X
বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

খাগড়াগড় বিস্ফোরণকে ব্যবহার করে তৃণমূলকে চাপে রাখতে চায় বিজেপি সরকার?

আশীষ বিশ্বাস, কলকাতা
০৩ জুন ২০১৯, ২৩:৪৩আপডেট : ০৩ জুন ২০১৯, ২৩:৪৮

খাগড়াগড় বিস্ফোরণকে ব্যবহার করে তৃণমূলকে চাপে রাখতে চায় বিজেপি সরকার? লোকসভা নির্বাচন শেষ হলেও অবসান হয়নি কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের তিক্ততা। বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণ নিয়ে চলমান তদন্তে গতি আনার নির্দেশ দিয়েছেন নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি সার্কেলে শুরু হয়েছে উদ্বেগ। হিন্দু ও মুসলমান ভোটারদের মেরুকরণ নিয়ে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে প্রবল বাদানুবাদের পর নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশের কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আরও দূরত্ব বাড়তে পারে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের খাগড়াগড়ে একটি দোতলা ভাড়া বাড়িতে বিস্ফোরণে এক নারীসহ তিনজন নিহত হয়। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বাধীন সরকারের তদন্তে এই বিস্ফোরণের জন্য গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের দিকে ইঙ্গিত করা হতে থাকলে তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে নেয় ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার কাছ থেকে ওই বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিল বাংলাদেশ ভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী জামায়াতুল মুজাহিদিন (জেএমবি) সদস্যরা। বাংলাদেশি এই ভাড়াটিয়ারা বিস্ফোরণের ছয় মাস আগে ওই বাড়িতে উঠে সেখানে বোমা, গ্রেনেড ও ছোট আগ্নেয়াস্ত্র বানাতো। বেশিরভাগ সময় বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ রাখতো আর প্রতিবেশীদের সঙ্গেও ওই ভাড়াটিয়ারা মিশতো না। গভীর রাতে ওই বাড়িতে রহস্যজনক আগন্তুকদের আনাগোনা ছিল।

প্রাথমিক তদন্ত শেষে তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, বিস্ফোরণে নিহত ব্যক্তি ও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকা কয়েকজন স্থানীয়ের সঙ্গে ওই এলাকার তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। ওই নেতা তাদের পুলিশি সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। ওই বাড়িতে থাকা ব্যক্তিরা বিস্ফোরক তৈরির পর তা বাংলাদেশের জঙ্গিদের কাছে পাঠিয়ে দিতো। বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার জঙ্গিগোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে অভিযান জোরালো করলে তাদের অনেক সদস্যই বর্ধমানসহ মালদহ ও মুর্শিদাবাদের মতো বিভিন্ন সীমান্তবর্তী জেলায় আশ্রয় নেয়।

খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও পরিসংখ্যান বিনিময় হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ ও তেলেঙ্গানা থেকে এনআইএ এবং অন্যান্য পুলিশ সংস্থা মোট ৩০ জনকে গ্রেফতার করে। এই প্রক্রিয়ায় জঙ্গিদের বেশ কয়েকটি আস্তানা সক্রিয়ভাবে বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। এসব অভিযানে আটককৃতদের অনেককেই দুই দেশের পুলিশ কর্মকর্তারা যৌথভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, শুরু থেকেই এই তদন্ত প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। প্রাথমিকভাবে এনআইএ কর্মকর্তারা দাবি করেন রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারকে ভুল তথ্য দিয়েছে। পরে এই ইস্যুতে প্রকাশ্যে কথা বলা শুরু করেন এনআইএ কর্মকর্তারা। তবে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং তৃণমূলের সঙ্গে আরও বন্ধুত্বপূর্ণ সহায়তার ইঙ্গিত দিলে এনআইএ কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ করা বন্ধ করে দেন। ঘটনাচক্রে বিজেপির যে কয়েকজন নেতার সঙ্গে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাজের ভালো যোগাযোগ রয়েছে, তাদের মধ্যে রাজনাথ একজন।

তবে এখনকার পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। আগের চেয়েও বেশি সমর্থন নিয়ে গঠিত হয়েছে নতুন বিজেপি সরকার। রাজনাথ সিং এখন আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নন। নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর তিক্ত বাদানুবাদের কথা কারও অজানা নয়।

নির্বাচনি প্রচারণার সময়ে বিজেপি সরকারের কূটনৈতিক নীতি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া সমালোচনায় খানিকটা এড়িয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে ব্যতিক্রম ছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। র‍্যালির পর র‍্যালিতে মমতার সমালোচনার কড়া জবাব দিয়ে গেছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, যুক্তিসঙ্গত কারণেই অমিত শাহ এখন ওই বিস্ফোরণে বিভিন্ন তৃণমূল নেতার সংশ্লিষ্টতা এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতুল মুজাহিদিনের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা নিয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেবেন। বিজেপির পরিকল্পনা হলো তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বিস্ফোরণে সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখে প্রতিশোধ নেওয়া।

কলকাতা কেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যমগুলোর একাংশ ইঙ্গিত দিয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের ক্ষমতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লি। এর মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তা ও সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোতে দিল্লির অবস্থান কঠোর করার ইঙ্গিত মিলেছে।

সংবাদমাধ্যমগুলোর ধারণা, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এনআইএ ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশকে ডেকে নিয়ে জানতে চাওয়া হবে কেন খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে আরও বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হয়নি। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ ও ভারত—উভয় দেশের আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে পারে। আর এ ধরনের ঘটনা এতটা গুরুত্বহীনভাবে দেখা উচিত নয়।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তৃণমূলের বিরুদ্ধে কেবল সস্তা রাজনৈতিক গুটি হিসেবে ওই বিস্ফোরণের তদন্ত ব্যবহার করছে না বিজেপি। এমনকি মোদির নেতৃত্বাধীন প্রথম এনডিএ সরকারের আমলে কোনও কোনও ক্ষেত্রে তৃণমূলের অসহযোগিতার কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তা কৌশল সমন্বয় করা যায়নি। সীমান্ত নিরাপত্তা ও পাচারবিরোধী অভিযানসহ নানা বিষয় আরও ভালোভাবে কার্যকর করা যায়নি। এর কারণ হলো তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গের অবাঙালি ভোটব্যাংকের ওপর নির্ভর করে। পশ্চিমবঙ্গের এই জনগোষ্ঠীর একাংশের পাকিস্তানপন্থী মনোভাব রয়েছে। এই সংশ্লিষ্ট মানুষদের প্রতিনিধিত্বকারীরাই প্রকাশ্যে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিরোধিতা করেছে। পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে তারা একটি ‘উর্দুস্তান’ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কলকাতায় পাকিস্তানের দূতাবাস পুনরায় চালুর দাবি তোলাতেও তাদের আগ্রহ রয়েছে।

তৃণমূল সরকারের সময়ে কলকাতায় বাংলাদেশি কূটনীতিকদের উপস্থিতি খানিকটা আনুষ্ঠানিক হলেও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিশেষ সমাদর পেয়েছে পাকিস্তানের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা। অল্প সময়ের নোটিশে তারা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ নিশ্চিত করেছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, তৃণমূল সরকারকে রাজনাথ সিং যেমন খানিকটা ছেড়ে দিয়েছিলেন, অমিত শাহ হয়তো তা নাও করতে পারেন।

 

/জেজে/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে বার্সাকে কাঁদিয়ে সেমিফাইনালে পিএসজি
চ্যাম্পিয়নস লিগঅবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে বার্সাকে কাঁদিয়ে সেমিফাইনালে পিএসজি
গাজীপুরে ব্যাটারি কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে চীনা প্রকৌশলীর মৃত্যু, অগ্নিদগ্ধ ৬
গাজীপুরে ব্যাটারি কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে চীনা প্রকৌশলীর মৃত্যু, অগ্নিদগ্ধ ৬
নারিনকে ছাপিয়ে বাটলার ঝড়ে রাজস্থানের অবিশ্বাস্য জয়
নারিনকে ছাপিয়ে বাটলার ঝড়ে রাজস্থানের অবিশ্বাস্য জয়
সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু
সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
উৎসব থমকে যাচ্ছে ‘রূপান্তর’ বিতর্কে, কিন্তু কেন
উৎসব থমকে যাচ্ছে ‘রূপান্তর’ বিতর্কে, কিন্তু কেন
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়