X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

এক জীবনে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

বিনোদন ডেস্ক
১৫ নভেম্বর ২০২০, ১৩:৫৯আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২০, ২২:৫৯

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সৌমিত্র মানেই দীর্ঘাঙ্গি সু-পুরুষ। উত্তমের পর সে সময় মেয়েদের মনে ঝড় তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন একমাত্র সৌমিত্রই।
১৯৩৫ সালের জানুয়ারি মাসের ১৯ তারিখ জন্ম হয় সব্যসাচী এই শিল্পীর। চট্টোপাধ্যায় পরিবারের আদি বাড়ি ছিল অধুনা বাংলাদেশের কয়া গ্রামে। তবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ঠাকুরদার সময় থেকেই চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে থাকতে শুরু করেন। বাবার বদলির চাকরি কারণে ক্লাস ফাইভের পর হাওড়ায় চলে যান সৌমিত্র। সেখানেই স্কুলে পড়াশোনা। তারপর কলকাতার সিটি কলেজে বাংলা নিয়ে পড়তেন তিনি।
প্রথম থেকেই কবিতা, আবৃত্তি, সাহিত্য, বাম রাজনীতির দিকে ঝোঁক ছিল তার। তাই সৌমিত্র মানেই যে শুধু সিনেমার পর্দায় ডাকসাইটে অভিনেতা, তা একেবারেই নয়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নিজেকে মেলে ধরেছিলেন সংস্কৃতির নানা দিকে।
বাংলা-ঘটির লড়াইয়ে সব সময়ই উত্তম-সৌমিত্র কেন্দ্রবিন্দু। ভক্তরাও দু’ভাগ। একদিকে যখন উত্তমের নামে বক্স অফিসে দৌড়াচ্ছে, অন্যদিকে সৌমিত্রও তার স্টাইলে চমক দেখিয়েছেন পর্দায়। তপন সিনহার ‘ঝিন্দের বন্দি’ ছবিতে উত্তম-সৌমিত্রের অভিনয়ের লড়াই তাক লাগিয়েছিল সবাইকে। পর্দায় যেন অভিনয়ের যুদ্ধ। তবে শুধুই ‘ঝিন্দের বন্দি’ নয়, ‘দেবদাস’, ‘স্ত্রী’, ‘যদি জানতাম’ ছবিতেও উত্তম-সৌমিত্রকে একই সঙ্গে অভিনয় করতে দেখেছেন সিনেপ্রেমী মানুষ।
১৯৫৯ সালে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রথম সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ‘অপুর সংসার’ ছবিতে অভিনয় করেন। পরবর্তীকালে তিনি মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মতো পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করেছেন। সিনেমা ছাড়াও তিনি বহু নাটক, যাত্রা এবং টিভি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন।
সিনেমাটাকে একটু বেশিই ভালোবাসতেন সৌমিত্র। তাই তো এই বয়সেও একের পর এক বক্স অফিসে সুপারহিট সব ছবি—‘বেলাশেষে’, ‘ময়ূরাক্ষী’, ‘বসু পরিবার’, ‘সাঁঝবাতি’ প্রভৃতি তারই প্রমাণ।
‘ঘরে বাইরে’ ছবির সেটে সত্যজিৎ ও সৌমিত্র ১৯৫৬ সালে সত্যজিৎ রায় যখন ‘অপরাজিত’র জন্য নতুন মুখ খুঁজছিলেন, তখনই তার সঙ্গে ২০ বছরের সৌমিত্রর দেখা হয়। বয়স বেশি হওয়ার কারণে সেই সময় তাকে নেননি পরিচালক সত্যজিৎ। কিন্তু বেশি বয়সের অপুর জন্য ২০ বছরের যুবককে পছন্দ করে রেখেছিলেন তার অজ্ঞাতেই। দুই বছর বাদে যখন ‘জলসাঘর’-এর শুটিং করছিলেন সেটে যুবক সৌমিত্র গিয়েছিলেন সেটে তার কাজ দেখতে। শুটিং শেষ হওয়ার পর সৌমিত্রকে নিয়ে ছবি বিশ্বাসের সামনে দাঁড় করান সত্যজিৎ। পরিচয় করাতে গিয়ে বলেন, এ হচ্ছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, আমার ‘অপুর সংসার’-এর নায়ক। সেই শুরু।
তারপরের পাঁচ দশক যেন রূপকথার মতো। ‘দেবী’, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘ঝিন্দের বন্দি’, ‘সাত পাকে বাঁধা’, ‘কাপুরুষ’, ‘আকাশ কুসুম’, ‘বাঘিনী’, ‘পরিণীতা’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ থেকে হালফিলের ‘ময়ূরাক্ষী’, ‘বেলাশেষে’, ‘সাঁঝবাতি’—একের পর এক মণিমুক্তা ছড়িয়ে রয়েছে বাঙালির স্মৃতির ভাণ্ডারে। বাঙালির মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজের আলাদা পরিচিতি গড়ে তুলেছেন স্বকীয়তার ওপর ভিত্তি করে। তিনি বাঙালির আদি অকৃত্রিম ফেলুদা।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কিছু দিন আগেই শুটিংয়ে যোগ দিয়েছিলেন প্রবাদপ্রতিম এই শিল্পী। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় নিজের জীবননির্ভর সিনেমা ‘অভিযান’-এর শুটিং সম্পূর্ণ করেছিলেন। ছবিতে অল্প বয়সের সৌমিত্রর চরিত্রে অভিনয় করেছেন যিশু সেনগুপ্ত। বেশি বয়সের চরিত্রে সৌমিত্র নিজেও অভিনয় করেন। অভিনেতা ছাড়াও একাধিক ভূমিকায় নিজের কীর্তির ছাপ রেখে গিয়েছেন সৌমিত্র। ছিলেন নাট্যকার, লেখক, কবি, চিত্রশিল্পী। সৃষ্টিশীলতাই ছিল তার ধ্যানজ্ঞান। তাতেই সমর্পিত করেছিলেন প্রাণ। করোনা থাবা শরীর কেড়ে নিতে পারে, কিন্তু কালের নিয়মের তোয়াক্কা না করেই শিল্পী বেঁচে থাকেন তার সৃষ্টির মাধ্যমে।
১৫ নভেম্বর বেলা সোয়া ১২টায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণের মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবেই বাংলা সিনেমার একটা সমৃদ্ধ অধ্যায়ের ইতি ঘটলো।
সূত্র: নিউজ এইটিন ও এই সময়

/এমএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নায়কের জন্মদিনে নায়িকারা...
নায়কের জন্মদিনে নায়িকারা...
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
ঢাকার পর্দায় আবার গডজিলা-কিং কং
ঢাকার পর্দায় আবার গডজিলা-কিং কং
পুষ্পা: আসবে তৃতীয় কিস্তি!
পুষ্পা: আসবে তৃতীয় কিস্তি!