X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

পালাননি, করোনা মোকাবিলার ফ্রন্ট লাইনে লড়াই করছেন ব্রিটিশ নারীরা

বিদেশ ডেস্ক
০৮ মার্চ ২০২১, ২১:০১আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২১, ২১:৫৫

ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবাকে আমূল নাড়িয়ে দেওয়া একটি বছর পার হওয়ার পর ইংল্যান্ডের ইস্ট ল্যাঙ্কাশায়ারের হাসপাতালের নারীরা করোনাভাইরাস সংকট তাদের কাছে কেমন ছিল তা নিয়ে কথা বলেছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংকটময় এমন মুহূর্তে তারা পালাননি, বরং দেশটির করোনা মোকাবিলায় ফ্রন্ট লাইনে থেকে লড়াই করেছেন তারা।

মহামারির শুরু থেকে কনসালটেন্ট নার্স শীবা ফিলিপ জানতেন প্রতিদিন শিফট শেষে বাড়িতে ভাইরাস নিয়ে যেতে পারেন। যেখানে তিনি নিজের মায়ের দেখাশোনা করেন। কিন্তু এরপরও কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ফ্রন্ট লাইনে থাকা অনেক নারীর মতোই কর্তব্য নিষ্ঠার কথা মাথায় রেখে প্রতিদিন সুরক্ষা সরঞ্জাম পরে দায়িত্ব পালন করেছেন।

শীবা ফিলিপ বলেন, আমি জানতাম প্রতিদিন নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারব না। প্রতিদিন মনে হতো বাড়িতে ভাইরাস নিয়ে যাচ্ছি। খুব কঠিন ছিল। প্রতিদিন বাড়ি যাওয়ার পথে গাড়িতে প্রার্থনা করতাম, ঈশ্বর আমাদের শরীরের সব জীবাণূ ধ্বংস করে দিন। এরপর ঘরে পা রাখতাম।

করোনা প্রথম ঢেউ চলে যায়। কিন্তু ডায়ালাইসিসে থাকা ফিলিপের মা ও পুরো পরিবার নভেম্বরে করোনায় আক্রান্ত হন।  

তিনি বলেন, একজন নার্স হিসেবে কী করা দরকার তা জানা ছিল। মনে হচ্ছিল মায়ের সময় ফুরিয়ে আসছে, এবার আর সুস্থ হবেন না। কিন্তু একই সময়ে মেয়ে হিসেবে আমি তাকে ছাড়তে চাইছিলাম না। আমি চিৎকার করে বলতে চেয়েছিলাম চলে যেও না।

নর্থ ওয়েস্ট অ্যাম্বুলেন্স সেবার ৩৬ বছরের ম্যাক্সিন শার্পলেস শিফটের পর শিফট করোনা রোগীদের বহন করেছেন। অনেক রোগীকে তিনি বহন করেছেন যারা আর পরিবারের কাছে ফিরে আসেনি। তিনি বলেন, বাড়িতে পৌঁছার পরপরই দরজা বন্ধ করে দিতাম। হয়ে যেতাম মা ও স্ত্রী। আবার কাজে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমাকে এই ভূমিকায় থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি এনএইচএস-র কর্মরত অনেকেরই এমন মন পাল্টে ফেলার সামর্থ রয়েছৈ। আমি মনে করি না এমন সামর্থ্য নিয়ে জন্ম হয়েছে আপনার। এটি শিখে নিতে হয় এবং হয়ত কিছুটা কঠিনও। কিন্তু এটি করতেই হয়।

ইস্ট ল্যাঙ্কাশায়ার হসপিটাল ট্রাস্টের এমার্জেন্সি মেডিসিনের কনসালটেন্ট ও ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর ড. জর্জিনা রবার্টসন জানান, বছরটি ছিল তার কর্মজীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়। ৪৬ বছরের এই নারীর ভাষায়, রোগীর সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ, তারা ছিল ভয়াবহ অসুস্থ। একই সময়ে আমাদের কর্মী সংকটে পড়তে হয়েছে। এমন স্বল্পতা আগে কখনও আমাদের দেখা দেয়নি।

 রবার্টসন বলেন, তাই খুব কঠিন ছিল। অবশ্যই বাড়িতে বিষয়টি ছিল আরও কঠিন। আমাদের তিনটি সন্তান রয়েছে। তাদের স্কুল দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ এবং নিয়মিত অভ্যস্ত জীবন তারা যাপন করতে পারছিল না।

