X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোদি ও বিজেপির জয়ে আরও প্রভাবশালী হবে হিন্দুত্ববাদীরা

বিদেশ ডেস্ক
২৫ মে ২০১৯, ০১:১৮আপডেট : ২৫ মে ২০১৯, ০১:২০

চির বৈরী পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতির কয়েক মাসের মাথায় দ্বিতীয় মেয়াদে আরও পাঁচ বছরের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি। তার দল বিজেপি-র নিরঙ্কুশ বিজয়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে, ভারতের বেকার তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার অক্ষমতা সত্ত্বেও মোদি তার জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন। অথচ ২০১৪ সালের নির্বাচনি প্রচারণায় তার অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল বেকারত্ব দূর করা। হাফিংটন পোস্ট ইন্ডিয়া-র এক প্রতিবেদনে মোদি-র এ বিপুল জয়ের নেপথ্য কারণ শনাক্ত করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, পুলওয়ামা হামলার বিপরীতে মোদি যে ব্যবস্থা নিয়েছেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তাছাড়া শক্তিশালী নেতা বেছে নিতে বিরোধী শিবিরের ব্যর্থতা, স্থানীয় ইংরেজি ও হিন্দি ভাষার সংবাদমাধ্যমগুলোর বেশিরভাগের ওপর বিজেপির দমন নীতি এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় দলটির ব্যাপক উপস্থিতির মধ্য দিয়ে বিজয় নিশ্চিত করতে পেরেছেন তিনি। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, বিজেপি-র জয়ের মধ্য দিয়ে ভারতে কট্টর ডানপন্থা আরও জোরালো হয়ে উঠবে।

মোদি ও বিজেপির জয়ে আরও প্রভাবশালী হবে হিন্দুত্ববাদীরা মোদি সরকারের প্রথম পাঁচ বছরের মেয়াদে অর্থনীতির গতি মন্থরই থেকে গেছে। পাশাপাশি বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশন, সংবাদমাধ্যম এমনকি রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়াসহ ভারতের অনেক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতাকে নতজানু হতে হয়েছে। এরপরও ভারতের ৯০ কোটি ভোটারের একটা বড় অংশ মনে করেছে মোদিকে আরেকবার সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। তার জয়ের মধ্য দিয়ে ইঙ্গিত মিলেছে যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প, ব্রাজিলে বলসোনারো থেকে শুরু করে ফিলিপাইনে রদ্রিগো দুয়ার্তে পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ডানপন্থী শিবিরের যে উত্থান ঘটেছে তা আরও জোরালো হয়ে উঠতে পারে।

মোদির বিজয় প্রমাণ করে, বিজেপির শক্তিশালী নির্বাচনি অবস্থান ঠেকাতে হলে কংগ্রেসসহ ভারতের বিরোধী দলগুলোকে আরও স্পষ্ট রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করতে হবে।

ওপি জিন্দাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক নৃবিজ্ঞানী ও অধ্যাপক শিব বিশ্বনাথান মনে করেন, পুতিনের নেতৃত্বে রাশিয়া এবং দুয়ার্তের নেতৃত্বে ফিলিপাইন যেভাবে চলছে সে রকম করে মোদির নেতৃত্বে ভারত ‘জনতোষণবাদী নেতার স্বেচ্ছাচারের’ মুখোমুখি হতে পারে। তিনি বলেন, ‘মোদি নিষ্ঠুর ও প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠতে যাচ্ছেন এবং একে মোকাবিলা করার মতো আমাদের কোনও সিভিল সোসাইটি নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠের গণতন্ত্র (মেজরিটারিয়ান ডেমোক্র্যাসি) হলো গণতন্ত্রের মৃত্যু। নির্বাচন তখন আর সমাধান সূত্র হতে পারে না। আমরা গণতন্ত্রের ধন্দের (ক্যারিকেচার) মধ্যে পড়ে যাই।’

ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ (মেজরিটারিয়ানিজম) এর মানে হলো হিন্দু জাতীয়তাবাদ বা হিন্দুত্ব। এটি এমন এক চিন্তাধারা যা ১৭ কোটি ভারতীয় মুসলিমকে মানতে বাধ্য করে যে তারা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক।

নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগে লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আশুতোষ মিশরা সতর্ক করেছিলেন, মোদির প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে ক্ষমতাশালীদের কাছে বার্তা পৌঁছাবে যে সংখ্যাগরিষ্ঠের রাজনীতির ধারা আরও জোরালো হয়ে উঠছে। বিশ্বজুড়ে ডানপন্থীদের উত্থানের কথা ইঙ্গিত করে তিনি বলেছিলেন, ‘ভারতে মোদির পর যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প ক্ষমতাসীন হন। এরপর পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরিতে একই চিত্র দেখা যায়।’

মিশরা-র ভাষায়, ‘ধর্ম, সংস্কৃতির দিক দিয়ে জাতীয়তাবাদের পুনরুত্থান এবং হিন্দুত্ববাদের আবির্ভাবকে ঠেকানো যাবে না। বরং অন্যদেরকে এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চলতে হবে।’

পাকিস্তান ফ্যাক্টর

পাকিস্তানের মাটিতে বিমান হামলা চালানোর আদেশ দেওয়ার মধ্য দিয়ে জাতীয়তাবাদী আবেগ উসকে দিতে সময়ক্ষেপণ করেননি মোদি। এ বিমান হামলার ঘটনা তার নির্বাচনি প্রচারণার ভিতকে মজবুত করে তুলেছিল। নির্বাচনের আগে স্যাটেলাইট বিধ্বংসী নতুন ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় মোদি সরকার। আর নির্বাচনের মাঝামাঝি পর্যায়ে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জয়েশ ই মোহাম্মদের নেতা মাসুদ আজহারকে নিরাপত্তা পরিষদে বৈশ্বিক সন্ত্রাসী ঘোষণার প্রস্তাব থেকে দীর্ঘদিনের আপত্তি প্রত্যাহার করে চীন।

মুসলিম ও সংখ্যালঘুদের আতঙ্ক

২০১৪ সালে মোদি প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর অনেক ভোটার ও বিশ্লেষক ভেবেছিলেন, মোদি ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার কালিমা মুছে উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করতে পারবেন কিনা। ওই দাঙ্গায় হাজারো মুসলমানকে হত্যা করা হয়। সে সময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মোদি। তবে তিনি তখন নিহতদের জন্য কোনও ধরনের সহানুভূতি প্রকাশ করেননি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালেও তার মুসলিমবিদ্বেষ স্পষ্ট হয়েছে। তার শাসনকালে বিভিন্ন সময়ে গরুর মাংস খাওয়া কিংবা গরু জবাইয়ের অভিযোগে গণপিটুনি দিয়ে অন্তত ৪৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে।

লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক মিশরা বলেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ, গণপিটুনি, জেনোফোবিয়া ও অসহিষ্ণুতা হলো কেবলই ফাঁকা বুলি।’ ভারতের ১৭ কোটি ২০ লাখ মুসলিমের এখন ভাবনা পরিস্থিতি আর কতোটা খারাপ হতে পারে।

দানিশ নামের এক মুসলিম তরুণ বলেন, ‘এটা জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন। মুসলিমরা ভয়ের মধ্যে আছে।’ ২০১৫ সালে গো-হত্যাকারী সন্দেহে এক গণপিটুনিতে নিহত হন দানিশের বাবা। দানিশ নিজেও সে সময়ে ওই হামলার কবলে পড়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা কি ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে চান? আপনারা কি সব মুসলিমকে মেরে ফেলবেন কিংবা দেশ থেকে বের করে দেবেন? দয়া করে আমাদের বলুন, মুসলিমদের শেষ করে দিতে আপনারা আর কোন পর্যায়ে যাবেন?’

২০১৬ সালে গো-হত্যার অভিযোগে গণপিটুনিতে নিহত হন পেহলু খান। তার প্রতিবেশি দুগ্ধ খামারী আজমত হাফিংটন পোস্ট ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘এক পেহলু খান তো মারা গেছেন। আমরা ভয়ে আছি এমন আরও ১০০ পেহলু খানকে মেরে ফেলা হতে পারে।’ আজমত নিজেও ওই হামলা থেকে কোনও রকমে প্রাণে বেঁচেছিলেন। তার ভাষায়, ‘আমরা অর্ধ জীবন যাপন করছি। আতঙ্ক নিয়ে বেঁচে থাকাটা খুব কঠিন।’

/এফইউ/এমপি/
সম্পর্কিত
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে
লোকসভা নির্বাচন: প্রথম ধাপে পশ্চিমবঙ্গের ৩ আসনে ভোট আজ
মানব ও সুপারি পাচারের অভিযোগে ভারতে শুল্ক কর্মকর্তা গ্রেফতার 
সর্বশেষ খবর
ভ্রমণ শেষে ভারত থেকে তিন দিনে ফিরলেন ১৫ হাজার পর্যটক
ভ্রমণ শেষে ভারত থেকে তিন দিনে ফিরলেন ১৫ হাজার পর্যটক
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
মার্কেসের 'আনটিল আগস্ট'
মার্কেসের 'আনটিল আগস্ট'
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন