ভারতীয় গোয়েন্দারা মনে করছেন অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণেই গ্রেফতার হয়েছেন বাংলাদেশে অর্থ জালিয়াতিতে অভিযুক্ত পি কে হালদার। তদন্তকারীরা বলছেন, পি কে ভেবেছিলেন ভাষা ও পরিবেশ এক হওয়ার কারণে পশ্চিমবঙ্গে থেকে প্রতারণার ফাঁদ চালিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু তাতে বাধ সাধলেন ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ইডির গোয়েন্দারা। বাংলাদেশ থেকে তার সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার পর এতো দ্রুত ধরা পড়ে যাবেন তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি পি কে।
স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, গ্রেফতার হওয়া পি কে হালদার ও তার সহযোগী সুকুমার মৃধার সঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার একটি রাজনৈতিক দলের একাধিক নেতা, মন্ত্রী, সাংসদদের ঘনিষ্ঠতা ছিল। তাদের সহযোগিতায় অশোকনগরসহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় সম্পত্তি গড়ে তোলে তারা। এই রাজনৈতিক সখ্যতাকে কাজে লাগিয়ে প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার পশ্চিমবঙ্গে নিজেকে শিবশঙ্কর হালদার নামে পরিচয় দিয়ে ভারতীয় নাগরিকত্ব নেয়। জালিয়াতি করে তিনি রেশন কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড, প্যান কার্ড ও আধার কার্ড করান। তার সহযোগীরাও একইভাবে জালিয়াতি করে ভারতীয় নাগরিকত্ব নেয়।
এসব ভুয়া পরিচয়পত্র কারা তৈরি করে দিয়েছে, তা নিয়েও তদন্ত শুরু করেছে ইডি। বাংলাদেশের এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ম্যানেজার পিকে হালদার ও তার সহযোগী সুকুমার মৃধার অর্থ পাচারের শিকড়ের খোঁজে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালায় ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
জানা গেছে, হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচারের জাল ছড়িয়েছে ভারতের একাধিক শহরে। তার খোঁজে দিল্লি, মুম্বাইয়েও তল্লাশি হতে পারে। ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের অশোকনগরসহ ৯ জায়গায় তল্লাশি করা হয়েছে। গোয়েন্দাদের প্রাথমিক ধারণা, শুধু পশ্চিমবঙ্গতেই তার ২০ থেকে ২২টি বাড়ি আছে। এছাড়াও দিল্লি, মুম্বাই, আমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু শহরেও তার একাধিক সম্পত্তি রয়েছে।
জানা যাচ্ছে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাবড়া অশোকনগর পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত পিকে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধা। পিকে হালদার এবং সুকুমার মৃধা প্রকৃতপক্ষে অশোকনগরের দীর্ঘদিনের প্রতিবেশি।
স্থানীয় সূত্রে খবর, সুকুমার মৃধা মূলত বাংলাদেশ থাকেন। অভিযোগ, বাংলাদেশে আত্মসাৎ হওয়া ১০ হাজার কোটি টাকার বড় অংশ সুকুমার মৃধার মাধ্যমে ভারতে নেওয়া হয়েছে। সেই অভিযোগেই শুক্রবার আশোকনগরের একাধিক স্থানে তল্লাশি চালায় ইডি। অশোকনগরে সুকুমার মৃধাসহ প্রণব হালদার ও স্বপন মিশ্রর বাড়িতে একযোগে হানা দেন ইডির কর্মকর্তারা। সুকুমার মৃধা মাছ ব্যবসার আড়ালে বাংলাদেশ থেকে ডলারের মাধ্যমে ভারতে টাকা নিয়ে আসতো বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই টাকায় বিভিন্ন এলাকায় জমি জায়গা কিনত। অশোকনগরে তার একাধিক বাড়ি ও দোকান রয়েছে।
অশোকনগরের নবজীবন পল্লীতে পিকে হালদারের সুবিশাল বিলাসবহুল বাগান বাড়ি আছে। তার পাশেই আছে সুকুমার মৃধার আরেক বিলাসবহুল বাগান বাড়ি। কলকাতার ইএম বাইপাস সংলগ্ন এলাকা, কলকাতা সংলগ্ন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অভিজাত এলাকায় একাধিক বাড়ি ও অফিস রয়েছে তাদের।
অশোকনগরে ৩টি বাড়িতে একযোগে তল্লাশি শুরু করে ইডি। যার একটিতে থাকতেন সুকুমার মৃধার মেয়ে অনিন্দিতার জামাই। তাকেও জেরা করছে ইডি। পাশাপাশি পিকে হালদারের আত্মীয় প্রণব কুমার হালদার ও তার দুই ছেলে মিঠুন হালদার ও বিশ্বজিৎ হালদারকেও জেরা শুরু করেছে ইডি। মিঠুন হালদার বিএসএফ জওয়ান হিসেবে কর্মরত। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের বেআইনি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে ঢুকেছে বলে ইডির অনুমান।