একবার যদি কেউ ভালোবাসতো, যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়, ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়—আছে এমন কত গান, কত সুর!
এমন অসংখ্য গানের সুর জড়িয়ে আছে যে প্রাঙ্গণে, সেই এফডিসিতে এলেন আলাউদ্দীন আলী। গানের সুরস্রষ্টা, গানের প্রাণভ্রমরা। তবে নিথর, নিস্তেজ দেহে। এলেন প্রিয় সহকর্মীদের কাছ থেকে শেষ বিদায় নিতে।
তবে শুধু ফুল নয়, অশ্রু আর ভালোবাসায় সিক্ত হলেন প্রয়াত প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক আলাউদ্দীন আলী। আজ (১০ আগস্ট) দুপুর দুইটার দিকে কর্মস্থল বিএফডিসি প্রাঙ্গণে আনা হয় তার মরদেহ।
এ সময় ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিল্পীরা।
শ্রদ্ধা নিবেদন করে গীতিকবি সংঘ, বাংলাদেশ; মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমআইবি); বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি; বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন।
সংগীতশিল্পীদের মধ্যে উপস্থিত হন কনকচাঁপা, পার্থ বড়ুয়া, বাপ্পা মজুমদার, এসআই টুটুল, বাদশা বুলবুল, পারভেজ, মুহিন, কিশোর, নাজির মাহমুদ, আহমেদ রিজভী, চিত্রনায়ক ওমর সানী, অভিনেতা জাহিদ হাসান, সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদসহ অনেকে। তবে সংগীতের বাইরে দেশের জনপ্রিয় তারকাদের মধ্যে তেমন কাউকে উপস্থিত হতে দেখা যায়নি।
বিএফডিসির জানাজা শেষে আলাউদ্দীন আলীর আত্মীয় ও সংগীত পরিচালক শওকত আলী ইমন বলেন, ‘আলাউদ্দীন আলী নিজে একটি ইনস্টিটিউট ছিলেন। এমন কোনও মিউজিশিয়ান নেই, যিনি আলাউদ্দীন আলীর স্কুল থেকে শিখেননি। আজকে আমি শওকত আলী ইমন যতটুকু পেয়েছি তাতে অবদান আছে আলাউদ্দীন আলী ভাইয়ের। শুধু বাংলাদেশ নয়, তাকে হারানো উপমহাদেশের জন্য অনেক বড় ক্ষতি।’
বিএফডিসির আগে রামপুরা ও আলাউদ্দীন আলীর আবাসস্থল খিলগাঁওয়ের নূর-ই-বাগ মসজিদে দুটি জানাজা হয়েছে। এফডিসির জানাজার পরপরই মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করার জন্য মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়।
উল্লেখ্য, রবিবার (৯ আগস্ট) বিকাল ৫টা ৫০ মিনিট নাগাদ রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে কিংবদন্তি সংগীত পরিচালক আলাউদ্দীন আলী। তার মৃত্যুর খবরে শোক নেমে আসে দেশের সংগীতাঙ্গনে।
২০১৫ সালের জুন মাসে আলাউদ্দীন আলীর শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর থেকে তিনি কয়েক দফায় বিদেশেও চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে তিনি সেভাবে উঠে দাঁড়াতে পারেননি। ফিরতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে, সংগীতে।
আলাউদ্দীন আলী বাংলাদেশের বরেণ্য সুরকার, সংগীত পরিচালক ও গীতিকার। এ পর্যন্ত ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এরমধ্যে ১৯৭৮ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত টানা তিনবার পুরস্কৃত হয়ে সংগীত পরিচালক হিসেবে রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। সে রেকর্ড আজও কেউ ভাঙতে পারেনি।
ছবি: মাহমুদ মানজুর