গত ১২ মাসের কথা তুলে ধরে তিনি জানান, সাধারণত তিনি নিজেকে আবেগপ্রবণ হতে দেন না। বিশেষ করে তার অধীনে যেসব কর্মীরা রয়েছে তাদের সামনে। বলেন, কিন্তু আমরা সবাই মানুষ এবং সময়টি ছিল ভীষণ কঠিন। তাই মাঝে মাঝে টিমের মানবিক দিক দেখাতে পারা টিমকে সহযোগিতা করে। এতে সবাই বুজতে পারে শুধু তিনিই আক্রান্ত না, সবাই এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তারা অসাধারণ। যা দেওয়া হোক না কেন প্রতিদিন তারা কাজ করে গেছে।

৩০ বছর ধরে নার্সিং পেশায় রয়েছেন ৫৩ বছর বয়সী ক্রিটিক্যাল কেয়ার নার্স জ্যাকুই জোসেলিন। কর্মজীবনের বিশ বছর কেটেছে ইস্ট ল্যাঙ্কাশায়ার হসপিটালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে। মহামারির একটি বছর রোগীর পাশে থাকতে পরিবারের সদস্যদের অনুমতি না থাকলেও শেষ সময়ে তিনি ছিলেন। তার বাবাও ভর্তি হয়েছিলেন একই ওয়ার্ডে।  

তিনি বলেন, তিন সপ্তাহ ছিলেন বাবা। সত্যি বলতে কী তিনি বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করেছেন। তিনি ছিলেন খুব ভালো শিক্ষক। সব কর্মীরা তাকে পছন্দ করেছে। আমি মনে করি না, আমার বাবা হওয়ার জন্য এমনটি হয়েছে। তারা নিজেদের মতো তাকে বিশেষ অনুভূতি জন্ম দিয়েছে যাতে করে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তিনি একটি লড়াইয়ে হেরে যান এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

জোসেলিনের ১৯ বছর বয়সী মেয়ে রুবি জোসেলিন মহামারিতে মাকে দেখে নার্সিং অধ্যয়ন শুরু করেন। নানার প্রতি আইসিইউকর্মীদের আচরণ তাকে উদ্বুদ্ধ করেছে মায়ের মতোই ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট বেছে নিতে।

রুবি বলেন, যখন আমি ডিসেম্বরে অধ্যয়ন শুরু করি তখন আমি ছিলাম খুব ব্যস্ত। সেখানে যারা কাজ করছিলেন তারা ছিলেন আমার মা ও বাবার বয়সী। তাদের সন্তানরা আমার বয়সী। আমার এটি বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছে। এটিই আমাকে পালানোর বদলে তাদের সহযোগিতা করতে বদ্ধ পরিকর করেছে।

নিজেকে মাকে শক্ত মনের নার্স হিসেবে উল্লেখ করলেও মহামারি সবকিছু কেড়ে নিয়েছে ববেল জানান রুবি। বলেন, আমি মনে করি মহামারি তাকে ভাঙতে পারেনি। কিন্তু এটি তার সাহসিকতার একটি স্তর ভেঙে দিয়েছে।  

রুবি বলেন, প্রত্যক্ষভাবে মহামারি মোকাবিলায় থাকা, একজন রোগীর মেয়ে হওয়া, বাবাকে যেমন দেখতে চেয়েছিলেন তেমনটি দেখতে পারার মধ্য দিয়ে আমার মনে হয় এই কঠিন সময় তাকে কিছুটা সাহসও দিয়েছে।

/এএ/
সম্পর্কিত
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
ব্রিটেনের সর্বপ্রথম ক‌নিষ্ঠ কাউন্সিলর বাংলাদেশি ইসমাইল
সর্বশেষ খবর
বজ্রাঘাতে ৮ জেলায় ১০ জনের মৃত্যু
বজ্রাঘাতে ৮ জেলায় ১০ জনের মৃত্যু
ভিত্তিপ্রস্তরের ১৪ বছর পর চট্টগ্রাম নগর ভবন নির্মাণকাজের উদ্বোধন
ভিত্তিপ্রস্তরের ১৪ বছর পর চট্টগ্রাম নগর ভবন নির্মাণকাজের উদ্বোধন
লোকসভা নির্বাচন: তৃতীয় ধাপের ভোটে হেভিওয়েট প্রার্থী যারা
লোকসভা নির্বাচন: তৃতীয় ধাপের ভোটে হেভিওয়েট প্রার্থী যারা
পুরান ঢাকার অলিগলিতে গ্যাসের গন্ধ
পুরান ঢাকার অলিগলিতে গ্যাসের গন্ধ
সর্বাধিক পঠিত
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র