রাশিয়ায় আলুর দাম আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছে। ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে দেশটির দরিদ্র জনগণের। খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির এই প্রবণতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক নীতিতে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে।
মস্কোর কাছের একটি খামারে ভারত থেকে আসা নতুন অতিথি শ্রমিকরা আলু ও বাঁধাকপি রোপণ করছেন। অথচ এই কাজটিও নজরে রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশ্লেষকেরা। কারণ, তাদের সুদের হার নির্ধারণী বোর্ড মিটিংয়ে এসব তথ্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি মাপার ঝুড়িতে খাদ্যের অংশ মাত্র ১৪ শতাংশ। অথচ রাশিয়ায় এই হার প্রায় ৪০ শতাংশ। ফলে আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সুদের হার উচ্চ রাখার বড় কারণ হয়ে উঠেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ৬ জুন সুদের হার কমিয়ে ২০ শতাংশ করেছে। তবে সেটিও ২০০৩ সালের পর সর্বোচ্চ হারগুলোর মধ্যে একটি। এর পরও সাধারণ মানুষের মধ্যে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ কমছে না।
গত বছরের তুলনায় আলুর দাম তিনগুণ বেড়েছে। কারণ গত বছর ফসল ১২ শতাংশ কম হয়েছিল।
৬৭ বছর বয়সী পেনশনভোগী তামারা মস্কোর পাইত্রোচকা ডিসকাউন্ট দোকানের বাইরে বলেন, এটা পাগলামি। আলু তো সব সময় সস্তা ছিল। এখনকার দামে আমি কিনতে পারছি না, খুব কম মানুষই কিনতে পারবে।
সুদের হার কমানোর পর এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এলভিরা নাবিউলিনা বলেন, মানুষ প্রতিদিন স্মার্টফোন বা টিভি কিনছে না, কিনছে খাবার। আর যদি খাবারের দাম দ্রুত বাড়ে, তাহলে তা উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির শঙ্কা তৈরি করে।
থিংক ট্যাংক রমির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এপ্রিল মাসে রাশিয়ার পরিবারগুলো তাদের আয়ের প্রায় ৩৫ শতাংশ ব্যয় করেছে খাবারে, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং গত বছরের এপ্রিলের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি।
মস্কোর পাইত্রোচকা দোকানে পুরোনো আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮৪ রুবলে ($১.০৬), আর নতুন আলুর দাম ১২০ রুবল ($১.৫৩)। অথচ গত বছর একই সময় গড় দাম ছিল ৪৩ রুবল। এমনকি ব্রিটেনের বৃহত্তম সুপারমার্কেট টেস্কোতেও আলুর দাম এর চেয়ে কম ($০.৯২)।
পেঁয়াজ, বাঁধাকপি, বিট, গাজর—বোরশ্চ স্যুপের উপাদানগুলোর দামও বেড়েছে। এই স্যুপটি পূর্ব ইউরোপজুড়ে জনপ্রিয় এবং খাদ্যপণ্যের মুদ্রাস্ফীতি বোঝার অন্যতম সূচক।
এমন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়নের দাবি ও রফতানিতে অগ্রগতির গল্প কিছুটা ফিকে হয়ে যাচ্ছে। এর আগে এ বছর মাখন ও ডিমের দামেও বড় ধরনের বাড়তি দেখা গেছে।
সরকার আমদানিতে জোর দিয়েছে। মিসর থেকে আলুর আমদানি তিন গুণ বাড়ানো হয়েছে। রাশিয়ার প্রধান বিকল্প সরবরাহকারী বেলারুশ জানিয়েছে তাদের নিজস্ব মজুত শেষ হয়ে গেছে।
খামারিরা দায়ী করছেন খারাপ আবহাওয়া, যন্ত্রপাতি ও সারসহ অন্যান্য খরচ এবং উচ্চ সুদের হারকে।
সোভখোজ সেরগিয়েভস্কি খামারের প্রধান ইয়ারোস্লাভ ইভানোভ বলেন, গত বছর প্রথমে খুব ঠান্ডা ছিল, পরে খরা। ফলন খারাপ হয়েছিল, মানও ছিল গড়ের নিচে। ভালো আলু দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়, তারপর পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে।
তবে কৃষিমন্ত্রী অকসানা লুট আশাবাদী, এই বছর ফসল ভালো হবে। জুলাই থেকে দাম কমবে ও স্থিতিশীল হবে।
একটি গবেষণা সংস্থার মতে, এপ্রিল মাসে দরিদ্র জনগণের জন্য প্রকৃত মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ২০ শতাংশের বেশি, যা সরকারি মুদ্রাস্ফীতির হারের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি।
রাশিয়ায় পেনশনভোগীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ। চলতি বছরের এপ্রিলে গড় পেনশন ২৩ হাজার ৪৪৮ রুবল ($২৯৮)। প্রকৃত অর্থে পেনশনের ক্রয়ক্ষমতা গত বছর কমেছে। যদিও ২০২৫ সালের শুরু থেকে ১.৪ শতাংশ বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত রাশিয়ার সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তা ও বিরোধী অর্থনীতিবিদ সের্গেই আলেকসাশেঙ্কো বলেন, দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে পেনশনভোগী ও সরকারি কর্মচারীরা।
সূত্র: রয়টার্স