X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘শূকরের চামড়া ও বিষ্ঠায় ঢাকুন জঙ্গিদের লাশ!’

রঞ্জন বসু, দিল্লি
০৬ জানুয়ারি ২০১৬, ২১:১৪আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০১৬, ২১:২০

ভারতের মাটিতে হামলা চালাতে আসা জঙ্গিদের মৃতদেহগুতথাগত রায়লো নিয়ে কী করা উচিত?
‘রাশিয়া যেভাবে তাদের দেশে জঙ্গিদের সঙ্গে ব্যবহার করে ঠিক সেই একই দাওয়াই প্রয়োগ করা উচিত। প্রথমে দেহগুলো ভাল করে শুয়োরের চামড়ায় মুড়ে ফেলা দরকার। আর তারপর মুখটা উল্টো করে দিয়ে শুইয়ে দাফন করা উচিত, মুখটা শুয়োরের বিষ্ঠায় গুঁজে দিয়ে। ব্যাস, জান্নাতে গিয়ে হুরদের সঙ্গে মোলাকাতের আর কোনও সম্ভাবনা নেই!’
ঠিক এই ভাষাতেই ভারতকে আত্মঘাতী হামলাকারীদের সঙ্গে আচরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন তথাগত রায়। তিনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার রাজ্যপাল, অর্থাৎ ভারতের একটি শীর্ষস্থানীয় সাংবিধানিক পদে আছেন। এই পদে আসার আগে বিজেপির একজন কট্টরপন্থী নেতা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে দলের সভাপতির দায়িত্বও সামলেছেন বহুদিন। তবে রাজ্যপাল পদে বসার পরও বিতর্কিত মন্তব্য করার স্বভাব একেবারেই ছাড়েননি তথাগতবাবু।
তার আর একটা পরিচয় – তিনি খুব ঘন ঘন বাংলাদেশ যান আর তার নিজের কথা অনুযায়ী ওই দেশটায় যেতে ‘ভীষণ ভালোও বাসেন’! এই ২০১৫-তেই অন্তত তিন-তিনবার বাংলাদেশ গেছেন তথাগতবাবু – আর গত মাসেই (ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডাও দিয়ে এসেছেন। সে প্রসঙ্গে আসছি পরে।

তার যে সর্বশেষ টুইট নিয়ে এখন দেশ জুড়ে তোলপাড় চলছে, তা তিনি করেছেন উত্তর ভারতের পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতে দুঃসাহসী জঙ্গি হামলার ঠিক পর পরই। পাঠানকোটে মাত্র ছয় জঙ্গি মিলে যেভাবে একটি সামরিক বিমানঘাঁটিকে প্রায় চারদিন ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল – যে অভিযানে অন্তত সাতজন ভারতীয় সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন ও আরও ২২জন জখম হয়েছেন, তার অভিঘাতে এখনও স্তম্ভিত হয়ে আছে গোটা ভারত। আর এই পটভূমিতেই গত ৪ জানুয়ারি সোমবার বিকেলে ওই টুইট করেন তথাগতবাবু – জঙ্গিদের মোকাবিলায় তার নিজস্ব নিদান দিয়ে।

তথাগত রায়ের বিতর্কিত টুইট

যেভাবে তিনি সেখানে শুয়োরের চামড়া আর বিষ্ঠার প্রসঙ্গ এনেছেন তাতে স্পষ্ট- জঙ্গি বলতে ইসলামি তিনি জঙ্গিদের কথাই বোঝাচ্ছেন। তবে কৌশলে ইসলাম শব্দটা একবারও ব্যবহার করেননি তিনি।

মাসকয়েক আগে মুম্বাই হামলায় অভিযুক্ত ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির পরেও আর একটা সাংঘাতিক মন্তব্য করে বিতর্ক ডেকে এনেছিলেন তথাগতবাবু। মুম্বাইতে ইয়াকুবের জানাজায় হাজার হাজার লোকের ভিড় হওয়ার পর ত্রিপুরার রাজ্যপাল টুইটারে লিখেছিলেন, ‘একজন জঙ্গির জানাজায় পনেরো হাজার লোক? এই ভিড়ে ভবিষ্যতের অনেক জঙ্গি লুকিয়ে থাকতে পারে, পুলিশের ভালো করে নজরদারি চালানো উচিত!’

সেই মন্তব্যের পরও তুমুল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে – কিন্তু তথাগতবাবু যে এতটুকুও ঘাবড়াননি তা তার পাঠানকোট-পরবর্তী টুইট থেকেই পরিষ্কার। বরং আজ তিনি আবার লিখেছেন: আমার দাওয়াই পড়ার পরই আমাকে সোশ্যাল মিডিয়াতে চরম গালাগালি দেওয়া শুরু হয়েছে। এ থেকেই প্রমাণ হয় ‘এই টোটকাটা দয়া করে প্রয়োগ করবেন না – তাহলে তো এদেশে আত্মঘাতী হামলাই বন্ধ হয়ে যাবে!’

বুধবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ তিনি আবার লিখলেন, ‘জিহাদিদের মরদেহ নিয়ে যাদের এত দরদ– সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পরই দেখলাম আমাকে গালিগালাজ দেওয়া বন্ধ হয়েছে!’

ভারতে ইসলামি জঙ্গিদের দেহ এতকাল ধর্মীয় রীতি মেনেই দাফন করা হয়েছে – কিন্তু তথাগতবাবু যা বলছেন তার অর্থ মৃত্যুর পরও জঙ্গিদের সেই সম্মান প্রাপ্য নয়। ২০১২-র নভেম্বরে পুনের ইয়ারওয়াড়া জেলে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল মুম্বাইতে ২৬/১১র ঘটনায় অন্যতম হামলাকারী আজমল কাসবকে। ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্যতম জঙ্গি হামলার ঘটনায় দোষী কাসবের দেহ পাকিস্তান ফিরিয়ে নেয়নি, তাকেও পুনের জেলে দাফন করা হয়েছিল মৌলানা ডেকেই।

তবে সব সময় ভারত যে জঙ্গি বা বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের দেহ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে তা-ও নয়। বত্রিশ বছর আগে দিল্লির তিহার জেলে ফাঁসি দেওয়া হয় কাশ্মিরি জঙ্গি নেতা মকবুল বাটকে, তাকে দাফনও করা হয় জেল চত্বরেই। এর পর মকবুল বাটের পরিবার ও তার স্থাপিত সংগঠন জেকেএলএফ সেই দেহ কাশ্মিরে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বহু দাবি জানালেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাতে কর্ণপাত পর্যন্ত করেনি। কিন্তু মকবুল বাটের দেহ নিয়ে কোনও ইচ্ছাকৃত ধর্মীয় অবমাননা করা হয়েছে এমন অভিযোগ কেউই কখনও করেননি।

কিন্তু ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায় এখন যা বলছেন – তার অর্থ হল জঙ্গিদের মরদেহকেও ইসলামি রীতিতেই সর্বোচ্চ অপমান করতে হবে, যাতে তারা জান্নাতের লোভে আত্মঘাতী হামলায় ঝাঁপিয়ে পড়া থেকে নিরস্ত হয়। রাশিয়াও না কি এভাবেই জঙ্গিদের সঙ্গে ব্যবহার করে, ফলে ভারতের করলে অসুবিধা কোথায়?

প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখা ভালো, নতুন ইংরেজি বছরের শুরুতেই নিজস্ব ব্লগে তথাগতবাবু জানিয়েছেন ‘শিকড়ের টানে’ তিনি বাংলাদেশে বার বার যেতে খুব ভালোবাসেন। গত বছরেই অন্তত তিনবার গেছেন – আর ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও একান্ত আলাপচারিতা সেরে এসেছেন। জানুয়ারিতে (তখনও ত্রিপুরার রাজ্যপাল হননি, শুধুই বিজেপি নেতা) যখন ঢাকায় যান, সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ এসেছিলেন গোপনে তার সঙ্গে দেখা করতে, সে সময় সরকারের বিরুদ্ধে তুমুল আন্দোলন চালাচ্ছে বিএনপি।

পরে সেই বৈঠকের খবর জানতে পেরে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ শরণ পর্যন্ত অবাক হয়ে যান। প্রশ্ন করেন, ‘সে কি, এরশাদ সাহেব কেন গিয়েছিলেন আপনার সঙ্গে দেখা করতে?’ ব্লগে তার কোনও উত্তর দেননি তথাগতবাবু, রহস্য রেখেছেন। তবে বাংলাদেশ যেভাবে ‘অমুসলিম কবি’ রবীন্দ্রনাথকে সম্মান জানিয়েছে – শিলাইদহে তার কুঠিবাড়ি বা যশোরের দক্ষিণদিহিতে তার স্ত্রীর বসতবাড়ি সংরক্ষণ করেছে – তার প্রশংসা করতে ভোলেননি ওই ব্লগে।

এই হলেন তথাগত রায়। বাংলাদেশ-প্রেমী রাজ্যপাল, যিনি সে দেশে অমুসলিম কবির সম্মানে আপ্লুত এবং পাশাপাশি ভারতে মুসলিম জঙ্গিদের মৃত্যুর পর শুয়োরের চামড়া আর বিষ্ঠায় ঢেকে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন! 

/এএ/

সম্পর্কিত
ভারতে আজ তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ চলছে
জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থেকেও হিন্দুত্ববাদে ভরসা মোদির?
লোকসভা নির্বাচনবিজেপি ও তৃণমূলের মাথাব্যথা এখন কম ভোটার উপস্থিতি
সর্বশেষ খবর
ভারতে আজ তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ চলছে
ভারতে আজ তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ চলছে
বৃষ্টিতেই কাটলো ওয়াসার পানির সংকট
বৃষ্টিতেই কাটলো ওয়াসার পানির সংকট
টিভিতে আজকের খেলা (৭ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৭ মে, ২০২৪)
খুলনায় আড়াই ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহরে জলাবদ্ধতা
খুলনায় আড়াই ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহরে জলাবদ্ধতা
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস