X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিটিশ রাজনীতিতে গ্রেনফেলের উত্তাপ, থেরেসার ‘অস্তিত্বের লড়াই’ শুরু

বাধন অধিকারী ও মাহাদী হাসান
১৮ জুন ২০১৭, ১২:৫৮আপডেট : ১৮ জুন ২০১৭, ১৮:৫৪
image

গ্রেনফেল টাওয়ারের আগুনে উত্তপ্ত ব্রিটিশ রাজনীতি। এ ঘটনায় লেবার পার্টি আদায় করে নিয়েছে মানুষের সহানুভূতি। বিপরীতে ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে রূপান্তরিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ার কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। এদিকে, কনজারভেটিভ শিবিরে জোরালো হচ্ছে থেরেসাবিরোধী কণ্ঠস্বর। দলের অভ্যন্তরে তিনি নাস্তানাবুদ হয়েছেন আগাম নির্বাচন ও ব্রেক্সিট প্রশ্নে। কনজারভেটিভ মতাদর্শের ট্যাবলয়েড ডেইলি মেইল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এই ‘রাজনৈতিক অস্তিত্বের লড়াই’ শুরুর খবর জানিয়েছে। রাজনীতি বিশ্লেষকরাও গ্রেনফেলের আগুনকে থেরেসার পতনের সূচনাকাল হিসেবে দেখছেন।

থেরেসা মে আগুনের তাণ্ডবে গ্রেনফেল টাওয়ার এখন ধ্বংসস্তূপ। সবশেষ সরকারী ভাষ্যে ৫৮ জন নিখোঁজ জানিয়ে পুলিশ বলছে, তাদের কারও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই।  লন্ডনবাসী মনে করছে, থেরেসা সরকারের আবাসন মন্ত্রণালয় আগুনের ঝুঁকিজনিত নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে । পাশপাশি ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকায় ভয়াবহ ক্ষুব্ধ তারা। শুক্রবারের ন্যায়বিচারের মিছিল রূপান্তরিত হয়েছে থেরেসাবিরোধী বিক্ষোভে। শ্লোগান উঠেছে, গ্রেনফেলের ক্তে হাত ভিজে গেছে তার। দাবি উঠেছে পদত্যাগের। এক পর্যায়ে  তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন, যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে তার সরকার।

ডেইলি মেইলের অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত এক খবর থেকে জানা গেছে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী যখন গ্রেনফেলের ঘটনায় ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছেন, ততক্ষণে তার দলের অভ্যন্তরে থেরেসাবিরোধী পদক্ষেপ জোরালো হয়েছে। ডেইলি মেইল জানিয়েছে, যথাযথ পদক্ষে নিতে ব্যর্থতার দায় নিয়েও রক্ষা পাননি তিনি। দলের অভ্যন্তরে গ্রেনফেলের ভূমিকায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। উঠে আসে বৃষ্টিপ্রতিরোধী সেই বিতর্কিত ক্ল্যাডিং-এর প্রসঙ্গ। প্রশ্ন ওঠে, উঁচু ভবনের জন্য হুমকি হওয়া সত্ত্বেও কী করে তা ব্যবহার করা হলো?

আগাম নির্বাচনের সিদ্ধান্তের কারণেও আবার সমালোচিত হন থেরেসা। সমালোচিত হন ব্রেক্সিট প্রশ্নে। একটি সংবাদপত্রের জরিপকে উদ্ধৃত করে ডেইলি মেইল বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রশ্নে থেরেসার ‘যেনতেন চুক্তির চেয়ে কোনও চুক্তি না হওয়াই ভালো’ নীতির তীব্র বিরোধিতা রয়েছে রিপাবলিকান দলে। দলীয় ভোটারদের ৬৫ শতাংশই এই নীতি প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিপরীতে চ্যান্সেলর ফিলিপ হ্যামন্ডের ‘সফট ব্রেক্সিট’ নীতির সঙ্গে একমত দলের দুই-তৃতীয়াংশ। হ্যামন্ডের সঙ্গে রয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আম্বার রুড আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন-এর মতো প্রভাবশালীরাও। সবমিলে থেরেসার রাজনৈতিক পতনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে দলের ভেতর থেকেই।

গ্রেনফেলে আগুন লাগার পরদিনই আন্তর্জাতিক সংবাদামাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, এক কমিউনিটি ব্লগ ওই ভবনের সম্ভাব্য আগুনের ঝুঁকির ব্যাপারে সতর্ক করেছিল দেড় বছর আগে। জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ থাকা এক বস্তু ভবনটির সংস্কাকজে ব্যবহার করা হয়েছে।  ভবন সংস্কারে বিধি লঙ্ঘিত হওয়ারও গুঞ্জন ওঠে। ক্ষুব্ধ লন্ডনবাসী মনে করছে, থেরেসা সরকারের আবাসন মন্ত্রণালয় আগুনের ঝুঁকিজনিত নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া বাজেটে টাকা বাঁচাতে সারাদেশে ১০ হাজারেরও বেশি দমকলকর্মী কমিয়ে ফেলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মে।  বিপরীতে  প্রতিপক্ষ লেবার নেতা জেরেমি করবিন আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে বেশকিছু আবেগঘন মুহূর্ত কাটিয়েছেন। এতে রাজনৈতিকভাবে থেরেসা মে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। ডেন্ট কোড নামের একজন ব্রিটিশ বিশ্লেষক বলেন, গ্রেনফেল টাওয়ারে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা দিয়ে অবহেলা আসলে এই অঞ্চলের বঞ্চিত মানুষগুলোর প্রতি কর্তৃপক্ষের অবহেলার কথাই তুলে ধরেছে।

গ্রেনফেল টাওয়ারের ঘটনায় ন্যয়বিচারের দাবিসমন্বিত শুক্রবারের মিছিল থেকে বিক্ষোভকারীরা এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে-কে সরাসরি দায়ী করেন। সমাবেশে তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হাত গ্রেনফেল টাওয়ারের হতাহতদের রক্তে ভিজে গেছে। ‘গ্রেনফেলের জন্য ন্যয় বিচার’ ‘থেরেসা তুমি বিদায় হও’ সহ নানা শ্লোগান দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আবাসের দিকে এগিয়ে আসতে থাকেন বিক্ষুব্ধ মানুষ। এক পর্যায়ে অক্সফোর্ড সার্কাসে আয়োজিত হয় বিক্ষোভ সমাবেশ। সমাবেশ থেকে গ্রেনফেল টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী প্রথম ধাপে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের সান্তনা দিতে তাদের সঙ্গে দেখা করেননি। এমনকি উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে মে’র ব্রিফিংয়ের সময় সাংবাদিকদেরও সেখানে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। পরে তিন দফায় তিনি দুর্গতদের কাছে গিয়ে তাদের সহানুভূতি আদায়ে ব্যর্থ হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রলয়ঙ্করী ক্যাটরিনা ঝড়ে বহু হতাহত হওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে যাননি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। এজন্য তাকেও অনেক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। থেরেসা মে সেই একই ভুল করেছন বলে মনে করেন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্যাট্রিক করবার্ন। তার ধারণা এই ভুলের বড় মাশুল দিতে হবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে।

ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত নর্থ কেনসিংটনের সেন্ট ক্লিমেন্ট চার্চের জনরোষ থেকে পালিয়ে বেঁচেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত, বাসিন্দা এবং স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে রোষের শিকার হন তিনি।

/এসএ/

সম্পর্কিত
লন্ড‌নের মেয়র প‌দে হ্যাটট্রিক জ‌য়ের প‌থে সা‌দিক খান
গাজায় যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাজ্যকে পাশে চায় বাংলাদেশ
মার্কিন ও ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের ওপর ইরানের নিষেধাজ্ঞা
সর্বশেষ খবর
দুর্নীতির দায়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটারকে ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা
দুর্নীতির দায়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটারকে ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা
এসএসসি’র ফল প্রকাশের দিন ঘোষণা
এসএসসি’র ফল প্রকাশের দিন ঘোষণা
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় ৮ সেনা আহত
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় ৮ সেনা আহত
ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র
ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক