X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দিল্লিতে সার্কের বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করে সাসপেন্ড বাংলাদেশি

রঞ্জন বসু, দিল্লি
১৩ নভেম্বর ২০২২, ২০:৪০আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২২, ২০:৪০

সার্ক চুক্তির অধীনে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে যে সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি স্থাপিত হয়েছে, সেখানে ছাত্র আন্দোলনের জেরে একজন বাংলাদেশি গবেষককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শাস্তির খাঁড়া নেমে এসেছে আরও চার জন ভারতীয় ছাত্রছাত্রীর ওপরেও – যাদের মধ্যে দুজনকে ‘এক্সপেল’ ও দুজনকে ‘রাস্টিকেট’ করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি, যার পরিচালনা বোর্ডে সার্কভুক্ত সবগুলো দেশের প্রতিনিধিরাই আছেন, সেখানে ছাত্রছাত্রীদের বহিষ্কার করার ঘটনা এই প্রথম। এই ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা মাসিক স্টাইপেন্ড ও ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পরিবেশকে বিঘ্নিত করছেন এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদেরও অন্যায়ভাবে ঘেরাও করে রেখেছেন।

বাংলাদেশের নাগরিক যে ছাত্রটিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাসপেন্ড করেছেন, তার নাম সুদীপ্ত দাস নিলয়। তিনি সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতিতে পিএইচডি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, পিএইচডি এন্ট্রান্স পরীক্ষাতেও তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন।

সুদীপ্ত জানিয়েছেন, ‘পিএইচডি-র ছাত্র হিসেবে আমি মাত্র পঁচিশ হাজার রুপি ভাতা পেয়ে থাকি, অথচ আমার ব্যাচের ভারতীয়রা জুনিয়র রিসার্চ ফেলো স্কিমের আওতায় ৩১ থেকে ৩৫ হাজার রুপি পান। আমরা এখানে সমতা আনার দাবি জানাচ্ছিলাম বলেই অন্যায়ভাবে এই শাস্তির মুখে পড়তে  হলো।’ সাসপেন্ড হওয়া বাংলাদেশি গবেষক সুদীপ্ত দাস নিলয়

তিনি আরও বলছেন, ‘সার্ক সনদ বলছে, সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটিকে তারা একটি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। অথচ সেখানে বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের আন্তর্জাতিক মান তো দূরের কথা, ভারতীয় মানের চেয়ে অনেক কম হারে ভাতা দেওয়া হচ্ছে।’

পড়াশোনা খুব ভালবাসেন বলেই স্নাতকোত্তর স্তরের পর লোভনীয় চাকরির প্রস্তাব ছেড়ে পিএইডি করতে এসেছিলেন সুদীপ্ত – কিন্তু কর্তৃপক্ষের এই ধরনের বিমাতৃসুলভ আচরণে তিনি এখন অত্যন্ত হতাশ ও তিতিবিরক্ত।

বস্তুত সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে ভাতা ও স্টাইপেন্ড বৃদ্ধির দাবিতে ছাত্র আন্দোলন চলছে গত মাসখানেক ধরেই। পিএইচডি স্তরের ভাতা তো তবু তুলনায় কিছুটা ভালো। কিন্তু আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা বলছেন, এই ইউনিভার্সিটিতে অন্য দেশি বা বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা মাসিক মাত্র চার হাজার রুপি স্টাইপেন্ড পেয়ে থাকেন, যা দিয়ে দিল্লির চাণক্যপুরীর মতো ব্যয়বহুল এলাকায় জীবন নির্বাহ করা কার্যত অসম্ভব। আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের অনশন ধর্মঘটের খতিয়ান

এই ভাতাকে অন্তত মাসিক সাত হাজার রুপি করার দাবিতে এবং বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের ভাতাকে অন্তত ভারতীয় নাগরিকদের সমান পর্যায়ে নিয়ে আসার দাবিতে সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে গত ১৩ অক্টোবর বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন ক্রমশ তীব্র আকার নিলে কর্তৃপক্ষ দিল্লি পুলিশকে ক্যাম্পাসে তলব করে – যা সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ইতিহাসে প্রথম।

আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুতল ভবনের চতুর্থ তলার মেঝেতে অবস্থান নিয়ে ওই ফ্লোরটি কার্যত অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। পালা করে তারা চালিয়ে যাচ্ছেন অনির্দিষ্টকালের অনশন ধর্মঘটও। ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভ সমাবেশ

ছাত্রছাত্রীদের দাবিদাওয়ার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ এতোটা অনড় অবস্থান কেন নিয়েছে?

সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মুহাম্মদ আবুলাইশ। প্রফেসর আবুলাইশ টেলিফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন, ‘আপনারা জানেন আমাদের প্রতিষ্ঠানটি একটি আন্তর্জাতিক ইউনিভার্সিটি – এখানে ভাতা বা স্টাইপেন্ড নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে হয় সার্কের আটটি দেশের মধ্যে আলোচনা করেই। আমাদের গভর্নিং বডি বা জিবি-তে এই আটটি দেশের প্রতিনিধিরাই আছেন। কিন্তু কোভিড-সহ নানা কারণে গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে জিবি-র কোনও বৈঠক হতে পারেনি। শেষ বৈঠক হয়েছিল ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে, তারপর থেকে বৈঠক হয়নি বলে নানা বিষয়েই আমাদের সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রাখতে হয়েছে।’ দিল্লির চাণক্যপুরীতে সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির মূল প্রবেশদ্বার

প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত ভাইস-প্রেসিডেন্ট সেন্থিল কুমার ভেনুগোপালও দাবি করছেন, ছাত্র আন্দোলন ক্রমশ ‘লাগামছাড়া’ হয়ে উঠছিল বলেই তারা কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘দেখুন, এই ছাত্রছাত্রীরা আমাদের বিল্ডিংয়ের পুরো চারতলাটা দখল করে রেখেছেন। প্রশাসনিক কাজকর্মে তারা বাধা দিচ্ছেন, জোরে জোরে মিউজিক বাজাচ্ছেন। এই ভবনে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের যেসব অফিস আছে, তাদের কাজেকর্মে ব্যাঘাত হচ্ছে – তারা আমাদের জিজ্ঞেস করছেন, কেন আমরা এই ছাত্রছাত্রীদের সামলাতে পারছি না?’

বস্তুত সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি-র ক্যাম্পাস দিল্লির যে ‘আকবর ভবনে’ অবস্থিত, সেখানেই রয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয়। ফলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একেবারে নাকের ডগায় এই আন্তর্জাতিক ইউনিভার্সিটির অরাজক পরিস্থিতি দিল্লির জন্যও প্রবল কূটনৈতিক অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠছে।

/এমপি/
সম্পর্কিত
ভারতে দ্বিতীয় দফায় ভোটপ্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
গাজার ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারে ১৪ বছর লাগতে পারে: জাতিসংঘ
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা