ইউক্রেন ও রাশিয়াপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লড়াইয়ের প্রায় আট বছর হতে চললো। ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলের সীমান্তে ৫০ মিটার দূরত্বে রুশ সেনারা অবস্থান করছে। অনেক সময় রুশদের গলার আওয়াজও পাচ্ছেন ইউক্রেনের সেনারা। প্রতি দিনই রুশ সেনারা গুলি ছুড়ছে বলে অভিযোগ ইউক্রেনীয় সেনাদের।
ইউক্রেন সেনাবাহিনীর একজন সিনিয়র লেফটেন্যান্ট মিশা নোভিতস্কির কাছে রাশিয়া যে তার দেশ দখল করতে পারে- এটি কোনও তাত্ত্বিক বিষয় নয়। তিনি বলেন, রুশ সেনারা যখন চুলায় আগুন দেয় আমরা ধোঁয়া দেখতে পাই। প্রতিদিন তারা আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।
গত সপ্তাহে কূটনৈতিক উদ্যোগে পরও উত্তেজনা নিরসন হয়নি। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন নিয়ে নিজের চিন্তাভাবনা গোপন করেননি। তার মতে, দেশটি আধা-সায়ত্ত্বশাসিত, পূর্ণাঙ্গ কোনও দেশ নয়। ২০১৪ সালে পুতিন ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করেন। রুশ সংলগ্ন অঞ্চল ডনেতস্ক ও লুহানস্কতে প্রক্সি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অবস্থানের সুযোগ করে দেন। এখন পুতিন কী করতে চান তা অস্পষ্ট।
যেসব ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে তা ইউক্রেনের জন্য ভয়াবহ। ইউক্রেন সীমান্তে বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন করেছে বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে। স্যাটেলাইট ছবি দেখে ধারণা করা হচ্ছে, মোতায়েনকৃত রুশ সেনাদের সংখ্যা ১ লাখ ৭৫ হাজার হতে পারে। যা যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির মিত্রদের ক্ষুব্ধ করেছে। এটি আলোচনার টেবিলে সুবিধা আদায় নাকি দখল অভিযানের প্রস্তুতি- তা সম্পর্কে অস্পষ্টতা এখনও কাটেনি।
উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য পুতিন এই সময়কেই কেন বেছে নিলেন তা একটি রহস্য। একটি ধারণা হলো, তিনি বুজতে পারছেন ইউক্রেন মস্কো বলয় থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
ইউক্রেনীয় লেফটেন্যান্ট নোভিতস্কি বলেন, রাশিয়া সৌভিয়েতের অতীতে এখনও পড়ে আছে। ইউক্রেন অন্য পথে হাঁটছে, পশ্চিম ও ইউরোপের দিকে। আমরা একটি স্বাধীন দেশ।
তিনি আরও বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মানুষ এক না। যেমন এক না কালো ও সাদা।
এই সপ্তাহের শুরুতে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেকসি রেজনিকভ নোভিতস্কি সীমান্তের যে ফ্রন্টে আছেন সেটি পরিদর্শন করেছেন। এখান থেকে দক্ষিণ দিকে কিছু দূরে ডনেতস্ক অবস্থিত। ২০১৪ সাল থেকেই অঞ্চলটি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে।
রেজনিকভ আশঙ্কা করছেন, মস্কো হামলা চালালে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ হতে পারে, উভয়পক্ষে বড় ধরনের হতাহত দেখা দিতে পারে। আপাতত কেউ জানে না পুতিনের ট্যাংক অগ্রসর হবে কিনা।
অপর এক লেফটেন্যান্ট আলেক্সান্ডার টাইমোশুক বলেন, এই সংঘাতের ধরন দেখে মনে হয় চিরাচরিত যুদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে তা একুশ শতকের। অতীতের তুলনায় আমাদের এখন ভালো অস্ত্র রয়েছে।
ইউক্রেনের ফ্রন্ট লাইনে মোতায়েন সেনারা রাশিয়ার দখল অভিযানের হুমকি নিয়ে আতঙ্কিত না। তাদের দাবি, কিয়েভের সেনাবাহিনী শক্তিশালী, বেশি অভিজ্ঞ এবং ৮ বছর আগের তুলনায় ভালো অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে।
স্থানীয় মেয়র ভিটালি বারাবাশ জানান, রাশিয়া হামলা চালালে ৩ লাখ সাবেক সেনা অস্ত্র হাতে তুলে নেবে। তার মতে, ইতোমধ্যে অনেক রক্ত ঝরেছে। আমরা রাশিয়ার ফিরে যেতে চাই না। কেউ পুতিনের দাস হতে চায় না। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান