প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার উদযাপন করা হয় ‘বিশ্ব বাবা দিবস’। যথারীতি আজ (১৬ জুন) সেই দিন। যেদিন সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে তারকারা প্রকাশ করছেন বাবার সঙ্গে দুর্লভ সব ছবি, হচ্ছেন স্মৃতিকাতর। তারই খানিক চিত্র তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য-
অভিনেত্রী তারিন জাহান তার বাবার সঙ্গে একটি ছবি শেয়ার করে বলেছেন কবিতার ছলে-
আমার দেখা প্রথম নায়ক
আমার কাছেই সেরা
বাবা তোমার হৃদয়টা যে
আদর দিয়ে ঘেরা
সারাজীবন দিয়েই গেছো
আর কত দেবে!
সামান্য এই ভালোবাসা
বলো বাবা নেবে?
আমি গর্বিত এমন বাবার সন্তান হতে পেরে...।
সংগীতশিল্পী পুতুল তার বিয়ের অনুষ্ঠানে বাবার সঙ্গে ছবি শেয়ার করে লেখেন- আমার বিয়ের দিন প্রথমবার যখন বাবার ঠিকানা বদলে নতুন একটা ঠিকানায় গিয়ে উঠেছিলাম তখন মনে হয়েছিলো এই শহরটা হয়তো অনেক বড়। এই দুটো ঠিকানার মধ্যে ভৌগলিক দূরত্ব মাপার ক্ষমতা পৃথিবীর কোনও বিজ্ঞানীর নেই। একই শহরে ঘুমাবো কিন্তু দুটো পৃথক ঠিকানায়! এরচেয়ে অবান্তর চিন্তা আর কিছু ছিলো না আমার কাছে তখন।
নতুন ঠিকানায় পৌঁছে যাবার পর বাবা ফোনে একটা কথা বলেছিলো। বাবার সেই নতুন বাচনভঙ্গিতে বুঝেছিলাম জীবনে অনেক বড় একটা বদল ঘটেছে। বুকের ভিতরে ছ্যাঁত করে উঠেছিলো সেটা শুনে।
কথাটা ছিলো, ‘ভালো থাকিস বাবা।’
‘বাবা ইউ আর মাই কিং’- এই কথা লিখে ছবি শেয়ার করেছেন চিত্রনায়িকা বিদ্যা সিনহা মিম। কণ্ঠশিল্পী ঐশী তার বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে ছবি শেয়ার করে লেখেন- বাবা মানে জীবনের গল্প। জীবন যুদ্ধের গল্প। এই যুদ্ধ আমার এবং আমাদের জীবনটাকে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আকাশ ছোঁয়ার যুদ্ধ। মনের সবচেয়ে বড় সাহসিকতার অস্ত্র বাবা।
আব্বু, আমি তোমাকে নিয়ে লিখতে গিয়ে শব্দের জোগান পাচ্ছি না। বুক ধড়ফড় করে কেঁপে উঠছে। চোখ ছলছল করে উঠছে। জীবনের চলমান-চিত্রে আমরা একটু সময় নিয়ে ভেবেও দেখি না যে, জীবনের অস্তিত্বটা আসলে কেন? আমাদের জীবনকে সর্বশ্রেষ্ঠ করে তুলতে তুমি যে তোমার জীবন বিলিয়ে দিয়েছ! তুমি মানে কী? তুমি মানে আমাদের জীবন। আমাদের ফুসফুস, শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণকারী।
একটু আজকের দিনের সুযোগটা কাজে লাগিয়ে মনের অনুভূতি প্রকাশ। বাবার জন্যে বাবা দিবস না। জীবনের প্রতিটা দিন-মুহূর্ত-নিঃশ্বাস।
দেশের অন্যতম সংগীত প্রযোজক জহিরুল ইসলাম সোহেল লেখেন, বাবা মানে হলো এই বিশাল পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকার একমাত্র আশ্রয়ের শেষ ঠিকানা। আপনার ছায়া আপনার আদর্শে বড় হয়েছি। কখনও সন্তানের এক ফোটা কষ্ট বুঝতে দেননি। আপনার কাছ থেকে শিখেছি কিভাবে সততার সাথে পথ চলতে হয়। আপনার কাছ থেকে পেয়েছি অনুপ্রেরণা- যে অনুপ্রেরণায় আজ আমি এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি।
সন্তান যতই বড় হোক বাবার কাছে সব সময় ছোটই থাকে এখনও আপনার কাছে এসে বলি- বাবা টাকা লাগবে, আর আপনি এখনও আপনার কর্তব্য পালন করে যাচ্ছেন। আপনার মতো বটগাছ যে সন্তানের মাথার ওপর থাকে সেই সন্তান কখনও গরিব বা অসুখী না।
কণ্ঠশিল্পী আলিফ আলাউদ্দীন তার কিংবদন্তি বাবাকে নিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। লেখেন, It is the most helpless feeling to see a parent in the hospital. Please keep him in your prayers.
কণ্ঠশিল্পী কোনাল তার বাবার সঙ্গে শিশুবেলার একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, আমার জীবনের ১০০ ভাগ রিস্কগুলো আমি নিতে পেরেছি বাবা সায় দেয়ার কারণে। যত রোমাঞ্চকর কর্মকাণ্ড, দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত, আর অন্যায় আবদার ছিল, সব পূরণ হয়েছে বাবার বিশাল ব্যাকিংয়ের কারণে।
একবার আমার চাচাতো বোন তাসনিম (আমার চেয়ে ১২/১৩ বছরের ছোট) আমাকে বুদ্ধি দিলো, ‘আপু, কোনও ইচ্ছা বাসায় পূরণ করাতে হলে, শুধু বাবার সামনে গিয়ে চুপচাপ কাঁদবে। শব্দ করে না, আবার বেশিক্ষণও না। পরিমিত লেভেলে। দেখবে একটু পর কীভাবে রকেটের মতো ইচ্ছে পূরণ হয়ে যাচ্ছে!’
কথা সত্য। তাসনিম বলার আগেও বহুবার আমি এই ট্রিক কাজে লাগিয়েছি আব্বুর কাছে এবং প্রতিবারই সফল হয়েছি। আমি কাঁদলে বাবা আর ঠিক থাকতে পারেন না। আমি না কাঁদলেও বাবার কাছ থেকে কখনও খালি হাতে ফিরিনা। বাবা সব বুঝে। আমরা শুধু বাবাকে বুঝি না; বাবাদের চাপা কান্না বুঝি না।
ছোটবেলায় আব্বু একটা ক্যাসেট রেকর্ড করে পাঠিয়েছিল ইরাক থেকে; বলেছিল, ‘আমার যত ত্যাগ, আমার যত কষ্ট, সবই কোনালের জন্য।’
আব্বু আজ বলছি, আমার যত ভালোবাসা, আমার যত স্বপ্ন, আমার যত ইচ্ছা, আমার যত আকাঙ্ক্ষা, আমার যা কিছু রঙিন, সবই তোমার জন্য।
উপরের ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে অভিনেত্রী রুনা খান লেখেন, আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞতা এই দুজনার প্রতি। সবচেয়ে ভালোবাসার দুজনা...। সবচেয়ে বেশি ঝগড়াও এই দুজনের সাথেই হয় অবশ্য!