আসিয়ান সম্মেলনের আলোচনায় রোহিঙ্গা সংকট, চাপের মুখে সু চি

সিডনির আসিয়ান সম্মেলনের আলোচনায় উঠে এসেছে রোহিঙ্গা সংকটের প্রশ্ন। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দশ জাতির এই জোটের তিন দিনের সম্মেলনের সমাপনী দিনের একটি দীর্ঘ সময় এই সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সম্মেলনস্থলের বাইরে সু চির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। তবে আসিয়ান দেশগুলো রোহিঙ্গা সংকটে হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে।




রাখাইন রাজ্যে সেনা নিপীড়নের মুখে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গার দেশ ছাড়ার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রয়েছেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি। অভিযানের বিষয়ে নীরব থাকায় বিশ্বজুড়ে বহু সম্মাননা বাতিল হয়েছে তার। মানবিক সংকট তৈরি করা রোহিঙ্গা ইস্যুটি অস্ট্রেলিয়া ও আসিয়ানের এবারের যৌথ সম্মেলনেরও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বলে বিবেচিত হয়েছে। দশ জাতির জোট আসিয়ান গঠিত হয় ১৯৬৭ সালে। সদস্য দেশগুলো হলো ব্রনাই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। ১৯৭৪ সাল থেকে জোটটির আলোচনা সহযোগী হিসেবে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
শেষ দিনের সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে আমরা আজ একটি দীর্ঘ সময় আলোচনা করেছি। অং সান সু চি এই বিষয়ে দীর্ঘ সময় নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন।’ রোহিঙ্গা সংকটকে ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আলোচনা করেছি এবং এখন পর্যন্ত এটা বলা যায়… আমাদের বৈঠকে খুবই গঠনমূলকভাবে আলোচনা হয়েছে’, বলেন টার্নবুল।
সংবাদ সম্মেলনে চলতি বছরে আসিয়ানের সভাপতির দায়িত্ব নেওয়া সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সেইন লুং বলেন, চলমান পরিস্থিতি নিয়ে মিয়ানমারের প্রতিবেশীরা উদ্বিগ্ন। তবে তারা ফলাফলের জন্য কোনও জোর খাটাবে না। তিনি বলেন, আসিয়ানভুক্ত সব দেশের জন্যই এটা উদ্বেগের। তবে এখন পর্যন্ত আসিয়ান সেখানে হস্তক্ষেপ বা ফলাফলের জন্য জোর খাটাতে সক্ষম হয়নি। দশ জাতির জোট আসিয়ান ঐক্যমতের কূটনীতি ও পারস্পরিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে বিশ্বাসী।
দুই নেতাই বলেন, সংকট উত্তরণে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খুঁজতে সহায়তা অব্যাহত রাখবেন। এছাড়া বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষদের সহায়তায় মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার কথা জানান তারা।
এএফপির খবরে বলা হয়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশত্যাগ আসিয়ান জোটে বিপুল অস্থিরতা তৈরি করেছে। জোটভুক্ত মালয়েশিয়া আগেই রাখাইনে সেনা নিপীড়নের অভিযোগের বিষয়ে আসিয়ানের নেতৃত্বে স্বাধীন তদন্ত দাবি করেছে। শনিবারও দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক এই ইস্যুতে সু চির ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। তিনি বলেন, এই সংকট আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। ইসলামিক স্টেটের মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো রোহিঙ্গাদের দলে টানতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তার দেশের কোনও নির্দিষ্ট গোয়েন্দা পদ্ধতি নেই, যার সাহায্যে রাখাইনের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। তবে সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, ‘আপনাকে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যেতে হবে।’
সম্মেলনস্থলের ভেতরে সংকট প্রশ্নে হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা নাকচ হয়ে গেলেও বাইরে সু চির বিরুদ্ধে উত্তাল বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার নোবেল পুরস্কার কেড়ে নেওয়ার দাবি ধ্বনিত হয় সেই প্রতিবাদী বিক্ষোভ থেকে। এখনও অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছেন সু চি। সোমবার ক্যানবেরায় তার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা রয়েছে। মঙ্গলবার সিডনির লোয়ে ইনস্টিটিউটে বক্তব্য রাখার কথা তার। শনিবার অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছে এখনও জনসম্মুখে কোনও কথা বলেননি তিনি। তবে মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানের পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়ার কথা তার।