মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলে দেশটির রাষ্ট্রীয় পরামর্শক সু চি’র বাবার ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে স্থানীয়দের এক বিক্ষোভে রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। মালয়েশীয় সংবাদমাধ্যম দ্য স্টার অনলাইনের এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করায় অং সানকে বেশিরভাড় বার্মিজরা স্বাধীনতার নায়ক বলে বিবেচনা করে। তবে ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের আগে হত্যার শিকার এই জেনারেলকে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলো তেমন পছন্দ করে না। তাকে বামার নিপীড়নের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে তারা।
চলতি মাসের প্রথম দিকেই তামার ওই ভাষ্কর্য উন্মোচিত হয়। এতে দেখা যায় সু চির বাবা ও মিয়ানমারের স্বাধীনতার স্থপতি অং সান একটি ঘোড়ার ওপর বসে আছেন। উন্মোচনের আগে থেকে এটি নিয়ে সমালোচনা হয়ে আসছিলো।
মঙ্গলবার কায়াহ প্রদেশের পার্লামেন্টের দিকে কয়েক হাজার মানুষ পদযাত্রা করে। কাঁটাতারের পেছনে দাঁড়িয়ে তাদের বাধা দেয় দাঙ্গা পুলিশ। মঙ্গলবার ছিলো মিয়ানমারের ইউনিয়ন ডে। সরকারি এই ছুটির দিন এই আন্দোলন করে স্থানীয়রা। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য মিয়ানমারে এই দিবসটি পালন করা হয়।
বিক্ষোভকারীদের এক নেতা মিও হ্লাং উইন বলেন, পুলিশের রাবার বুলেটের আঘাতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, তারা নিরস্ত্র মানুষের ওপর হামলা করে। গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় এমনটা হতে পারে না।
সংবাদমাধ্যম প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, চিকিৎসাকর্মীরা আহতদের রক্ত পরিষ্কার করছেন। তাদের অনেকেই স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী লাল পোশাক পড়া ছিলেন।
২০১৭ সালে পূর্বাঞ্চলীয় মন প্রদেশে অং সানের ভাস্কর্য স্থাপন ও একটি সেতুর নাম তার নামে নামকরণের পরিকল্পনা করলে বিক্ষোভের মুখে পড়ে সু চি সরকার। মিও হ্লাং বলেন, ‘আমরা চািই আমাদের সত্যিকারের, নিজেদের নায়কদের ভাস্কর্য থা, জেনারেল অং সানের নয়। এখনও কায়াহ প্রদেশের পুলিশের কাছ থেকে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
অং সানের ভাস্কর্যকে ঘিরে বিতর্ক আদতে অনেক বড় পর্যায়ের। ২০১৫ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করে অর্ধশতাব্দীর সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসেন তার মেয়ে অং সান সু চি। এসেই ঘোষণা দেন, যুগ যুগ ধরে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদ ও স্থানীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্থানীয়দের দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাবেন তিনি।
তবে শান্তি আলোচনায় খুব ফলপ্রসূ হয়নি। জুলাইয়ে প্রথমনবারের এই ভাস্কর্যেরপ পরিকল্পন ঘোষণার পর থেকে শুরু আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ৮২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের অনেকেই গত সপ্তাহ পর্যন্তও আটক ছিলেন। দোষী প্রমাণিত হলে তাদের ছয়মাসের জেল হতে পারে, নেতৃত্বস্থানীয়দের হতে পারে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড।
ফর্টিফাই রাইটসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাথিউ স্মিথ বলেন, এই আন্দোলগুলো বৈধ ও শান্তিপূর্ণ ছিলো। কাউকেই এটি নিয়ে আদালতে সময় কাটানো কিংবা জেলে থাকা উচিত নয়। এটা তাদের মানবিক অধিকার।