প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যে হিজাব বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে দেশটির শীর্ষস্থানীয় ডিপার্টমেন্ট স্টোর ডেবেনহ্যামস। মুসলিম নারীদের কেনাকাটার সুবিধার্থে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রাথমিকভাবে লন্ডনে ডেবেনহ্যামস-এর অক্সফোর্ড স্ট্রিট শাখায় হিজাব পাওয়া যাবে। পরে এ তালিকায় যুক্ত হবে বার্মিংহ্যামের বালরিং, পশ্চিম লন্ডনের শেপার্ডস বুশ এলাকার ওয়েস্টফিল্ড, ম্যানচেস্টারের ট্রাফোর্ড সেন্টার এবং লিচেস্টারের হাইক্রস শপিং সেন্টার-এর মতো শাখাগুলো।
হেডস্কার্ফ, হিজাব পিন ছাড়াও টপস, জাম্পস্যুট এবং ক্যাপের মতো অন্যান্য পোশাকও মিলবে ডেবেনহ্যামসের এ শাখাগুলোতে।
দুনিয়াজুড়ে ডেবেনহ্যামস-এর শাখাগুলোতে হিজাব বিক্রিতে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত থাকছে নারীদের রক্ষণশীল পোশাকের বিশেষায়িত ব্র্যান্ড আব। হিজাব সামগ্রীকে ‘সমসাময়িক মার্জিত পোশাক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে আব। দুবাই, কুয়েত, সৌদি আরব, বাহরাইন, ইরান, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় ডেবেনহ্যামস-এর আন্তর্জাতিক শাখাগুলোতে হিজাব বিক্রিতে সহায়তা করবে প্রতিষ্ঠানটি।
ডেবেনহ্যামস-এর ট্রেডিং ডিরেক্টর ইন্টারন্যাশনাল পদে কর্মরত রয়েছেন জেনেট হুইটহিয়ার। তিনি বলেন, ‘আমাদের পণ্যসামগ্রীর সঙ্গে উচ্চমানের এসব ফ্যাশন সামগ্রী বিক্রি হবে। এটা আন্তর্জাতিক বাজার ও স্থানীয় ক্রেতাদের কাছে আমাদের আরও বেশি প্রাসঙ্গিক করে তুলবে। ক্রেতাদের একটা বড় অংশের কাছে অফার পৌঁছে দেওয়ার জন্যই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
আব-এর প্রতিষ্ঠাতা ও ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর নাজমিন আলিম। তিনি বলেন, মার্জিত ফ্যাশন সামগ্রী হিসেবে প্রায় এক দশক আগে আমরা এটা শুরু করেছি। এর মাধ্যমে আমরা দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য আধুনিক পোশাকসামগ্রী সরবরাহ করছি। ডেবেনহ্যামস-এর সঙ্গে অংশীদারিত্ব আমাদের জন্য ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
হিজাব ব্যবহার করে মুসলিম নারীরা তাদের মাথা ও ঘাড় ঢেকে রাখেন। মুখমণ্ডল ঢেকে রাখা নিকাবের সঙ্গে এর পার্থক্য রয়েছে। ডেবেনহ্যামস-এর হিজাব বিক্রির সিদ্ধান্তের অবশ্য সমালোচনাও করছেন অনেকে। তবে অন্যরা বলছেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে এটা প্রশংসনীয়।
র্যানডলফ ইটন-হুয়ে নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘এসব সামগ্রীর জন্য তাদের (মুসলিম) নিজেদের খুচরা দোকানপাট রয়েছে। সেখানে জাতীয় পর্যায়ের একটা চেইন শপের জন্য এটা শুরু করার কি কোনও দরকার আছে?’
ইমসে নামে একজন বলেছেন, ‘এটা শুধু পোশাকসামগ্রী। প্রত্যেকেরই কিছু স্বাতন্ত্র্য থাকে। কেউ বিকিনি পরেন; কেউ আবার এটা পরেন না। আমি নিশ্চিত মুসলিম অধ্যুষিত শহরগুলোতে এটা (হিজাব) ভালো বিক্রি হবে।’
যুক্তরাজ্যের বৃহদায়তন ডিপার্টমেন্ট স্টোর হিসেবে প্রথমবারের মতো ২০১৪ সালে হিজাবসামগ্রীতে নজর দেয় জন লুইস। তবে সেটা ছিল শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম হিসেবে। জন লুইসের লন্ডন ও লিভারপুল শাখায় হেডস্কার্ফ পাওয়া যায়।
২০১৬ সালের মার্চে মুসলিম নারীদের সাঁতারের পোশাক বুরকিনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় আরেক প্রসিদ্ধ ডিপার্টমেন্ট স্টোর মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার। এর খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয় ৪৯ দশমিক ৫০ পাউন্ড।
উল্লেখ্য, বুরকিনিতে নারীদের মুখ, হাত ও পায়ের পাতা ছাড়া শরীরের অন্য সব অংশ ঢাকা থাকে। পশ্চিমা দুনিয়ায় নারীদের সাঁতারের সহজাত পোশাক বিকিনি আর মুসলিম নারীদের ব্যবহৃত বুরকা-র মিশ্রণ হচ্ছে বুরকিনি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুনিয়াজুড়ে মুসলিম নারীদের কাছে ফ্যাশনেবল বুরকিনি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ইউরোপের কয়েকটি দেশে অবশ্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিতর্কের মুখে পাবলিক স্পেসে বোরকা পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও বেলগেরিয়াতে এমন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে। ফ্রান্সেও প্রশাসনের তরফে বুরকিনি নিষিদ্ধের কথা বলা হয়েছিল। পরে অবশ্য ওই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে দেয় দেশটির সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আদালত। আদালতের রায়ে বলা হয়, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা মানুষের চলাফেরার স্বাধীনতা, বিশ্বাসের স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সূত্র: ইন্ডিপেনডেন্ট, দ্য গার্ডিয়ান।
/এমপি/আপ-এমও/
