X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

যে কারণে বাবরি মসজিদের রায়ে মুসলমানদের ‘রহস্যজনক’ নীরবতা

বিদেশ ডেস্ক
১৫ নভেম্বর ২০১৯, ১৯:৫৩আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০১৯, ১৮:২৯

যে কারণে বাবরি মসজিদের রায়ে মুসলমানদের ‘রহস্যজনক’ নীরবতা

বারানসির ৪৫ বছর বয়সী ব্যবসায়ী বলছিলেন, ‘মানুষ আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আদালতের যে সিদ্ধান্ত আসুক তা মেনে নেওয়া হবে। এটি আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন’। অযোধ্যার বাবরি মসজিদ-রাম মন্দির মামলার রায় ভারতের মানুষ শান্তভাবেই গ্রহণ করেছে। যে রায়ে ভেঙে ফেলা বাবরি মসজিদের স্থলে রাম মন্দির নির্মাণের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে অযোধ্যায় মসজিদ নির্মাণের জন্য মুসলমানদের পাঁচ একর জমি প্রদানেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ওই ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘এর অর্থ এমন নয় যে আমরা এতে খুশি’।  আদালত রায় দিয়েছেন ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তির। কিন্তু মনে হচ্ছে কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণাদির ভিত্তিতে রায় দেওয়া হয়নি। মন্দির নির্মাণের জন্য কি অন্য কোনও স্থান ছিল না?

বারানসির এক তরুণ মুসলিম সাংবাদিকের প্রতিক্রিয়া আরও স্পষ্ট। তিনি বলেন, আমরা ধারণা করেছিলাম একটি সিদ্ধান্ত আসবে, ন্যায় বিচার না। কিন্তু রায়টি এত বেশি আমাদের বিরুদ্ধে যাবে, তা ভাবতে পারিনি।

এই সাংবাদিক ইঙ্গিত দেন যে, বিরোধপূর্ণ স্থানে রাম মন্দির থাকার কোনও প্রমাণ নেই। সর্বোচ্চ আদালত স্বীকার করেছেন বাবর একটি মসজিদ তৈরি করেছিলেন এবং তা সেখানে ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট একটি বিভ্রান্তিমূলক রায় দিয়েছেন।

ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকের মনে খেদ থাকলেও উভয়েই শান্তি বজায় রাখার পক্ষে। তারা উভয়েই ‘দেশের আর কোনও ক্ষতি চান না’। বিরোধের চেয়ে ব্যবসায়ী চান, রায় ঘোষণার একদিন পর যেভাবে ছাট পূজায় বারানসি ঘাটে সব ধর্মের মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং ঈদ-এ-মিলাদুন্নবীর শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা যেন বজায় থাকে।

যে কারণে বাবরি মসজিদের রায়ে মুসলমানদের ‘রহস্যজনক’ নীরবতা

এক উদ্বিগ্ন নীরবতা

৯ নভেম্বরের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এমন একটি বিরোধের আইনি নিষ্পত্তি হলো যা ভারতের স্বাধীনতার আগে থেকেও রাজনৈতিক পটভূমিতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যা ১৯৪৯ সালে মসজিদের ভেতরে মূর্তি স্থাপনে মাধ্যমে আইনি লড়াই এবং ১৯৯২ সালে হিন্দুত্ববাদী একদল করসেবক মসজিদটি গুড়িয়ে দিলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় পরিণত হয়। এসব বিরোধে নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে, উত্তর ভারতের সামাজিক সম্পর্ক বিনষ্ট করেছে এবং উগ্র হিন্দুদের রাজনৈতিক ভাষ্যকে করেছে বিষাক্ত। প্রায় তিন দশক ধরে অযোধ্যা ছিল ভারতীয় রাজনীতি মেরুকরণের জনশ্রুতি।

প্রায় এক দশকের প্রস্তুতির পর চূড়ান্ত রায়ের পর অনেকেই মনে করছেন তা সংখ্যাগরিষ্ঠের পক্ষে গেছে। যদিও সংখ্যালঘুদের পক্ষ থেকে তেমন কোনও প্রতিবাদ আসেনি। অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদ-উল-মুসলিমিনি প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি মসজিদের জন্য বিকল্প স্থানে জমি গ্রহণের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার এই বক্তব্যের প্রতি সমর্থন বাড়ছে। অল্প কয়েকজন রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পক্ষে কথা বলছেন।

কিন্তু সর্বোপরি মুসলিম রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতারা জানিয়েছেন, রায় রাম মন্দিরের পক্ষে গেলেও তারা তা মেনে নিয়েছেন। এমনকি যে অঞ্চলে অযোধ্যা অবস্থিত সেই উত্তর ভারতেই রায়কে গ্রহণ করা হয়েছে একেবারে শান্তভাবে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে যে অল্প কয়েকটি খবর প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা গেছে, অযোধ্যার মুসলমানরা দুঃখ ও অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। পুরনো দিল্লিতে মুসলিম দোকানদাররা নিজেদের ব্যবসা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন আরও বেশি। যে ব্যবসা নোট বাতিল ও চাকরির বাজার ছোটো হওয়াতে এমনিতেই ধুঁকছিল।

এত বছর বিরোধের পর প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ না হওয়ার ব্যাখ্যা কী? বিষয়টির সহজ কোনও জবাব নেই। কিন্তু সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসে বাবরি মসজিদের গুরুত্ব, মুসলিম রাজনীতিতে বিরোধের ভূমিকা এবং একপাক্ষিক মুসলিম পরিচয়ের অনুপস্থিতি এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের ক্রমবর্ধমান ঐকমত্য এই নীরবতায় প্রভাব রেখেছে।

যে কারণে বাবরি মসজিদের রায়ে মুসলমানদের ‘রহস্যজনক’ নীরবতা

বিশেষ কোনও মসজিদ না

বারানসির ওই ব্যবসায়ী বলেন, বাবরি আমাদের কাছে একটি মসজিদ ছিল, কিন্তু কোনও বিশেষ মসজিদ না। এমন নয় যে সারা দেশের মুসলিমরা এখানে নামাজ পড়তে আসে। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলো মক্কা ও মদিনা।

অনেকের মতে, বাবরি বিরোধে সব সময়েই পবিত্রতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার আবরণ মিশ্রিত ছিল। হিন্দুদের একাংশের কাছে স্থানটি রামের জন্মভূমি। মুসলিদের কাছে পবিত্র স্থান হলেও বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল না। ‘বিইং দ্য আদার: দ্য মুসলিম ইন ইন্ডিয়া’ বইয়ের লেখক ও সাংবাদিক সাঈদ নাকবির মতে, 'এমনকি জামে মসজিদের মতো বড় কোনও মসজিদ ছিল বাবরি। যদি আপনারা বলেন রামচন্দ্রের জন্ম হয়েছে এখানে আর আমি বলি মহানবী (সা.) এর জন্ম হয়েছে সেখানে, তাহলে আমাদের মধ্যে বিরোধ থাকত।’

অনেক বছর ধরেই মোঘল আমলে নির্মিত মসজিদটি মুসলমানদের কাছে ধর্মীয় গুরুত্ব হারাচ্ছিল। বারানসির ওই সাংবাদিক ব্যাখ্যা করে বলেন, এমনকি যদি ওই জমি মুসলমানদের দেওয়া হতো তাহলেও সেখানে নামাজ আদায় করা যেত না। কারণ বিরোধপূর্ণ স্থানে নামাজ পড়ার বিধান নেই ইসলামে।

রাষ্ট্র বিজ্ঞানী হিলাল আহমেদ মনে করেন, ১৯৯২ সালের পর থেকে মুসলমানদের কাছে বাবরি মসজিদ অপ্রাসঙ্গিক মসজিদে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, মসজিদ বা সেটির অবশিষ্ট অংশ ১৯৯২ সালে ভেঙে দেওয়া হয়। ফলে বিরোধপূর্ণ স্থানে কোনও মসজিদ ছিল না। অন্যদিকে, হিন্দুদের সেখানে একটি মন্দির ছিল, যা সব হিন্দুদের জন্য ছিল উন্মুক্ত। হিন্দুরা মন্দিরে যেতে পারত। রামের জন্মভূমিতে তারা পূজা করতে পারত সেই স্থানে যেখানে এক সময় বাবরি মসজিদ ছিল। যদিও এটি মুসলমানের বিষয় নয়। কিন্তু কথা হলো সেখানে মুসলমানদের নামাজ পড়ার অনুমতি ছিল না। এই আইনি নিষেধাজ্ঞার ফলে নামাজের জন্য জায়গাটির দাবি জোরালো হয়নি মুসলমানদের মনে। কারণ মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে বাবরি মসজিদের বিশেষ কোনও ধর্মীয় গুরুত্ব ছিল না।

যে কারণে বাবরি মসজিদের রায়ে মুসলমানদের ‘রহস্যজনক’ নীরবতা

একটি ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধ

বাবরি মসজিদের বিশেষ ধর্মীয় গুরুত্ব মুসলমানদের কাছে না থাকলেও স্থানটি ছিল ঐতিহাসিক ও মালিকানার। মুসলিম পলিটিক্যাল ডিসকোর্স ইন পোস্টকলোনিয়াল ইন্ডিয়া: মন্যুমেন্টস, মেমোরি, কনটেস্টেশন বইয়ে হিলাল আহমদ লিখেছেন, বিরোধপূর্ণ স্থানটিতে ‘ধর্মনিরপেক্ষ উদ্দেশ্য’ মুসলমানদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে: স্থানটিতে রাম মন্দিরের পক্ষে খুব কম প্রমাণ রয়েছে, স্থানটি ভারতের জাতীয় ঐতিহ্য এবং বিরোধটি শুধু স্থানীয় নয়, এই বিরোধটি ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকারের কথা বলে।

হিলাল আহমদের মতে, স্থানীয় মুসলিমদের ভাষ্য আইন ও ঐতিহাসিকতার সঙ্গে মিথ ও লোকাচারবিদ্যা সম্পর্কিত। স্থানীয় লোক কথা অনুসারে, অযোধ্যার পাহাড়ি চূড়াটি ছিল সুফিদের প্রার্থনার স্থান। সুফিদের প্রার্থনার কারণে বাবর সিকান্দার লোদির বিরুদ্ধে পানি পথ যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন। আর এই কারণে মোঘল সম্রাট স্থানটিতে মসজিদ নির্মাণের আদেশ দেন। স্থানীয় ইতিহাসে হিন্দু বৈরাগীদের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। যারা জোর করে মসজিদের বাইরে একটি প্রার্থনার স্থান গড়ে তোলে এবং আওয়াদের নবাবের ইচ্ছায় তাদের পূজা অব্যাহত থাকে। স্থানীয় আখ্যান অনুসারে, আওয়াদের হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি বজায় ছিল ব্রিটিশদের হস্তক্ষেপের পূর্ব পর্যন্ত। ব্রিটিশরাই এই বিরোধ সৃষ্টি করে।

এক সময়কার আওয়াদ রাজ্যে এই ধারণাগুলোর অন্তত কয়েকটি বিরাজ করে। বারানসির ব্যবসায়ী বলেন, শতাব্দীকাল ধরে হিন্দু ও মুসলিমরা একসঙ্গে বাস করছিলেন, এমনকি যুদ্ধও করেছেন একসঙ্গে। ব্রিটিশরাই ক্ষমতা ধরে রাখতে এই বিভাজন তৈরি করেছে।

প্রভাবশালী ও স্থানীয় মুসলিমরা আইনের আওতায় দরকষাকষি চেয়েছে। হিলাল আহমেদ দাবি করেন, শুধু ১৯৮০ দশকে কিছু সময়ের জন্য এই আইনি বিষয়টি রাজনৈতিক হয়ে ওঠে।

যে কারণে বাবরি মসজিদের রায়ে মুসলমানদের ‘রহস্যজনক’ নীরবতা

রাজনৈতিক বাবরি

১৯৮০-র দশকে হিন্দুদের দাবি জোরালো হওয়ার প্রেক্ষিতে মুসলমানদে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ১৯৮৪ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ রাম মন্দিরের পক্ষে আন্দোলন শুরু করে। ১৯৮৬ সালে ফৈজাবাদ জেলা আদালত কয়েক দশক পর মসজিদ খোলার অনুমতি দেয়। এর মধ্য দিয়ে মুসলিমদের রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রবেশ করে বাবরি। হিলাল আহমদ মনে করেন, মুসলমানদের সংগঠিত প্রতিরোধের প্রতীকে পরিণত হয় বাবরি মসজিদ।

তালা খুলে দেওয়ার পর বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটি গঠন করা হয়। মুসলিম রাজনৈতিক দল ও নেতা এবং ধর্মীয় নেতারা এতে যুক্ত হয়ে পড়েন। পুরো দশকটি ছিল মুসলমানদের পরিচয় নিয়ে লড়াই। শাহ বানু মামলায় মুসলমানদের ব্যক্তিগত আইন নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে এবং সালমান রুশদির সাটানিক ভার্সেস উপন্যাসের বিরুদ্ধে একটি ফতোয়া জারি করা হয়।

বাবরি মসজিদ মামলায় অন্যান্য মসজিদে নামাজ আদায়ের অধিকার সুরক্ষার দাবিও সংযোজিত হয়। কিন্তু মুসলমানদের প্রতিবাদের পরও ১৯৮৯ সালে রাম মন্দিরের জন্য শিলানিয়া (পাথর বসানো) বন্ধ করা যায়নি। ওই বছরই রাম লাল্লা বিরাজমান মামলাটির এক পক্ষে পরিণত হয়।

মুসলমানদের পরিচয়ের রাজনীতি ঘিরে বাবরি মসজিদের ভূমিকার ইঙ্গিত পাওয়া যায় এতে। আহমেদ বলেন, ‘মসজিদ সুরক্ষার দাবিতে যেসব সাধারণ মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করা হচ্ছিল তাদের বলা হচ্ছিল যে বাবরি মসজিদ ছিল তাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা। ১৯৯১ সালে একটি জয় ছিল। ওই সময় একটি আইন পাস হয়। যাতে বলা হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টের পূর্বে বিদ্যমান প্রার্থনা স্থানের ধর্মীয় চরিত্র বহাল রাখতে হবে। কিন্তু যখন তা আইনি লড়াইয়ের দিকে ধাবিত হতে শুরু করে তখন রাজনৈতিক গতি মন্থর হয়ে পড়ে। বিশেষ করে মসজিদ ভাঙার পর।’

তিনি আরও বলেন, সব মুসলিম পক্ষ অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ডকে বাবরি মসজিদ মামলায় প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব দেয়। ১৯৯৩ সালের ১ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটি একটি সিদ্ধান্ত নেয়। যাতে সব ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি ও প্রচারণা বাতিল করা হয়।

যে কারণে বাবরি মসজিদের রায়ে মুসলমানদের ‘রহস্যজনক’ নীরবতা

কোন মুসলিম রাজনীতি?

নাকভির পর্যালোচনা অনুযায়ী, মসজিদ ভাঙার কয়েক দশকের মধ্যে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের প্রধান ইস্যুতে পরিণত হয়। এতে জড়িত ছিল হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি। যার ফলে ১৯৮৪ সালে দুটি আসন পেলেও ২০১৯ সালে বিজেপি তিন শতাধিক আসন পেয়েছে। কিন্তু ১৯৮০-র দশকের পর মুসলমানদের মধ্যে এমন কোনও ঐক্যবদ্ধ রাজনীতি ভারতে দৃশ্যমান হয়নি।

তার মতে, বাবরি বিরোধ নিয়ে মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া নানাবিধ হওয়ার কারণের মধ্যে রয়েছে, তারা বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত, বিভিন্ন রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে থাকা, বিভিন্ন ভাষায় কথা বলা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে জড়িয়ে পড়া। বেশিরভাগ ভারতীয় মুসলমান সম্প্রীতি চান। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতাদের একাংশই বাবরি মসজিদ ইস্যুটিকে বাঁচিয়ে রেখেছিল।

এছাড়া মুসলিম সম্প্রদায় মুসলিম ইস্যুর বাইরেও নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় তুলে ধরতে চান বলে মনে করেন নাকভি। কিন্তু তাদেরকে সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তারা ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতিতে যুক্ত হতে চায়। মুসলমানরা চাকরি চায়, নিরাপত্তা ও উদ্যোক্তা হতে সহযোগিতা চায়। কিন্তু পুরো ব্যবস্থা তাদের কী দিয়েছে? বাবরি, শাহ বানু ও স্যাটানিক ভার্সেস।

যে কারণে বাবরি মসজিদের রায়ে মুসলমানদের ‘রহস্যজনক’ নীরবতা

সংখ্যাগরিষ্ঠের রাষ্ট্রে বসবাস

অযোধ্যার রায় নিয়ে নীরবতা পেছনে রাজনৈতিক বাস্তবতাও খোলা চোখে ধরা পড়ে। নাকভি বলেন, যদি আদালত মুসলমানদের জমি দিতেন তবুও সংখ্যাগরিষ্ঠের নিপীড়নের মুখে মসজিদ নির্মাণ কখনও সম্ভব হত না।

এই নীরবতার পেছনে আতঙ্কও কাজ করছে অনেকের মনে। বারানসির ওই সাংবাদিক জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তর প্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠের নীতি বা রাজনীতির সমালোচনা করায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে এফআইএর দায়ের করা হয়েছে। আর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যবসায়ী বলেন, আপনারা জানেন এখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন।

পরিস্থিতি এমন যে, ব্যক্তিগত সম্পর্কেও নীরবতা কায়েম হচ্ছে। সাংবাদিক বলেন, এমনকি হিন্দু বন্ধুদের সঙ্গে আমরা মন্দির-মসজিদ ইস্যু নিয়ে আলোচনা করি না। আমরা তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বিনষ্ট করতে চাই না। বিক্ষোভ বা প্রতিবাদের ক্ষেত্রে এক দশক আগেও যা সম্ভব ছিল এখন সেই সুযোগ নেই। আগে রাজনীতিক ছিলেন যারা আমাদের কথা শুনতেন। এখন কেউ আমাদের কথা শুনে না।

ওই নারী সাংবাদিক বলেন, অযোধ্যার রায় ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষণে রাজনৈতিকভাবে প্রান্তিক হয়ে পড়ার ইঙ্গিত ছিল। তিনি মন্দিরের জন্য হিন্দুদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি কি একবারও মুসলমানদের কথা বলেছেন? তারা কি পেতে যাচ্ছে তা বলেছেন? সূত্র: স্ক্রল

/এএ/
সম্পর্কিত
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য খালাস করে গেলেন যে নারী ট্রাকচালক
সর্বশেষ খবর
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা