X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

তৃণমূল ব্যস্ত বিজেপি মোকাবিলায়, ঘর গোছাচ্ছে সিপিএম

কলকাতা প্রতিনিধি
০৬ জানুয়ারি ২০২২, ২১:৪৫আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২২, ২১:০১

১৩ বছর আগের অস্তমিত লাল সূর্যকে জাগাতে তৎপরতা শুরু করেছে বাম বিগ্রেড। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল যখন ব্যস্ত বিজেপিকে মোকাবিলায় সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্ষমতার রাজনীতিতে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কর্তারা। আর এই রাজনৈতিক লড়াইয়ের ফিরে আসার প্রধান কাণ্ডারী হিসেবে দলের ছাত্র-যুব শক্তিকেই ভরসা করতে চাইছে সিপিএম।

লোকসভা ভোটের পর থেকে রাজ্যের রাজনীতিতে প্রধান বিরোধী শক্তি হয়ে উঠতে শুরু করে বিজেপি। তৃণমূল-বিজেপি একই শক্তি! এই স্লোগান দিয়ে বামেরা আরও কোনঠাসা হয়ে পড়ে। বিধানসভায় জোটের পরাজয় শুধু ঘটেনি, সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে এই প্রথম কোনও বাম বিধায়ক বিধানসভা যেতে পারেননি। পরে উপনির্বাচনগুলোতে বামফ্রন্টে তীব্র দ্বন্ধের কারণে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে ফের ‘একলা চলো রে’ নীতিতে ফিরে আসা তারা। দেখা যায়, তাদের ভোট শতাংশ সামান্য হলেও বেড়েছে। বিজেপির মতো বামেদেরও তিনটিতে জমানত জব্দ হয়েছে। তবে এরমধ্যেও আশার আলো দেখছে বাম শিবির। কারণ শতাংশের বিচারে গেরুয়া শিবিরে গ্রাফ যখন নিম্নমুখী তখন ঊর্ধ্বমুখী বামেদের প্রাপ্ত ভোট শতাংশ। আর তাতেই বামেদের কামব্যাকের স্বপ্ন দেখা শুরু।

এরপর কলকাতা পৌরসভা ভোটে তারা নিশ্চিহ্ন না হয়ে দু’টি ওয়ার্ড পেয়ে, বিজেপির থেকে ভোট শতাংশে এগিয়ে গেছে। এতে বছরের শেষে এসেও বামেরা কিছুটা আশার আলো দেখতে পেয়েছে। ভোটের হারে ক্ষয়িষ্ণু শক্তি হয়েও বামেরা মূলত সিপিএম সাংগঠনিক ক্ষমতার জোরে তাদের প্রার্থী দেওয়া প্রতিটি ওয়ার্ডে বুথ এজেন্ট বসাতে পেরেছিল। শুধু তাই নয়, উত্তর কলকাতা, মধ্য কলকাতা, দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন ওয়ার্ডে শাসকদলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাঠে নেমে লড়াই করেছে সিপিএমের কর্মীরা। তার ফলও পেয়েছে তারা। বিধানসভা ভোটে কলকাতা পৌরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডে বামেদের ভোট ছিল মাত্র ৪ শতাংশ। পৌরভোটে সেটাই বেড়ে হয়েছে ১২ শতাংশের কাছাকাছি। অর্থাৎ, মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে ৮ শতাংশ বৃদ্ধি, এই ভোট গেরুয়া শিবির থেকে ফিরে এসেছে বলেই মনে করছে সিপিএম। আর তাই রাজনীতিতে কামব্যাকের জন্য এটিকে কাজে লাগাতে চাইছে তারা।

সিপিএমের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিল, দলে যুবদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে না। এমন অভিযোগ খণ্ডাতে বিধানসভা নির্বাচন থেকে একাধিক ছাত্র-যুবকে প্রার্থীও করে সিপিএম। তারা হেরে গেলেও বামেরা যুবশক্তিকে সামনে আনতে চাইছে এমন বার্তা দিতে চেয়েছিল আলিমুদ্দিন। করোনার সময়ে এবং লকডাউন চলাকালীন ছাত্র-যুবদের দিয়ে রেড ভলান্টিয়ার, শ্রমজীবী বাজার ও শ্রমজীবী ক্যান্টিন চালু করা হলেও ভোটে তা প্রভাব ফেলেনি। কিন্তু তাই বলে হতাশ না হয়ে এই কর্মসূচিকে পাড়ায় পাড়ায় চালিয়ে যাচ্ছেন কমরেডরা। কিন্তু পরের উপনির্বাচনগুলো এবং কলকাতা পৌরসভা ভোটে এর প্রভাব পড়েছে। এর জন্যই শতাংশের হারে সামান্য হলেও বিজেপির থেকে এগিয়ে গিয়েছে বামেরা। সিপিএম মানুষের সঙ্গে মানুষের জন্য কাজ করে এটা বোঝাতে তারা স্লোগান তুলেছে- ‘আমরা ক্ষমতায় নেই, তবে আমরা সংকটে জনগণের সাথে আছি।’

এই মুহূর্তে জেলায় জেলায় সিপিএমের দলীয় সম্মেলন চলছে। প্রায় সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে, কমিটিতে নুতন মুখকে সামনে আনছে আলিমুদ্দিন কর্তারা। রাজ্যের ক্ষেত্রেও একইভাবে এবার নতুন মুখদের সামনে দেখা যাবে। কারণ, সিপিএম পলিটব্যুরো এবার প্রবীণদের অবসরে পাঠানোর কথা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে।

বিধানসভার ভোটের পর থেকে ধীরে ধীরে পরিকল্পনা করে এগোচ্ছেন আলিমুদ্দিনের কর্তারা। দলের সদস্যদের বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকা, শ্রমজীবী ক্যান্টিন, শ্রমজীবী রেশন এবং সবজির বাজারের আয়োজন, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা মতো বিভিন্ন সমাজসেবা মূলক কাজ করে সমাজের মূল স্রোতে মিশে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনটাই সূত্রে খবর। পাশাপাশি নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরের কৃষিজমির আন্দোলনে ব্যাকফুটে যাওয়া সিপিএম এবার শাসকদল তৃণমূলকে ঠিক একই কায়দায় চাপে ফেলতে বীরভূমে পাঁচমির কয়লা খনিবিরোধী আন্দোলনে আদিবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রের ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনবিরোধী নীতি, যেমন- জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান তৈরি না হওয়া, পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার কথায় রাজ্যজুড়ে আন্দোলন শুরু করেছে তারা।

সিপিএমের রাজ্য কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘আমরা মনে করছি বাংলার মানুষ তৃণমূল ও বিজেপির প্রতি বিরক্ত। এই দুদলের রাজনীতির মাঝখানে একটা ফাঁকা জায়গা আছে। সেটা আমরা পূরণ করতে পারলে, ফের রাজ্যে সরকার গড়তে পারবে বামফ্রন্ট।’

অপরদিকে, সিপিএমের এই উত্থানে তৃণমূলকেই দায়ী করছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির এক নেতা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের কোনও প্রচার বা কর্মসূচি হলে তা পুলিশ দিয়ে আটকানো হচ্ছে। কিন্তু সিপিএমকে ছাড় দিচ্ছে তৃণমুল সরকার।’

/এএ/
সম্পর্কিত
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য খালাস করে গেলেন যে নারী ট্রাকচালক
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা