কিরগিজস্তানের বিশকেকে চলমান এসসিও (সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন) সম্মেলনে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের শীতলতা আরও জোরালোভাবে ধরা পড়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একাধিকবার দেখা হলেও তাদের মধ্যে কথা হয়নি। একে অপরকে এড়িয়ে চলতে দেখা গেছে তাদের।
বছর দুয়েক আগেও ভারত ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্কের সমীকরণটা খানিক ভিন্ন ছিল। ২০১৭ সালের জুনে তৎকালীন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে এসসিও সম্মেলন মঞ্চে দেখা হয়েছিল নরেন্দ্র মোদির। কুশল বিনিময় হয়েছিল দু’জনের মধ্যে। শরিফের সুস্বাস্থ্য কামনা করে পরিবারের খবরাখবরও নিয়েছিলেন মোদি। এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলা,তারপর বালাকোটে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরে ভারতের বিমান হানা এবং তার পরদিন পাকিস্তানের পাল্টা আক্রমণে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে। যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। তখন থেকে দুই দেশের সম্পর্কের শীতলতা চরম মাত্রায় পৌঁছাতে থাকে। আর তার রেশ দেখা গেলো বিশকেকের এসসিও সম্মেলনেও।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন সামিটের মঞ্চে ইমরান খান ও নরেন্দ্র মোদির দেখা হলেও কথা হয়নি। বিশকেকে নৈশভোজের আসরে দেখা হলেও তাদের মধ্যে কুশল বিনিময় পর্যন্ত হয়নি। নৈশভোজের পর কনসার্টেও সামনের সারিতেই বসেছিলেন মোদি এবং ইমরান দুজনেই। তাদের মাঝে ছিলেন অন্তত সাত দেশের রাষ্ট্রপ্রধান।
বিশকেকের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান রুশ সংবাদসংস্থা স্পুটনিককে বলেন, ‘ভারত-পাক সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে। এত খারাপ আগে কখনও হয়নি। তবে আমরা আশা করছি, ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দু’দেশের সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করবেন এবং কাশ্মীর ইস্যু সমাধানের পথে এগুবেন।
সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচনে ব্যাপক জয় নিয়ে নরেন্দ্র মোদি দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরে আসার পর তার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন ইমরান খান। দক্ষিণ এশিয়ার সমৃদ্ধি,উন্নয়ন ও শান্তির জন্য একসঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। সে সময় এ অঞ্চলে শান্তি এবং সমৃদ্ধির জন্য বিশ্বাস এবং সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশ তৈরি করার আহ্বান জানান মোদি। পাকিস্তানের আলোচনার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে ভারত জানিয়ে দেয়,সন্ত্রাস ও আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না।
গত ৬ জুন ভারতীয় পররাষ্ট্র দফতরের তরফে জানানো হয়,কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে এসসিও সম্মেলনের ফাঁকে ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কোনও পরিকল্পনা নেই। এর একদিন পর মোদিকে চিঠি পাঠান ইমরান। আবারও কাশ্মিরসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে আলোচনার প্রস্তাব দেন তিনি। বলেন,দুই দেশের দারিদ্র্য দূরীকরণের একমাত্র পথ আলোচনা। পাশাপাশি আঞ্চলিক উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করাও প্রয়োজন বলে ইমরান খান চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন। তবে মোদি জানিয়ে দিয়েছেন, দুই দেশের মধ্যে নতুন করে আলোচনা শুরুর আগে পাকিস্তানকে অবশ্যই সন্ত্রাস থামাতে হবে।