যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট কার্যক্রম স্থগিত রাখার পরিকল্পনায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিরোধী দলীয় নেতারা ছাড়াও নিজ দলের সদস্যেরও তোপের মুখে পড়েছেন তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে েএই তথ্য জানা যায়।
ব্রিটিশ রীতি অনুযায়ী ১৪ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। জনসন চান ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সংসদের ক্ষমতা যতটা সম্ভব সীমিত রাখতে। সেই লক্ষ্যে তিনি সংসদের অধিবেশনের দিন কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। আগামী ১৪ অক্টোবর রানির ভাষণের দিন স্থির করার উদ্যোগ নিচ্ছেন জনসন। এর ফলে আগামী সপ্তাহে সংসদের অধিবেশন শুরু হলেও সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে প্রায় এক মাসের বিরতি অনিবার্য হয়ে পড়বে। ১৪ই অক্টোবরের পরেও সংসদ সদস্যদের হাতে বেশি সময় থাকবে না।
এই ঘটনায় চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাজনীতিবিদরা। প্রধান বিরোধীদল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ব্রিটেনের গণতন্ত্রকে চরম হুমকির মুখে ফেলেছেন। এছাড়া সংসদের স্পিকার জন বারকো মন্তব্য করেছেন, এই পদক্ষেপ সংবিধান লঙ্ঘনের সামিল হবে।
টরি পার্টির সাবেক চ্যান্সেলর ফিলিপ হ্যামন্ডও একে অগণতান্ত্রিক বলে উল্লেখ করেছেন। লিবারেল ডেমোক্রেট নেতা জো সুইনসন বলেন, প্রধানমন্ত্রী এমপিদের কথা বলার সুযোগে বাধা দিয়ে আসলে জনগণেরই কণ্ঠরোধ করছেন।
সবচেয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এসেছে বিরোধীদল এসএনপি নেত্রী ও স্কটল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নিকোলা স্টারজনের কাছ থেকে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী একটা স্বৈরশাসকের মত আচরণ করছেন। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক ও রুপার হকও এই ঘটনায় জনসনের বিরোধিতায় সরব ভূমিকা পালন করছেন। আগে থেকেই চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের বিরোধিতায় সরব রয়েছেন লেবার পার্টির এই দুই এমপি। প্রধানমন্ত্রীর বুধবারের ঘোষণার পর বরিস জনসনকে গণতন্ত্র বিরোধী আখ্যা দিয়েছেন তারা। বলেছেন ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে পার্লামেন্টে বিরোধিতার কোনও সুযোগ এমপিদের দিতে চান না জনসন।
জনসনের দাবি, এই দেশকে এগিয়ে নিতে সরকারের যে পরিকল্পনা তা বাস্তবায়ন শুরুর জন্য তিনি ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান না। তিনি বলেন, সরকার একটি নতুন সরকার। দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অনেক পরিকল্পনা রয়েছে, যেগুলোর জন্য প্রয়োজন নতুন আইন। ফলে রাণির ভাষণের আয়োজন করা হয়েছে ১৪ অক্টোবর, এজন্যই কয়েক সপ্তাহ সংসদ স্থগিত থাকবে এবং ব্রেক্সিটের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।
তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে। দেশজুগে চালানোর এক পিটিশনে স্বাক্ষর পড়েছে ১০ লাখেরও বেশি। বুধবার সন্ধ্যায় ওয়েস্টমিনিস্টারের সামনে ব্রেক্সিট বিরোধী প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করেন অনেকে। তারা দাবি করেন, পার্লামেন্ট স্থগিত করার সিদ্ধান্ত আসলে অস্থিরতার শুরু।
বরিস জনসন বলেন, ব্রেক্সিটের সাথে সংসদ স্থগিত রাখার কোন সম্পর্ক নেই। সরকারের সংসদীয় কার্যক্রমের স্বার্থে, জাতীয় স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। তার দাবি, ৩১ অক্টোবরের আগে ব্রেক্সিট নিয়ে আলোচনার পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাবে।