X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

আফগান নারী বিচারকরা আত্মগোপনে, অপরাধীরা রাস্তায়

ফয়সল আবদুল্লাহ
২৬ অক্টোবর ২০২১, ১৮:২৯আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২১, ১৮:৩৭

ইংরেজিতে বলে ‘আয়রনি’। বাংলা করলে দাঁড়ায়- ভাগ্যের বিদ্রুপাত্মক অথচ নির্মম পরিহাস। আফগানিস্তানে নারী বিচারকদের পরিস্থিতি দেখে এখন অনেকের মুখ ফসকে বেরিয়ে আসবে ‘হোয়াট অ্যান আয়রনি!’ কারণ কাবুলের সদর দরজার চাবি তালেবানের হাতে যেতেই নিজেদের ভবিষ্যৎ দ্রুত আঁচ করে নিয়েছিলেন দেশটির নারী বিচারকরা। তড়িঘড়ি আত্মগোপনে যান তারা। ওদিকে হাইকমান্ডের নির্দেশে জেল থেকে একে একে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীরা। বিবিসির প্রতিবেদনে জানা গেলো এ খবর।

ইতোমধ্যে ২৬ জন আফগান নারী বিচারক গ্রিসে পালাতে পেরেছেন। তাদের অনেকের সঙ্গে দেখা করেছে বিবিসি। নিরাপত্তার খাতিরে তাদের আসল নাম প্রকাশ করেনি ব্রিটিশ এ গণমাধ্যম।

‘ফোন এলো মধ্যরাতে। পিকআপ লোকেশনটা জানার পর বলা হলো, এখনই বের হতে হবে।’ এরপর আগাগোড়া কালো চাদরে নিজেকে ঢেকে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে মধ্যরাতেই বাড়ি ছেড়ে বেরে হন আফগান বিচারক সানা। দেখে মনে হবে যেন গুরুতর কোনও মামলার আসামি ফেরারি হতে যাচ্ছে।

বিবিসিকে বললেন, বাচ্চাদের ব্যাগে কিছু পোশাক, পাসপোর্ট, ফোন আর অর্থ ছিল। এর বাইরে যতটা সম্ভব ভরে নিয়েছিলেন খাবার।

‘যখন বের হই, তখনও জানি না যে আমাদের গন্তব্য কোথায়। আমাদের শুধু বলা হয়েছিল, পথে নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকি থাকতে পারে। কিন্তু পরিস্থিতির সাপেক্ষে সবই মেনে নিতেই হয়েছিল।’

নির্দিষ্ট স্থানে গাড়িতে উঠেই সানা একবার পেছন ফিরে তাকিয়েছিলেন। যে শহরে তার জন্ম, বেড়ে ওঠা ও পরিবারের শুরু সেটাকে বিদায় জানানোর মতো মানসিক অবস্থা তার ছিল না। কারণ কিছুক্ষণ পর তারা আদৌ বেঁচে থাকবেন কিনা সেটাও ছিল অনিশ্চিত।

সানাকে এভাবে তড়িঘড়ি পালাতে হলো কেন? বিবিসির সাংবাদিককে তিনি জানালেন- গত তিনমাস ধরেই প্রাণভয়ে দিন কাটাতে হয়েছিল। কারণ নারীর প্রতি সহিংসতার কারণে সানার আদালত যে লোকটাকে কারাগারে পাঠিয়েছিল, সানা শুনেছেন, সে নাকি এখন মুক্ত। তালেবান অনেক জেলের তালাই খুলে দিয়েছে। হাজার হাজার অপরাধীকে ছেড়ে দিয়েছে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। স্বভাবতই সানা ধরে নিয়েছেন, তার বিচারে কারাগারে যাওয়া লোকটা সবার আগে তাকেই খুঁজবে।

‘আমি যে আদালতে ছিলাম, সেখানে বড় মাপের অপরাধের বিচার হতো। খুন, ধর্ষণ এসবের বিচার করতে হতো আমাকে। আমার সাজাগুলোও তাই কঠিন হতো। এ কারণে ওই অপরাধীরা মুক্ত হয়েই নাকি বলতে শুরু করেছে, আমাকে পাওয়া মাত্র তারা মেরে ফেলবে।’ বললেন সানা।

গত তিন মাস তাদের কেটেছে দুঃস্বপ্নের মতো

বিবিসির অনুসন্ধানে আরও বেরিয়ে এসেছে—  এ পর্যন্ত প্রায় ২২০ জন আফগান নারী বিচারক আত্মগোপনে গেছেন। গোপন স্থান থেকেই তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, প্রতিদিনই মৃত্যুর হুমকি পাচ্ছেন তারা।

বিষয়টি নিয়ে তালেবান মুখপাত্র বিলাল করিমিকে প্রশ্ন করেছিলি বিবিসি। উত্তরে তিনি বললেন, ‘নারী বিচারকরা ভয়-ভীতি ছাড়াই দিন কাটাতে পারবেন। কেউ তাদের হুমকি দিতে পারে না। এ ধরনের অভিযোগ তদন্ত করার জন্য আমাদের স্পেশাল মিলিটারি ইউনিট আছে।’

ওদিকে সানা জানালেন, গত তিনটা মাস তার কাছে দুঃস্বপ্নের মতো লেগেছে। ‘দুই তিনদিন পরপরই আমাদের লোকেশন বদলাতে হয়েছিল। একবার সেফহাউস, একবার হোটেল- এভাবেই কেটেছে।’

আর তাই এথেন্সের পথে উড়োজাহাজ ছাড়ার পরপরই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন ওই ২৬ নারী বিচারক। যে কান্নায় মিশেছিল নতুন জীবন পাওয়ার আনন্দ ও শেকড় ছেঁড়ার যন্ত্রণা। আপাতত তাদের তৃতীয় কোনও দেশে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করতে বলা হয়েছে।

এদের মধ্যে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন বিচারক আসমা। আফগানিস্তানে বিচারক হিসেবে কাজ করেছেন ২৫ বছর। তবে এবারই প্রথমবার দেশ ছেড়ে পালাতে হয়নি তাকে। ১৯৯৬ সালে যখন তালেবানরা ক্ষমতা দখলে নিয়েছিল, তখনও তাকে পরিবারসহ সীমান্ত অতিক্রম করতে হয়েছিল।

নারীর প্রতি সহিংসতা দূরীকরণ আইনের খসড়া তৈরিতে সানার অবদান ছিল। ২০০৯ সালে যা আফগানিস্তানে আইনেও পরিণত হয়। সেই সানা তো সহজে হাল ছাড়ার পাত্রী নন। জানালেন, তার মতো অনেকে পালিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তালেবানরা তাদের ইতিহাস থেকে মুছে দিতে পারবে না। এখনকার আফগান নারীরা আগের মতো নয়। ‘এখন হয়তো আমরা ঘরে আটকা, আর অপরাধীরা বাইরে ঘুরছে। কিন্তু বিদেশে থেকে হলেও অবিচারের বিরুদ্ধে লড়ে যাবো। সঙ্গে থাকবো আফগান নারীদের।’ দৃঢ় প্রত্যয় সানার।

/এএ/
সম্পর্কিত
দালাই লামার উত্তরসূরি, চীন-ভারত সংঘাত আর একটি সোনার কৌটো
ভারতে চালু হতে চলেছে মোবাইল ভোটিং 
এক সপ্তাহে দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী পেলো থাইল্যান্ড
সর্বশেষ খবর
সমস্যা মানেই অসুখ নয়: মেডিক্যালাইজেশন কি বাংলাদেশের নতুন ব্যাধি?
সমস্যা মানেই অসুখ নয়: মেডিক্যালাইজেশন কি বাংলাদেশের নতুন ব্যাধি?
দুই ভাইয়ের বিরোধে মুরাদনগরের সেই ঘটনার ভিডিও ছড়ানো হয়: র‌্যাব
দুই ভাইয়ের বিরোধে মুরাদনগরের সেই ঘটনার ভিডিও ছড়ানো হয়: র‌্যাব
গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাবের নিশ্চয়তা চায় হামাস
গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাবের নিশ্চয়তা চায় হামাস
জুলাই আন্দোলনে নিহত ৬ সাংবাদিক: কেমন আছে তাদের পরিবার
জুলাই আন্দোলনে নিহত ৬ সাংবাদিক: কেমন আছে তাদের পরিবার
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল