X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত পূর্ব ইউরোপ

বিদেশ ডেস্ক
০৪ নভেম্বর ২০১৯, ১৯:৪৮আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:১০

বার্লিন দেয়াল ভেঙে ফেলার ৩০ বছর পেরিয়ে গেছে। তবে পূর্ব ইউরোপের বাসিন্দারা এখনও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। সরকার ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিয়ে সন্দিহান। সংবাদমাধ্যমের ওপরও তেমন ভরসা নেই তাদের। ব্রিটিশ জরিপ সংস্থা ইউগভের নতুন এক জরিপে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। জরিপে সরকার ও সংবাদমাধ্যমের প্রতি অনাস্থার চিত্র ফুটে উঠলেও দেখা গেছে, অনেকে এখনও বিশ্বাস করেন তরুণরা রাজনীতিতে প্রভাব সৃষ্টি ও সমাজের উন্নতি করতে সক্ষম। বিশেষ করে নারীরা সামাজিক কার্যক্রমে যুক্ত হয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ব্যাপারে আশাবাদী।

গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত পূর্ব ইউরোপ

বুলগেরিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, জার্মানি, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, রোমানিয়া ও স্লোভাকিয়ার ১২ হাজার ৫০০ জনের ওপর এই জরিপ পরিচালনা করেছে  ইউগভ। তাদের মধ্যে ৫১ থেকে ৬১ শতাংশ মনে করেন গণতন্ত্র হুমকির মধ্যে রয়েছে।  বুলগেরিয়ায় অংশগ্রহণকারী চারভাগের তিনভাগ, হাঙ্গেরি ও রোমানিয়ার অর্ধেক, পোল্যান্ডের এক তৃতীয়াংশ এবং জার্মানির প্রতি পাঁচজনে একজন মনে করেন তাদের নির্বাচন সুষ্ঠু ও স্বাধীন নয়। আর জরিপ করা সাতটি দেশের মধ্যে চল্লিশোর্ধ নাগরিকদের ২৫ শতাংশেরও কম মনে করেন ১৯৮৯ সালের আগের চেয়ে এখন বিশ্ব বেশি নিরাপদ।

জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় সবগুলো দেশের নাগরিকই বলেছে তারা মূলধারার সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের সততা ও স্বচ্ছতার ওপর সন্দিহান। একইসঙ্গে সরকার কোনও নিরপেক্ষ ও সঠিক তথ্য দিচ্ছে তাও বিশ্বাস করে না তারা।  প্রায় সবগুলো দেশের নাগরিকই মনে করেন বাকস্বাধীনতা ও আন্দোলনের স্বাধীনতা হুমকির মুখে রয়েছে। হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া ও পোল্যান্ডের নাগরিকরা বিশ্বাস করেন সরকারের সমালোচনা করলে তাদের শাস্তি হতে পারে। আর প্রত্যেক দেশেরই ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ মনে করেন ন্যায়বিচার ব্যবস্থা হুমকির  মুখে রয়েছে।

বুলগেরিয়া, রোমানিয়া এবং হাঙ্গেরির বেশিরভাগ মানুষ ও স্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড, জার্মানি ও চেক প্রজাতন্ত্রের সংখ্যালঘুদের বড় একটি অংশ বিশ্বাস করে তারা যেভাবে জীবন কাটাতে চেয়েছিলো সেভাবে কাটানো কঠিন হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে তাদের ধর্ম, গোষ্ঠী কিংবা যৌন চাহিদা যাই হোক না কেন পরিস্থিতি একই। যে উদারবাদী ভাবধারা কমিউনিজমকে পরাস্থ করেছিল, এর জনপ্রিয়তায় আঘাত করে, তার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মানুষের অবিশ্বস্ততা তৈরি করে তাকে হুমকিতে ঠেলে দিয়েছিল;  সেই উদারবাদী ভাবধারাও গভীরতর আস্থার সংকটে পড়েছে। তা সত্ত্বেও ভিন্নমত ও ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করার বাস্তবতা অটুট রয়েছে।

গবেষকরা বলেন, ‘আমাদের জরিপের ফলাফল অনুযায়ী সরকার নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। এখানে সুশীল সমাজকে বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প ভাবা হয়। স্লোভাকিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র ও রোমানিয়াতে দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন পোল্যান্ডে অতি রক্ষণশীল সরকারবিরোধী আন্দোলন ও বুদাপেস্টে স্থানীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের অপ্রত্যাশিত হারের দিকে ইঙ্গিত করেন গবেষকরা।

পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে কিছু স্বৈরাচারী সরকার সুশীল সমাজের ওপর  চাপ প্রয়োগের পরও সাতটি দেশের বেশিরভাগ মানুষই দাতব্য সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গণসংস্থাগুলো সরকারি সমালোচনার পক্ষে রায় দিয়েছেন।   মাত্র ১৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী এনজিও কার্যক্রমের বিরোধিতা করেছেন। জরিপে দেখা যায়, ১৮ থেকে ২২ বছর বয়সীদের মধ্যে নাগরিক অংশগ্রহণ বেশি। এদের জেনারেশন জেড বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর ২৩ থেকে ৩৭ বছর বয়সীদের বলা হচ্ছে মিলেনিয়ালস। তারা পরিবর্তনে আশাবাদী। পরিস্থিতির উন্নয়নে তারা সক্ষম বলে মনে করেন তারা।

গবেষকরা জেনারেশন জেডকে ‘অত্যন্ত বিশেষ অগ্রদূত’ হিসেবে বিবেচনা করেছেন। তারা বলেন, ‘এই তরুণরা মন্দা-পরবর্তী যুগে জন্ম নিয়েছে এবং তাদের মধ্যে তথ্য কাঠামো পরিচালনার দারুণ সক্ষমতা দেখা যাচ্ছে। তারা আত্মবিশ্বাসী। তারা মনে করে পরিবর্তনে তার বড় ধরনের প্রভাব রাখতে পারে। এছাড়া সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাতেও তারা বদ্ধ পরিকর।‘ গবেষকরা আরও বলেন, ‘কম বয়সী নারীরা ইতিবাচক পরিবর্তনের চালিকাশক্তি।  তারা বেশি সহিষ্ণু, আগ্রহী ও পুরুষদের চেয়ে তারা লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে বেশি আশাবাদী।

১৮-২২ বছরের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী মনে করেন এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষের সুরক্ষা প্রয়োজন। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা মাত্র ৩১ শতাংশ। একইভাবে পুরুষদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি নারী মনে করেন শরণার্থী ও অভিবাসীদের সুরক্ষা দেওয়া উচিত। জেনারেশন জেড এর নারীরা মনে করেন ১৯৯০ সালের চেয়ে তাদের সুযোগ অনেক বেশি। ৩০ বছর আগের চেয়ে তারা এখন রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ বেশি পান। আর বড় পরিসরে পরিবর্তন আনার সক্ষমতাও এখন তাদের বেশি।  যেসব দেশে জরিপ চালানো হয়েছে অংশগ্রহণকারীরা সবাই বলেছেন তারা নারী, শিশু, বয়স্ক, দরিদ্র ও শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধকতার শিকারদের জন্য সরকারের আরও উদ্যোগ দেখতে চান।

/এমএইচ/বিএ/
সম্পর্কিত
ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ সামরিক উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত
রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর নিরাপত্তা জোরদার করছে কিয়েভ
যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন অ্যাসাঞ্জ
সর্বশেষ খবর
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭
কানে ডিভাইস নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্রে বোন, বাইরে থেকে উত্তর বলার অপেক্ষায় ভাই
কানে ডিভাইস নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্রে বোন, বাইরে থেকে উত্তর বলার অপেক্ষায় ভাই
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়