X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাশ্মিরে যে বাঙালি নেতার ‘পিতৃঋণ’ শোধ করল বিজেপি

রঞ্জন বসু, দিল্লি
০৬ আগস্ট ২০১৯, ০০:৩৬আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০১৯, ১৫:২৪

বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা শ্যমা প্রসাদ মুখোপাধ্যায়

তার নাম শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। পুরো বাহান্ন বছরও বাঁচেননি, কিন্তু স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে হাতেগোনা যে কয়েকজন বাঙালি রাজনীতিবিদ সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিপুল প্রভাব রেখে যেতে পেরেছেন তিনি তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য।

তার আরও একটা পরিচয়, তিনি ছিলেন ‘জনসঙ্ঘে’র প্রতিষ্ঠাতা। এই জনসঙ্ঘই পরে ভারতের রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি নামে আত্মপ্রকাশ করেছে, যে দল আজ দেশের ক্ষমতায়। সেই হিসেবে বিজেপির শীর্ষ নেতারা সকলেই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে তাদের দলের আদি জনক হিসেবে মানেন।

কাশ্মিরের ভারতভুক্তির পর থেকেই সংবিধানের ৩৭০ ধারার কঠোর সমালোচনা করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। পার্লামেন্টে কাশ্মিরের এই বিশেষ অধিকারের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়েছেন, তারপর প্রধানমন্ত্রী নেহরুর ফরমানকে অস্বীকার করে শ্রীনগর অভিমুখে যাত্রা করে কাশ্মিরে বন্দি থাকা অবস্থাতেই প্রচণ্ড ঠান্ডায় প্রাণ দিয়েছেন।

সোমবার (৫ আগস্ট) ভারতীয় পার্লামেন্টে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ওই বিতর্কিত ধারা বিলোপ করার কথা ঘোষণার পর বিজেপি নেতাদের কথায় আর স্মৃতিচারণায় ঘুরে ফিরে আসছেন সেই শ্যামাপ্রসাদ।

রাজ্যসভায় বিজেপির এমপি ও সুপরিচিত বাঙালি চিন্তাবিদ স্বপন দাশগুপ্তর কথায়, ‘আজ বাঙালি হিসেবে আমাদের বড় গর্বের দিন। বিজেপির আদি প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রায় সাত দশক আগে যে ধারা বিলোপের দাবি জানিয়েছিলেন, তার দল সেই স্বপ্নকে অবশেষে সত্যি করল।’

বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি আরও বলছিলেন, ‘বলা হয় পিতৃঋণ আর মাতৃঋণ না কি কখনও শোধ করা যায় না। হয়তো ঠিকই, কিন্তু শ্যামাপ্রসাদ যেখানেই থাকুন, তিনিই যে আজ সবচেয়ে পরিতৃপ্ত হতেন তাতে কোনও সংশয় নেই।’

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবাদপ্রতিম উপাচার্য, শিক্ষাবিদ ও বিচারপতি আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় পুত্র ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনি নিজেও ব্যারিস্টার হয়েছেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভার সামলেছেন। অবিভক্ত বাংলায় এ কে ফজলুল হকের (শেরে বাংলা) মন্ত্রিসভায় তিনি অর্থমন্ত্রীও ছিলেন।

দেশভাগের পর জহরলাল নেহরুর প্রথম মন্ত্রিসভায় তিনি দেশের বাণিজ্য তথা শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন।

কিন্তু পণ্ডিত নেহরুর সঙ্গে মতবিরোধের জেরেই পরে কেবিনেট থেকে পদত্যাগ করেন শ্যামাপ্রসাদ। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএসের সহযোগিতা নিয়ে গঠন করেন জনসঙ্ঘ, তিনি ছিলেন সে দলের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি।

১৯৫২ সালে ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতা সংসদীয় আসন থেকে ভোটে জিতে সংসদে যান শ্যামাপ্রসাদ। কাশ্মিরে ৩৭০ ধারার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে সংসদেও তার বহু ভাষণ স্মরণীয় হয়ে আছে।

