ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে অঞ্চলটিকে দুই টুকরো করে দেওয়ার পর গত দুই সপ্তাহ ধরে সেখানে শত শত তরুণকে আটকের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, সেখানে কমপক্ষে চার হাজার মানুষকে বন্দি করা হয়েছে।
কাশ্মিরি রাজনীতিবিদ শেহলা রশিদ দিল্লিতে টুইট করে জানিয়েছেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা রাতে বাড়িতে বাড়িতে হানা দিয়ে তরুণদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তার ভাষায়, ‘তারা বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর করছে, খাবার ফেলে দিচ্ছে বা চালের বস্তায় তেল ঢেলে দিচ্ছে এবং শেষে বাড়ির তরুণদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি লিখেছেন, সোপিয়ানের একটি আর্মি ক্যাম্পে চারজন তরুণকে ধরে নিয়ে গিয়ে জেরা ও নির্যাতনের সময় তাদের সামনে মাইক্রোফোন ধরে রাখা হয়েছিল - যাতে তাদের চিৎকারের আওয়াজ শুনে গোটা এলাকা ভয় পায়।
10) In Shopian, 4 men were called into the Army camp and "interrogated" (tortured). A mic was kept close to them so that the entire area could hear them scream, and be terrorised. This created an environment of fear in the entire area.
— Shehla Rashid شہلا رشید (@Shehla_Rashid) August 18, 2019
সোপিয়ানের আর্মি ক্যাম্পে কাশ্মিরি তরুণদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে তার অডিও মহল্লায় শোনানোর খবর অবশ্য অস্বীকার করেছে ভারতীয় বাহিনী। আর শেহলা রশিদের বক্তব্যকে ‘গুজব’ আখ্যায়িত করে সুপ্রিম কোর্টে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দাবি করেছেন আইনজীবী অলক শ্রীবাস্তব। তার দাবি, ‘ওইসব কথিত নির্যাতনের অডিও বা ভিডিও কোথায়? কিংবা নির্যাতিতদের নাম, পরিচয় বা ঘটনা কোথায় ঘটেছে সেগুলোই বা কেন তিনি জানাতে পারছেন না?’
ঠিক দুই সপ্তাহ আগের আরেক সোমবার মোদি সরকার পার্লামেন্টে কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর থেকে সেখানে এ যাবত কতজনকে আটক করা হয়েছে, তা নিয়ে একেবারেই মুখ খুলতে রাজি নয় প্রশাসন। সরকারি মুখপাত্র নির্দিষ্টভাবে কোনও সংখ্যা জানাতে অস্বীকার করলেও এএফপি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে উদ্ধৃত করে বলছে, আটকের সংখ্যা কোনও অবস্থাতেই চার হাজারের কম নয়।
স্কুল-কলেজে তালা:
জম্মু ও কাশ্মিরে সোমবার থেকে আংশিকভাবে স্কুল খোলার কথা থাকলেও বেশিরভাগ স্কুলই এদিন খোলেনি বা খুললেও শিশুরা আসেনি। শ্রীনগর থেকে বিবিসির রিয়াজ মাসরুর এদিন জানান, ‘আজ থেকে আবার স্কুল খোলার ঘোষণা হলেও শহরে তা কার্যকর করা হয়নি।’ তিনি জানান, 'প্রথমে ঠিক হয়েছিল, ক্লাস এইট পর্যন্ত বাচ্চারা স্কুলে আসবে। পরে সেটাকে শুধু ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত বাচ্চাদের জন্য চালুর সিদ্ধান্ত হয়। তবে কারফিউ-র ভেতর বাবা-মায়েরা শেষ পর্যন্ত ছোট ছোট শিশুদের স্কুলে পাঠানোর ঝুঁকি আর নেননি।’ ফলে প্রশাসন যা-ই দাবি করুক কাশ্মিরের পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক দূরে - আর তারই মধ্যে শত শত তরুণকে আটক করা বা তুলে নেওয়ার খবর যথারীতি আরও আতঙ্ক ও উত্তেজনা ছড়িয়ে দিচ্ছে।
জামায়াত সমর্থকরাই টার্গেট?:
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মীনাক্ষি গাঙ্গুলি বিবিসিকে জানান, পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক। তার ভাষায়, ‘দেখুন ডিটেনশন তো শুধু গত দুই সপ্তাহে নয়- তার বহু আগে থেকেই হচ্ছে। ইয়াসিন মালিক কিংবা হুরিয়াতের আরও বহু নেতাকে তো অনেকদিন ধরেই আটকে রাখা হয়েছে। সরকার যদিও বলছে যে, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তারা খুব অল্প কিছু লোককে আটক করেছে, আমরা কিন্তু বলব আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, তারা এখানে তাদের দায়িত্ব পালন করছে না। এসব ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব হলো স্বচ্ছতার সঙ্গে আটককৃতদের নামের তালিকা প্রকাশ করা, যাতে পরিবারের লোকজন জানতে পারে তারা কোথায়।’
তিনি বলেন, ‘তাদেরকে আইনি সহায়তা দেওয়া দরকার, ডিটেনশনের মেয়াদ যাতে অনির্দিষ্টকাল না-হয় সেটা যেমন দেখা দরকার- তেমনি ডিটেনশন ছাড়া অন্য কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যেত কি না, সেটাও জাস্টিফাই করতে হয়। কিন্তু কাশ্মিরে ভারত সরকার কোনওটাই এখনও করেনি।
শ্রীনগরের লেখক ও গবেষক বশির আসাদ দিল্লিতে বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রচুর লোককে আটক করা হচ্ছে। মূলত নিশানা করা হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক ও ভাবধারার লোকজনকে। বস্তুত কাশ্মিরে জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল মাস দুয়েক আগেই। এখন তাদের সমর্থকদের জেলে আসা-যাওয়া লেগেই আছে।’ সূত্র: বিবিসি বাংলা।