পশ্চিমবঙ্গের বরখাস্ত মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছেন, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে তিনি চেনেন না। অথচ অর্পিতা কিন্তু জেরায় বার বার সাবেক এই মন্ত্রীর সঙ্গে তার সর্ম্পকের কথা জানিয়েছেন। ফলে দুই জনের এমন পরস্পর বিরোধী মন্তব্যে পার্থ আসলে কী আড়াল করতে চাইছেন তার রহস্য উদ্ধারে ব্যস্ত তদন্তকারীরা।
সূত্র বলছে, ইডির জেরায় অর্পিতা জানিয়েছেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রীর মৃত্যুর পর তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। তার ভাষায়, ‘বয়সের পার্থক্য থাকলেও পার্থদা আমার ভালো বন্ধু।’ তবে ভিন্ন সুর শোনা গেছে পার্থর গলায়। দুই জনের মুখোমুখি জেরায় এই সর্ম্পকের কথা অস্বীকার করেছেন প্রাক্তন তৃণমূল মহাসচিব।
তিনি বলেছেন, ‘অর্পিতাকে আমি তেমনভাবে চিনি না। মাঝেমধ্যে দেখেছি। অনেকের মতো অর্পিতাও আসতো। নাকতলার পুজোর সময় দেখেছি।’
অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে রুপি উদ্ধার নিয়ে জানতে চাওয়া হলে পার্থ তদন্তকারীদের বলেছেন, ‘বাড়ি থেকে টাকা পাওয়ার খবর শুনেছি। তবে ওই টাকা আমার নয়।’
এদিকে, শুক্রবার ব্যাংকশাল আদালতে নিয়ে যাওয়ার আগে অর্পিতাকে নিয়ে আসা হয় জোকার ইএসআই হাসপাতালে। সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে আসেন তিনি। এরপরই তাকে নিয়ে ইডির কর্মকর্তারা ব্যাংকশাল আদালতের দিকে রওনা দেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘যা বলার ইডিকে বলেছি।
প্রাণ সংশয়ের ভয় থেকে কারাগারে প্রথম শ্রেণীর বন্দি হিসেবে থাকতে চান বলে জানিয়েছেন শিক্ষা দফতরের নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হওয়া অর্পিতা। শুক্রবার এই মামলায় ইডির বিশেষ আদালতে এমন আর্জি জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। এদিন আদালতের নির্দেশে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে অর্পিতাকে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, এদিন ইডির বিশেষ আদালতে মামলা চলাকালে অর্পিতার আইনজীবী বলেছেন, অর্পিতাকে প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা দেওয়া হোক। একইসঙ্গে তিনি আবেদন করেন, অর্পিতাকে যে খাবার ও পানি দেওয়া হবে, তা যেন পরীক্ষা করে দেওয়া হয়। তার নিরাপত্তা যেন বাড়ানো হয়। এই আবেদনে সম্মতি জানিয়ে ইডির আইনজীবী আদালতে বলেছেন, ‘অর্পিতার জীবন সংশয় রয়েছে। তাই তার নিরাপত্তা বাড়ানোর আবেদন গ্রহণ করা হোক।’
হাসপাতালে যেভাবে জুতো উড়ে এসেছে পার্থর দিকে তার ফলে মনে করা হচ্ছে মানুষের মধ্যে অর্পিতার বিরুদ্ধেও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারে। কারণ তার ফ্ল্যাট থেকে ৫০ কোটির মতো নগদ রুপি ও প্রচুর গয়না পাওয়া গেছে। তাই জেলে সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে থাকলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সে কারণে তার নিরাপত্তা বাড়ানোয় ইডির সায় রয়েছে।
অর্পিতা জেল হেফাজতে আগামী ১৪ দিন থাকবেন আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারে। কারা দফতর সূত্র জানিয়েছে, বাকি বন্দিদের মতোই সুযোগ সুবিধা পাবেন অর্পিতা। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সব ব্যবস্থা করা হবে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, অর্পিতার আইনজীবী আদালতে আবেদন করলেও বিচারক তার খাবার বা পানি পরীক্ষা করে দেওয়ার কোনও নির্দেশ দেননি। আদালতের তরফে সরাসরি আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারের সুপারিনটেনডেন্টকে বলা হয়েছে, অর্পিতার ‘সেফটি সিকিউরিটি’র দিকে আলাদা নজর দিতে হবে। সেই হিসেবে নির্দিষ্ট সময় পর আদালতের কাছে রিপোর্ট যাবে। ইডির কর্মকর্তারাও নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে জেরা করতে পারবেন।