X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের ‘সিরীয় যুদ্ধ’র উদ্দেশ্য নিয়ে দুই মত, গন্তব্য অজানা

ফাহমিদা উর্ণি
০৯ এপ্রিল ২০১৭, ১৭:০৮আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০১৭, ১১:৩৯
image

Untitled-1 আসাদ সরকারকে উৎখাত করতেই ‘সিরীয় যুদ্ধ’র সূচনা কি না; এই প্রশ্নে মার্কিন প্রশাসনে পরস্পরবিরোধী দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। জাতিসংঘের মার্কিন প্রতিনিধি নিকি হ্যালি, প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগন, এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সিরিয়া অভিযানের উদ্দেশ্য নিয়ে অস্পষ্টতা সৃষ্টি হয়। আবারও আসাদবিরোধী অভিযান চালানো হবে কিনা, কিংবা কতোদিন পর্যন্ত অভিযান চলতে পারে; খোদ প্রেসিডেন্টের মন্তব্য থেকেও তা নিয়ে কোনও স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়নি। উদ্দেশ্যের পাশাপাশি তাই ট্রাম্পের ‘আসাদবিরোধী সিরীয় যুদ্ধ’র গন্তব্য নিয়েও ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।

সিরিয়ার স্থানীয় সময় শুক্রবার ভোররাতের দিকে হোমস প্রদেশের আল-শায়রাত বিমানঘাঁটিতে আছড়ে পড়ে ৫৯টি মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র। ওই বিমানঘাঁটিতে বিপুল পরিমাণ রুশ সেনার উপস্থিতি থাকলেও হতাহতের মধ্যে কোনও রুশ সেনা ছিল না। আবার হতাহতের সংখ্যার সঙ্গে হামলার ব্যাপকতাও সাজুয্যপূর্ণ মনে হয়নি। ৫৯টি ক্ষেপণাস্ত্রের হামলায় নিহত হয় কেবল ৬ জন সিরীয় সেনা।

হামলার পরপরই মার্কিন প্রশাসনের পরস্পরবিরোধী অবস্থান স্পষ্ট হয় রাশিয়া প্রশ্নে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মূল্যায়নের সূত্রে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়, ওই ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের আগেই এ ব্যাপারে রাশিয়াকে সতর্ক করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের বিবৃতিতেও দাবি করা হয়, হামলার কথা রাশিয়াকে আগেই জানানো হয়েছিল। রুশ কর্তৃপক্ষও একই দাবি করে। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন দাবি করেছেন, হামলার আগে বা পরে রাশিয়ার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি। প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরস্পরবিরোধী এইসব কথায় ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয় সিরিয়া প্রশ্নে মার্কিন অবস্থান নিয়ে।

সিরীয় যুদ্ধ
হামলার উদ্দেশ্য আসাদ সরকারকে উৎখাত নাকি তার ‘রাসায়নিক অস্ত্র সীমিতকরণ’ তা নিয়েও মতভিন্নতা দেখা গেছে। কেউ কেউ আবার ট্রাম্পের পুরনো নীতির সুরে এখনও বলতে চাইছেন হামলার উদ্দেশ্য আইএস দমন। মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগন ইঙ্গিত দিয়েছে, আইএস ও অন্য উগ্রপন্থী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকলেও আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর আপাতত পরিকল্পনা নেই তাদের। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের কাছ থেকেও মিলেছে একই ধরনের ইঙ্গিত। তিনি বলছেন, সিরিয়া থেকে আইএসকে নির্মূল করাই মার্কিন সরকারের প্রাধান্যের শীর্ষে অবস্থান করছে। আর এর মধ্য দিয়ে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার পর আসাদ সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমাধানের পথ খোঁজা যাবে বলে মনে করেন তিনি।

মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগনের ইঙ্গিত, আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর আপাতত পরিকল্পনা নেই তাদের। পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসনও মনে করেন, খোদ আসাদ সরকারের সঙ্গেই তাদের ক্ষমতা পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে ভিন্নমত দিয়েছেন নিকি হ্যালি। বলেছেন, ‘সিরিয়ার আসাদ সরকারের সঙ্গে একটি রাজনৈতিক সমাধানে আসার মতো কোনও সুযোগ নেই। আপনারা যদি তার কর্মকাণ্ডের দিকে খেয়াল করেন, পরিস্থিতির দিকে খেয়াল করেন, তবে এমন একটি সরকারকে পাওয়াও কঠিন হবে যারা কিনা আসাদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল। সরকার পরিবর্তনের মতো কিছু ঘটতে যাচ্ছে বলে আমরা মনে করছি।’

নিকি হ্যালি
সিরিয়ার এই মার্কিন অভিযানের উদ্দেশ্য কী, আবারও অভিযান হবে কিনা, তা নিয়েও কোনও সুনির্দিষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। হামলাকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট আসাদের রাসায়নিক অস্ত্র সীমিতকরণের মধ্য দিয়ে তাকে দুর্বল করা হামলার উদ্দেশ্য। তবে এক দফা হামলার পর আবারও হামলা হবে কিনা তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। অবশ্য থেমে থেমে হামলা হতে পারে ইঙ্গিত দিয়েছেন জাতিসংঘ প্রতিনিধি নিকি হ্যালি। সবমিলে সিরিয়ায় পরবর্তী মার্কিন পদক্ষেপ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অস্পষ্টতা।

শনিবার এক চিঠিতে ‘সিরীয় যুদ্ধ’ নিয়ে কংগ্রেসকে অবহিত করেন ট্রাম্প। চিঠিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ‘রাসায়নিক হামলা চালানোর সক্ষমতা’ কমাতে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে নিকি হ্যালি সিরিয়ায় ট্রাম্প প্রশাসনের শুরু হওয়া ‘যুদ্ধ’ অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, ‘রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ আর নিরস্ত্রীকরণ ব্যাপকভাবেই জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। যুক্তরাষ্ট্র এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করতে চায়, যেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার না করেন।’ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে নিকি হ্যালি আবারও এমন হামলার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘প্রয়োজনে এমন আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে তার হয়তো দরকার পড়বে না।’ পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানাননি তিনি।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছেও সিরিয়ায় পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে কোনও সুস্পষ্ট তথ্য মেলেনি। শুক্রবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি শন স্পাইসার বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চান আসাদ সরকার অন্ততপক্ষে রাসায়নিক অস্ত্রের বন্ধের ব্যাপারে হওয়া সমঝোতা মেনে চলবে।’ তবে সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে সে ব্যাপারে কিছু বলতে স্পাইসারও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

/বিএ/

সম্পর্কিত
মিসরে চলমান যুদ্ধবিরতির আলোচনা, গাজায় বোমা ফেলছে ইসরায়েল
দ্বিতীয় সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, আটক ২ সহস্রাধিক
মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরত রাখা নীতিগত সিদ্ধান্ত, আইনি নয়: কাদের
সর্বশেষ খবর
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
ওপারের গোলার বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফ
ওপারের গোলার বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফ
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
সর্বাধিক পঠিত
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন