ৪ শতাধিক বাচ্চার সঙ্গে ‘মেঘনা কন্যা’র ইফতার