একরাশ প্রশ্ন রেখে চিরঘুমে চলে গেছেন বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত। তার আত্মহত্যাকে ঘিরে যেসব ধোঁয়াশা ছড়িয়েছে সেগুলোর জট ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করেছে। মুম্বাই পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসছে অনেক তথ্য। প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তীকে জেরা করে পাওয়া গেছে বেশকিছু খবর।
গত ১৪ জুন মুম্বাইয়ে বান্দ্রার কার্টার রোডে নিজের ফ্ল্যাটে সুশান্ত সিং রাজপুতের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেছে, বিছানার চাদর গলায় প্যাঁচিয়ে ঝুলে থাকায় অ্যাসপিক্সিয়ার (অক্সিজেনের ঘাটতিতে দম বন্ধ হওয়া) কারণে মারা গেছেন তিনি। তার ঘরে পাওয়া গেছে প্রেসক্রিপশন ও অ্যান্টি ডিপ্রেশন ওষুধ। তবে কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি।
থানায় ডেকে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে রিয়া উল্লেখ করেন, কয়েক মাস ধরে সত্যিই বিষণ্নতায় ভুগছিলেন সুশান্ত। তবে ওষুধ ব্যবহার করতেন না তিনি। পুলিশকে এ তথ্যও দিয়েছেন রিয়া। হতাশার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে যোগব্যায়াম ও মেডিটেশনকে বেছে নিয়েছিলেন প্রয়াত তারকা। ওষুধ নিতে প্রেমিককে রাজি করাতে অনেক চেষ্টার পরও ব্যর্থ হন তিনি।
সুশান্তের সঙ্গে রিয়ার প্রেমের গুঞ্জন চলছিল অনেকদিন ধরে। তারা একসঙ্গে বিদেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন। কিন্তু কখনও সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে মুখ ফুটে বলেননি কেউই।
১৮ জুন মুম্বাই পুলিশের সামনে সুশান্তের সঙ্গে মন দেওয়া-নেওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন রিয়া। তিনি জানান, ভারতে অবরুদ্ধ অবস্থা (লকডাউন) থাকাকালে একই অ্যাপার্টমেন্টে ছিলেন তারা। কিন্তু একদিন ঝগড়ার কারণে রিয়া বেরিয়ে চলে যান। তবে এরপরও মোবাইল ফোনে কথা ও মেসেজ আদান-প্রদান হয়েছে তাদের।
সুশান্তের এক কাজিন গত ১৫ জুন গণমাধ্যমকে জানান, আগামী নভেম্বরে বিয়ে করার কথা ছিল তার। মুম্বাইয়ে ঘরোয়া পরিসরে সেই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। তবে পাত্রীর নাম উল্লেখ করেননি ওই কাজিন।
পুলিশকে রিয়া জানান, তাকেই বিয়ে করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সুশান্ত। এ বছরের নভেম্বরে তাদের সাত পাকে বাঁধা পড়ার কথা ছিল। জীবনের নতুন ইনিংস শুরু করতে নতুন বাড়ি খুঁজছিলেন দু’জনে।
বিয়ের আগে রুমি জাফরির পরিচালনায় একটি ও অন্য একটি ছবিতে একসঙ্গে অভিনয়ের পরিকল্পনা ছিল সুশান্ত-রিয়ার। পুলিশকে এ তথ্য জানাতে ভোলেননি তিনি। তার মোবাইল ফোনে সুশান্তের সঙ্গে তোলা ছবি ও ভিডিও এবং মেসেজ স্ক্যান করা হয়েছে থানায়।
রিয়ার কাছ থেকে পাওয়া ৫ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-
১. সুশান্ত সিং রাজপুত ও রিয়া চক্রবর্তীর সম্পর্ক ছিল, এ বছরের নভেম্বরে তারা বিয়ে করার পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন।
২. সুশান্তের আত্মহত্যার কয়েকদিন আগে তার সঙ্গে রিয়ার ঝগড়া ও ছাড়াছাড়ি হয়।
৩. চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতেন না সুশান্ত।
৪. সুশান্তের হাতে বেশ কয়েকটি ছবির কাজ ছিল।
৫. সুশান্তের আত্মহত্যার পর থেকে তার পরিবার রিয়াকে দূরে রেখেছিল। এ কারণে শেষকৃত্যে যাওয়া হয়নি তার।
গত ১৩ জুন রাতে রিয়ার সঙ্গে শেষবার কথা হয় সুশান্তের। পরদিন সকালে ঘনিষ্ঠ বন্ধু মহেশ শেট্টিকে তিনি ফোন করেছিলেন। কিন্তু বন্ধু সেই ফোন ধরতে পারেননি। তাই অজানাই থেকে গেল সুশান্তের শেষ কথাগুলো। কারণ, এরপরই আত্মহত্যা করেন ৩৪ বছর বয়সী তারকা। ১৩ বছরের বন্ধুত্ব ছিল তাদের। সুশান্তের প্রথম টিভি সিরিয়াল ‘কিস দেশ মে হ্যায় মেরা দিল’ ও এরপর ‘পবিত্র রিশতা’য় একসঙ্গে অভিনয় করেন তারা। বৃহস্পতিবার মহেশ ইনস্টাগ্রামে সুশান্তের সঙ্গে তোলা একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া হলো না। অনেক কথা বলার ছিল। তোর সঙ্গে আবারও দেখা হলে বলবো!’
গত ১৫ জুন মুম্বাইয়ে ভিলে পার্লের পবন হংস মহাশ্মশানে সুশান্তের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। এ সময় রিয়ার কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছিল তার বাবা কেকে সিং, বোন মিতুসহ পরিবারের সদস্যরা। পুলিশকে এটাও জানিয়েছেন ২৭ বছর বয়সী এই তারকা। ২০১৩ সালে ‘মেরে ড্যাড কি মারুতি’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক তার। একই বছর ‘কাই পো চে!’ দিয়ে হিন্দি ছবির আঙিনায় পা রাখেন সুশান্ত। ভালোবাসা দুই তারকাকে মিলিয়ে দিয়েছিল একবিন্দুতে। শেষ পর্যন্ত আর দু’জনের পথটা এক থাকলো না। দু’জন এখন দুই ভুবনে।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
