X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

কিডনির বিনিময়ে বাঁচার আকুতি আফগানদের

বিদেশ ডেস্ক
১৯ এপ্রিল ২০২২, ২১:৫৯আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২২, ২২:১২

গত বছরের আগস্টে তালেবান যোদ্ধারা যখন হেরাতের দিকে অগ্রসর হয় তখন গুল মোহাম্মদ এক ভয়ানক চাপে পড়েন। খাবার ও ওষুধ কিনতে যাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলেন তারা তা পরিশোধে চাপ দিতে থাকে। কঠিন সেই সময়ে গুল মোহাম্মদ এবং তার স্ত্রী হাতে থাকা ‘একমাত্র বিকল্প’ বেছে নেন।

১৫ বছর বয়সী ছেলে খলিল আহমেদকে কাছের একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। কেন নিয়ে যাচ্ছেন তা ছেলেকে বলেননি তারা। গুল মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা যদি তাকে আগে বলতাম, তাহলে হয়তো সে রাজি হতো না।’

ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা শিশুটিকে অজ্ঞান করেন। তারপর কিডনি অপসারণ করে নেন। তার বাবা-মা সেটি সাড়ে চার হাজার মার্কিন ডলারে বিক্রি করে দেন। এই অর্থ দিয়ে তারা তাদের ঋণ পরিশোধ করেন।

টিকে থাকার মরিয়া চেষ্টা

নজিরবিহীন সংকটে পড়া আফগান নাগরিকদের টিকে থাকতে বেপরোয়া পদক্ষেপ নেওয়ার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। মার্কিন সমর্থিত সরকার উৎখাত করে তালেবানের ক্ষমতা দখল এবং পরের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে এই সংকট দেখা দিয়েছে।

দেশটির তিন কোটি ৯০ লাখ জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের বেশি মানুষ বর্তমানে মারাত্মক ক্ষুধায় ভুগছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এছাড়া দেশটির ৯৫ শতাংশ মানুষের কাছে যথেষ্ট খাবার নেই। তালেবান ক্ষমতা দখলের পর ময়দা ও তেলের মতো মৌলিক খাদ্য পণ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জব্দ, নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং বেশিরভাগ ত্রাণ বন্ধ করে দেওয়ায় দেশটির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে।

কিডনি বিক্রিতে আগ্রহীদের জন্য হেরাতের দুটি অবৈধ হাসপাতাল গোপন এই ব্যবসা পরিচালনা করছে। প্রতিমাসে এই হাসপাতাল দুটিতে গড়ে ১৫-২০টি অস্ত্রোপচার হচ্ছে। আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসছেন। কর্মকর্তারা চোখ বন্ধ করে রেখেছেন। বেশিরভাগ দেশে অঙ্গ কেনাবেচা অবৈধ। কিন্তু বহু আফগান নাগরিক এটাকে ‌‌‘ব্যবসা’ বানিয়ে ফেলেছেন।

হেরাতের এক হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘বিগত ছয় মাসে কিডনি প্রতিস্থাপনের আবেদন সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়েছে।’ হাসপাতালে বর্তমানে থাকা ১৩ রোগীর ১২ জনই অন্য প্রদেশ থেকে গেছেন। আর তাদের সবাই অঙ্গ দেওয়ার বদলে অর্থ নিয়েছেন। ওই পরিচালক বলেন, ‘অর্থ লেনদেনে কর্মীদের জড়িত থাকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অস্ত্রোপচারের জন্য ৪ হাজার ৬০০ ডলার চার্জ নিচ্ছে আর ১ হাজার ৫০০ ডলার লাগছে ওষুধে।’

কিডনি বিক্রেতা খুঁজে পাওয়া কঠিন নয়। হেরাত ও অন্য শহরগুলোর দেয়ালে অঙ্গ বিক্রি করতে চাওয়া ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপণে ভরপুর। দালালরা ক্রেতাদের সঙ্গে বিক্রেতার যোগাযোগ ঘটিয়ে দিতে নিজেদের বিজনেস কার্ড বিতরণ করে থাকে।

কোনও বাবাই সন্তানের কিডনি বিক্রি করতে চায় না

গুল মোহাম্মদ ছেলের কিডনি বিক্রি করতে ক্রেতা খুঁজে পান এক আত্মীয়ের মাধ্যমে। দীর্ঘ দিন নির্মাণ কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। কাজ না পাওয়ায় দোকানদারের কাছ থেকে বাকিতে খাবার কেনেন তিনি। স্ত্রী ও ১২ সন্তানের ভরণপোষণের জন্য প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ঋণও করতে হয় তাকে।

তালেবান যখন হেরাত আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন প্রতিদিনই পাওনাদাররা তার বাড়িতে আসতে থাকে। গুল মোহাম্মদ জানান, একবার এক দল লোক চকলেটের লোভ দেখিয়ে তার দুই বছরের ছেলেকে গাড়িতে তুলে নেয়, পরে তাকে ছেড়ে দেয়। তারা গুল মোহাম্মদকে বলে অর্থ পরিশোধ না করলে পরের বার ছেলেকেই নিয়ে যাবে।

গুল মোহাম্মদ এবং তার স্ত্রী সিদ্ধান্ত নেন সন্তানকে চিরতরে না হারিয়ে একটা অঙ্গ বিক্রি করা যেতে পারে। তাদের নিজেদের কেউই কিডনি বিক্রির উপযুক্ত ছিলেন না। গুল মোহাম্মদের নিজের কিডনিতে পাথর রয়েছে আর স্ত্রীর রয়েছে ডায়াবেটিস। তাদের সবচেয়ে বড় ছেলে প্লাস্টিক কুড়িয়ে প্রতিদিন প্রায় তিন ডলার আয় করে, ফলে তাকে বাদ রাখা হয়। পরে দ্বিতীয় ছেলে খলিল আহমেদ কিডনি বিক্রির জন্য উপযুক্ত বলে সিদ্ধান্ত নেন তারা।

গুল মোহাম্মদ বলেন, ‘যে রাতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সেদিন অনেক কেঁদেছি। এটাই শেষ উপায় ছিল। দুনিয়ার কোনও বাবাই সন্তানের কিডনি বিক্রি করতে চায় না।’

খলিলের কিডনির জন্য ক্রেতা মোট সাড়ে চার হাজার ডলারের প্রস্তাব দেয়। গুল মোহাম্মদ নিজে ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সাহস করতে পারেননি। এর বদলে ছেলের চাচাকে সঙ্গে পাঠান। খলিল জানায়, সার্জারির পর থেকে ব্যথা আছে আর বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে পারছে না।

বাবা-মায়ের মাটির ঘরের বারান্দায় বসে খলিল বলে, ‘অপারেশনের পর আমি দুর্বল হয়ে গেছি। হাঁটতে কিংবা দৌড়াতে পারি না।’

হেরাতে বাস্তুচ্যুতরা

দায় নিচ্ছে না তালেবান

তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ হেরাতের কিডনি ব্যবসার জন্য ‘আন্তর্জাতিক পাচারকারীদের’ দায়ী করেন। এই ব্যবসা থামাতে তালেবান সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে তিনি স্বীকার করেন, মানুষ মরিয়া হয়ে অঙ্গ বিক্রি করছেন।

জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘আমাদের জনগণের বিপুল সমস্যা রয়েছে। সরকারের একার পক্ষে সবকিছুর সমাধান সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত।’

হারিয়ে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি

আফগানিস্তানের বহু মানুষ তাদের সারা জীবন দারিদ্রের মধ্যে কাটিয়ে দেন। তালেবানের আমলে তা আরও বেড়েছে। কাবুলে অবস্থানরত ত্রাণ সংস্থা ডেনিশ রিফিউজি কাউন্সিলের মহাসচিব শার্লট স্লেন্ট বলেন, ‘মধ্যবিত্ত শ্রেণি হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ছে, আগে যাদের সাহায্য দরকার পড়ত না, এখন তাদেরও দরকার হচ্ছে।’

কিডনি বিক্রি করা বহু আফগান নাগরিক ঋণের বোঝার নিচে চাপা পড়েছেন। এ থেকে বের হওয়ার কোনও উপায় নেই তাদের সামনে। কিডনি বিক্রি হচ্ছে হাজার হাজার ডলারে। কিন্তু মানুষকে বাঁচতে হচ্ছে একটি কিডনি নিয়ে।

কয়েক দশক ধরে আবদুল সালাম মাঝারি আকারের ব্যবসা পরিচালনা করেন। ইরান থেকে তেল ও খাবার আমদানি করেন, আবার সরকারের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক কাজও করতেন। গত বছরের আগস্টে সরকারের পতন হলে সালামের ব্যাপক পরিমাণ অর্থ আটকে যায়। ব্যবসায়ে ধস নামে আর সরবরাহকারীদের কাছে দেনা হয়ে পড়েন প্রায় ৬০ লাখ ডলার। সব গাড়ি এবং সম্পত্তি বিক্রি করেও আফগানিস্তানে তার ঋণ দাঁড়ায় ৭০ হাজার ডলার। আর ইরানের ব্যবসায়ীদের তার দেনা আরও তিন লাখ ডলার।

প্রতি রাতে প্রায় ৫০ হাজার আফগানি (প্রায় ৫৭৫ ডলার) খরচে অভ্যস্ত থাকা আবদুল সালাম বলেন, ‘তালেবান আমাকে বলেছে তুমি ধনী, তোমার কাছে যারা অর্থ পাবে তাদের পরিশোধ করার অর্থ বের করো। কিন্তু এখন আমার ঘরেই ৫০ হাজার আফগানি নেই।’

সালাম জানান, তালেবানের অধীনে তিনি কাজ পাচ্ছেন না। পুরনো পশ্চিমা সমর্থিত সরকারের সঙ্গে কাজ করায় একবার মহাসড়কে তাকে অপহরণ করা হয়। শাস্তি হিসেবে ঘাড় ও শরীরে গরম লোহার ছ্যাঁকা দেওয়া হয়।

সম্প্রতি সালাম দুই সম্ভাব্য কিডনি ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তার লক্ষ্য, যথেষ্ট অর্থ পেলে স্ত্রীকে নিয়ে আফগানিস্তান ছেড়ে যাবেন। বারবার ভেবেও অন্য কোনও উপায় পাচ্ছেন না তিনি। বলেন, ‘আমার সাহস ছিল না। কিন্তু এখন আমি তৈরি।’

নাজনীন (ডানে) পরিবারের একমাত্র উপর্জনকারী। কিন্তু দিনে আয় করেন এক ডলারের কম।

জানি পাপ, কিন্তু বাধ্য হয়েছিলাম

দরিদ্র আফগানদের জন্য মাঝারি আকারের অর্থনৈতিক ধাক্কাও অনেক বড় হয়ে আসে। পাঁচ সন্তানের মা নাজনীনের বয়স ৩০-এর কাছাকাছি। স্থানীয় পরিবারগুলোকে লন্ড্রি সেবা দিয়ে প্রতিদিন তার আয় এক ডলারেরও কম। তার আফিম আসক্ত স্বামী মোহাম্মদ কাজ করতে পারেন না। তাদের ১২ বছরের সন্তান বাক-প্রতিবন্ধী। বর্জ্য সংগ্রহ করে সেও প্রতিদিন প্রায় ৫০ সেন্ট আয় করে।

পরিবারটি ইতোমধ্যে স্থানীয় দোকানে প্রায় এক হাজার ডলার বাকি করে ফেলেছে। গত বছর মোহাম্মদের বৃদ্ধ বাবা করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়লে ওষুধের খরচ বাড়ে। শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো যায়নি। কিন্তু বেড়েছে পরিবারের ঋণ।

আফিম আসক্ত হওয়ায় নিজের কিডনি বিক্রি করতে পারেননি মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘স্ত্রীর কিডনি বিক্রি করা পাপ। কিন্তু আমরা বাধ্য হয়েছিলাম।’ স্ত্রী নাজনীনের কিডনি বিক্রি করে তাদের ঋণ শোধ হয়েছে। কিন্তু পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সেই নাজনীন এখন অপুষ্টির শিকার। তিনি বলেন, ‘সব সময় আমার মাথা ঘোরে, বমি বমি লাগে’।

কিডনি প্রতিস্থাপনের পর হেরাতের একটি পার্কে হাঁটছেন গোলাম হোসেন

বেড়েছে কিডনি সার্জারি

হেরাতের ওই হাসপাতালের পরিচালক জানান, তাদের হাসপাতালে ক্যান্সার রোগীর চেয়ে কিডনি সার্জারির পরিমাণ বেশি।

পূর্বাঞ্চলীয় নাঙ্গাহার প্রদেশ থেকে হেরাতে যান গোলাম হুসেন। চিকিৎসকরা তাকে জানায়, তার কিডনি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিক্রেতা খুঁজে পেতে তার সময় লাগে ২৫ দিন।

কিডনিদাতা সম্পর্কে গোলাম হুসেন বলেন, ‘এই ব্যক্তিকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই। নিজের ছোট্ট মুদি দোকান বিক্রি করে দেওয়ার পর কিডনি বিক্রি করতে বাধ্য হন তিনি।’

অপারেশনের পর গোলাম হুসেন তার সঙ্গে সাক্ষাতও করেন। গোলাম হুসেন বলেন, ‘আমি জানি তিনি গরীব। কিন্তু কিডনি বিক্রি করতে ব্যাপক সাহস ও ত্যাগের প্রয়োজন। আমি এখন নিজের জীবনের চাইতে তার স্বাস্থ্য নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন।’

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল অবলম্বনে

/জেজে/এএ/
সম্পর্কিত
মিয়ানমারে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত শহরে কোণঠাসা জান্তা
আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায় চীন ও ইন্দোনেশিয়া
ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২৯ মাওবাদী নিহত
সর্বশেষ খবর
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া