X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

অযোধ্যায় রাম মন্দির: বিজেপি হিন্দুত্ববাদের একাধিপত্য?

বিদেশ ডেস্ক
১০ নভেম্বর ২০১৯, ১৪:৩৭আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০১৯, ১৭:৫৭

ভারতে বাবরি মসজিদ-রাম মন্দির নিয়ে হিন্দু-মুসলমান বিরোধের আইনি নিষ্পত্তি হয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে। শনিবারের রায়ে আদালত অযোধ্যার বিতর্কিত স্থানে রাম মন্দির নির্মাণ ও বিকল্প স্থানে মুসলিমদের জমি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। রায়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সন্তুষ্ট, মুসলিমরাও রায় মেনে নিয়ে পুনর্বিবেচনার আবেদন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই রায়ের ফলে একদিকে যেমন ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বে হিন্দুত্ববাদের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে ভারত এগিয়ে গেল, তেমনি সাম্প্রতিক ভোটের রাজনীতিতে ধাক্কা খাওয়া দলটি ঘুরেও দাঁড়িয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস’র এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

অযোধ্যায় রাম মন্দির: বিজেপি হিন্দুত্ববাদের একাধিপত্য?

ঐতিহাসিক অযোধ্যা রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘এই রায়ে কোন দল জিতেছে সেটা নির্ণয় করা উচিত নয়’। তার দাবি, তিনি ও তার দলের নেতারা বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে এই রায়ের ব্যাপারে কথা বলছিলেন। ‘শুধু ক্ষমতাসীন দলের জয়’ হয়েছে সেটা বললে এই রায়কে ছোট করা হবে।

শনিবার বাবরি মসজিদ মামলার চূড়ান্ত রায়ে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত অযোধ্যার বিতর্কিত ওই ভূমিতে একটি মন্দির নির্মাণের নির্দেশনা দিয়েছেন। এর পরিবর্তে অযোধ্যার অন্য কোনও স্থানে মসজিদ নির্মাণের জন্য ৫ একর ভূমি পাবেন মুসলিমরা।

রায়ের পর বিজেপি অনেকদিন ধরেই যে দাবি তুলছিল, ‘বাবরি মসজিদের স্থানেই মন্দির বানানো হবে’ তা বাস্তবায়নের বাধা দূর হলো। ফলে এই রায়ে ক্ষমতাসীন দলের জন্য বড় বিজয় মনে করা হচ্ছে। তিন মাস আগেই কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়ে ৩৭০ ধারা বাতিল করেছিলো বিজেপি সরকার। আর এখনও তাদের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতির দ্বিতীয়টি পূরণ করছে তারা। রাম মন্দির নির্মাণ করছে। ১৯৮৪ সাল থেকেই দলটির এমপিরা এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন।

বিজেপি যখন সম্প্রতি শেষ হওয়া বিধানসভা নির্বাচনে বড় এক ধাক্কা খেয়েছে তখন এই রায় তাদের কাছে যেন স্বর্গের উপহার হয়ে এসেছে। নির্বাচনের পর বিজেপি যেসব ধাক্কা খেয়েছে একদিনের মধ্যে তা পুরাতন হয়ে গেছে। ফল ঘোষণার পর ১৬ দিন পেরিয়ে গেলেও দেবেন্দ্র প্রসাদ এখনও সরকার গঠন করতে পারেননি, এখন সেটাকে মনে হচ্ছে তুচ্ছ বিষয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়ার মতো। বিজেপি জানিয়েছে , তারা সবকিছু ঠিক করে ফেলবে আর শনিবারের রায়ে নিশ্চিতভাবেই আদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে।

এর প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতেও। রেটিং সংস্থা মুডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ইনফোসিস, টিসিএস, এইচডিএফসি ব্যাংকের মতো ২০টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচকে নেমে গিয়েছিল। সংস্থাটি জানায়, তাদের নির্ভরযোগ্য সরকারি সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই তালিকা করেছে তারা। কিন্তু অযোধ্যা রায়ের পর সেই সংবাদও চলে গেছে ভেতরের পাতায়। ফলে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, আগামী কিছুদিন ভারতে এই বিষয়েই কথা হবে। এক বিজেপি নেতা বলেন, ‘আমাদের শিরোনাম-ব্যবস্থাপনার কাজ এমনিতেই হয়ে গেছে’।

তবে বিজেপির সবচেয়ে বড় জয় হলো বিরোধীদের কণ্ঠ ম্লান হয়ে যাওয়া। কংগ্রেস তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানায়, তারা সুপ্রিম কোর্টের এই রায় সমর্থন করছে। অথচ এই দলটিই আগের দিন গান্ধী পরিবারের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেড়ে নেওযার বিরোধিতা করেছিল। একদিন পরেই তারা সরকারের সঙ্গে একসুরে কথা বলছে।

সরকার এখন এই মন্দির নির্মাণের তহবিল গঠন করবে। কিন্তু দলের নেতাদের শান্ত থাকতে বলাটাই বিজেপির জন্য যথেষ্ট হবে না। বিজেপির মূলমন্ত্র ছিলো ‘সাবকা সাথ, সাবকা বিকাশ ও সাবকা বিশ্বাস’ অর্থাৎ ‘সবাইকে নিয়ে, সবার বিশ্বাস ও সবার উন্নয়ন’। এটিই বাস্তবায়ন করতে হবে। অর্থাৎ ১৯৯২ সালে ৬ ডিসেম্বর যখন বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলা হয় সেটার জন্য মুসলিমদের দুর্দশার বা অনুভূতিতে আঘাতের বিষয়টি স্বীকার করা প্রয়োজন।

অযোধ্যায় করসেবকরা যখন বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেছিল তখন ভারতে দাঙ্গায় তিন হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। তার পর থেকে ওই ঘটনাকে রাজনীতি ও সমাজের একটা অংশের মানুষ বিভাজনের প্রতীক হিসেবেই দেখেন। অনেকের মতে, বাবরি ধ্বংসের ওই ঘটনা দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা বিভেদের রেখা তৈরি করে দিয়েছে, যে ক্ষতি অপূরণীয়। কিন্তু এটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, সুপ্রিম কোর্টের রায় গেরুয়া শিবিরকে তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছে। রায় হিন্দুদের পক্ষেই গিয়েছে।

অনেকের মতে, এখন কৌশলে ‘মহৎ হৃদয়ের’ পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করছেন নরেন্দ্র মোদি বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস) নেতা মোহন ভাগবত। সঙ্ঘপ্রধান যেমন বলেছেন, তাদের সামনে কেউ হিন্দু, কেউ মুসলমান নন, সবাই দেশের নাগরিক। তেমনি মোদিও বার বার বলেছেন, ভ্রাতৃত্ব ও বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের কথা।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই রায়ের ফলে জেডি (ইউ)-এর মতো হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের দরকষাকষির ক্ষমতা হ্রাস পাবে। যদিও ২০১৯ সালের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে আইনত বিষয়টি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় বিজেপির কাছে। তবে নিশ্চিতভাবে অযোধ্যার রায় হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠায় বিজেপির একটি বড় বাধা দূর হলো।

/এমএইচ/এএ/
সম্পর্কিত
জলপাইগুড়িতে বিজেপির ইস্যু বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া করিডর
ইডি হেফাজতে আরও ৪ দিন কেজরিওয়াল
সরকার ক্ষমতায় থাকতে ভোটের ওপর নির্ভর করে না: সাকি
সর্বশেষ খবর
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
সর্বাধিক পঠিত
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!