আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে কৃত্রিম ডিম্বাশয় তৈরির মাইলফলক অর্জন হবে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, এতে করে জন্মদান ক্ষমতা বাড়বে নারীদের। যাদের বাচ্চা হয় না এই প্রক্রিয়া তাদের জন্য খুবই কার্যকরী হবে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। বিশেষ করে যারা কেমোথেরাপি নেন তাদের জন্য।
ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব হিউম্যান রিপ্রোডাকন এন্ড এমব্রায়োলোজির বার্ষিক বৈঠকে এই বিষয়টি তুলে ধরেছেন ড্যানিশ বিজ্ঞানীরা। সেখানে বলা হয়, বিজ্ঞানীরা ডিম্বাশয়ের কিছু অংশ সরিয়ে সেখানে কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপন করেন। বিশেষজ্ঞরা জানান, ফলাফল দারুণ তবে এখনও কারও ওপর পরীক্ষা করা হয়নি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি দেওয়ায় প্রায়ই ডিম্বাশয় ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন নারীরা। ডিম্বাশয়র কোষ প্রতিস্থাপানের মাধ্যমে এটা ফিরিয়ে আনার চেষ্ট করা হয়। যেখানে ডিম্বাশয়ের পুরো অংশ সরিয়ে হিমাগারে রাখা হয় যেন পরে ব্যবহার করতে পারেন।
তবে যারা এখনও সন্তান জন্ম দেয়নি শুধু তাদের ক্ষেত্রেই এটা সম্ভব। কিন্তু ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের ডিম্বাশয় সরিয়ে নেওয়ায় ঝুঁকি থাকে যে আক্রান্ত কোষ ওই ডিম্বাশয়ের মধ্যে থেকে যায়। আর সুস্থ হওয়ার পর প্রতিস্থাপনে তা আবার ফিরে আসতে পারে।
যদিও এই ঝুঁকির মাত্র খুবই কম। তারপরও এই প্রতিস্থাপনের ঝুঁকি নিতে চায় না কেউ। এই সংশয় এড়াতে ডেনমার্কের রিগোসপিটলেটের বিজ্ঞানীরা ডিম্বাশয়ের ফসিল ও টিস্যুগুলো ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর কাছ থেকে নেয়। তারপর সেখানে ক্যান্সারে আক্রান্ত টিস্যুগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। তখন সেখানে শুধু প্রোটিন ও কোলাজেন থাকে। এরপর সেখানেই ফলিসিল ফলাতে সক্ষম হয় বিজ্ঞানীরা।
এই কৃত্রিম ডিম্বাশয় একটি ইদুরের মধ্যে প্রতিস্থাপন করা হয়। দেখা যায় সে জীবিত আছে। বিজ্ঞানীরা এমন সাফল্যে খুবই উচ্ছসিত। তবে এটা মানুষের মধ্যে পরীক্ষা করা প্রয়োজন বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।
হ্যামারস্মিথ হাসপাতালের গাইনোকলোজিস্ট স্টুয়ার্ট লাভেরি বলেন, ডিম্বাশয় হাজার হাজার ডিম্বানু থাকে যার ফলে একজন নারীকে গর্ভবতী হতে পারেন। টেস্টটিউবের মাধ্যমেও শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর নিষেক ঘটানো হয়।
মিডল্যান্ড ফার্টালিটি সার্ভিসের পরিচালক ড. গিলিয়ান লকউড বলেন, নারীর দেহে ডিম্বাশয় পুনরায় সংযোজনের পর ঋতুকাল পুনরায় শুরু হওয়ার মাধ্যমে তারা সন্তান ধারণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন এবং এক্ষেত্রে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি প্রয়োজন হবে। আগামী ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে এধরনের চিকিৎসায় পূর্ণ সফলতা পাওয়া যাবে বলে বিজ্ঞানীরা আশ্বাস দিচ্ছেন। তবে এখনও এই পরীক্ষা প্রাথমিক পর্যায়ের। মানবদেহে এখনও পরীক্ষা করে দেখা হয়নি। এজন্য আরও ৩-৪ বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।