সে সময় বিখ্যাত হয়েছিল তার তোলা স্লোগান, ‘এক দেশ মে দো বিধান, দো প্রধান আর দো নিশান নেহি চলেঙ্গে।’

তখন কাশ্মিরের জন্য একটি ও বাকি দেশের জন্য আরেকটি−ভারতে এই দুটো সংবিধান চালু ছিল (‘দো বিধান’)।

কাশ্মিরে রাজ্য সরকারের প্রধানকেও বলা হতো উজির-এ-আজম বা প্রধানমন্ত্রী (‘দো প্রধান’), এবং ভারতের জাতীয় পতাকার পাশাপাশি কাশ্মিরের ছিল নিজস্ব পতাকাও (‘দো নিশান’)।

এই দু’রকমের বিধান, প্রধান আর নিশান বাতিলের দাবি নিয়েই সরকারি নির্দেশ অগ্রাহ্য করে কাশ্মিরে পা রাখেন তিনি ১৯৫৩ সালের জুনে। কিন্তু শেখ আবদুল্লার সরকার তাকে বন্দি করার পর জেলে কম্বল পর্যন্ত দেয়নি বলে অভিযোগ, যার পরিণতিতে তিনি প্রবল অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ২৩ জুন রহস্যময় এক পরিস্থিতিতে তার মৃত্যু হয়।

বর্তমানে বিজেপির একটি গবেষণামূলক শাখা প্রতিষ্ঠান ‘শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রিসার্চ ফাউন্ডেশন’।

ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও বিজেপির পলিসি রিসার্চ সেলের সদস্য অনির্বাণ গাঙ্গুলি বলছেন, ‘৩৭০ ধারার অবলুপ্তি না-হলে কাশ্মির যে কিছুতেই বাকি ভারতের সঙ্গে সম্পূর্ণ একাত্ম হতে পারবে না, সেই বাস্তবতা দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে প্রথম উপলব্ধি করেছিলেন তিনি।’

‘শুধু তা-ই নয়, নিজের কথাকে কাজে করে দেখাতে তিনি নিজের জীবন পর্যন্ত বলিদান দিয়েছেন। কাশ্মির যে ভারতেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ, সেটা প্রমাণ করেছে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আত্মোৎসর্গ–আজ সেই বলিদান পরিপূর্ণতা পেলো’, বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন তিনি।

বস্তুত, বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদের নিজের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে দল যে বহুদিন পর্যন্ত পায়ের তলায় তেমন একটা জমি খুঁজে পায়নি, এই তথ্যটা এই সেদিনও বিজেপি নেতৃত্বের প্রবল অস্বস্তির কারণ ছিল।

বিজেপির এক শীর্ষ নেতা ও কেবিনেট মন্ত্রীর কথায়, ‘আড়াই মাস আগে লোকসভা নির্বাচনের ফল বেরুনোর পর যখন দেখা গেল পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি আঠারোটি আসন পেয়েছে ও তৃণমূলের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে, সে দিন থেকেই কিন্তু আমাদের সেই অস্বস্তি দূর হওয়া শুরু।’

‘আর এদিন ৩৭০ ধারা বিলোপ করার মধ্যে দিয়ে শ্যামাপ্রসাদকে তার হাতে গড়া দল চূড়ান্ত শ্রদ্ধাঞ্জলি জানালো’, বলছিলেন বিজেপির ওই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।    

/টিএন/এমএমজে/
সম্পর্কিত
লোকসভা নির্বাচন: মণিপুরে ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষ
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে
লোকসভা নির্বাচন: প্রথম ধাপে পশ্চিমবঙ্গের ৩ আসনে ভোট আজ
সর্বশেষ খবর
টানেলে অপারেশনাল কাজে গেলে টোল দিতে হবে না জরুরি যানবাহনকে
টানেলে অপারেশনাল কাজে গেলে টোল দিতে হবে না জরুরি যানবাহনকে
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি, সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি, সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
তিন লাল কার্ডের ম্যাচে মোহামেডানের খেলতে অস্বীকৃতি, আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা
তিন লাল কার্ডের ম্যাচে মোহামেডানের খেলতে অস্বীকৃতি, আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী