X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

লিবিয়ায় আমিরাতি ড্রোনের হামলায় গর্ভবতী নারীসহ নিহত ১১

বিদেশ ডেস্ক
০২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:২২আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৪৮

লিবিয়ার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় মারজাক শহরে রবিবার এক ড্রোন হামলায় গর্ভবতী নারী ও শিশুসহ ১১ জন নিহত হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমর্থনপুষ্ট লিবিয়ার সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতা খলিফা হাফতারের সমর্থনে আমিরাতি ড্রোন ব্যবহার করে এ হামলা চালানো হয়। নিহতদের মধ্যে নয়জনই শিশু। বাকি দুইজন নারী। দুই নারীর একজন গর্ভবতী ছিলেন। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি। লিবিয়ায় আমিরাতি ড্রোনের হামলায় গর্ভবতী নারীসহ নিহত ১১
লিবিয়ার জাতিসংঘ সমর্থিত ত্রিপোলিভিত্তিক ন্যাশনাল অ্যাকর্ড গভর্নমেন্ট বা জাতীয় ঐকমত্যের সরকার (জিএনএ)-এর পক্ষ থেকে এ ড্রোন হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। স্থানীয় হাসপাতালের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, সেখানে নয় শিশু ও দুই নারীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

এর আগে গত নভেম্বরে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির কাছেই একটি বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে আমিরাতি হামলায় প্রতিষ্ঠানটির সাত কর্মী নিহত হয়। আহত হয় আরও ১৫ জন।

জীবনযাপনের মানের দিকে থেকে তেল-সমৃদ্ধ লিবিয়া একসময় আফ্রিকার শীর্ষে ছিল। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা ছিল পুরোপুরি রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তবে যে রাজনৈতিক এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা ঐ ঐশ্বর্য নিশ্চিত করেছিল, সেটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় ২০১১ সালে যখন পশ্চিমা সমর্থিত বিদ্রোহীদের হাতে কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন হয়। তারপর থেকে লিবিয়ায় চলছে সীমাহীন সংঘাত। গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হওয়ার পর ত্রিপোলিতে জাতিসংঘ সমর্থিত একটি মনোনীত সরকার রয়েছে। ওই কর্তৃপক্ষকে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার বা জিএনএ নামে অভিহিত করা হয়। তবে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হাতে রয়ে গেছে। পশ্চিমাঞ্চলে জিনএনএ-র কর্তৃত্ব থাকলেও পূর্ব ও দক্ষিণের বেশিরভাগ অঞ্চল হাফতার বাহিনী এলএনএ-র দখলে। গত এপ্রিলে এ বাহিনী লিবিয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

প্রায় পাঁচ বছর ধরে লিবিয়ায় দুটি সরকার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এদের মধ্যে একটি সরকারকে সমর্থন দিয়েছে জাতিসংঘ ও অন্যান্য দেশ। আরেকটি ফিল্ড মার্শাল হাফতারের নেতৃত্বাধীন। ত্রিপোলির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে জাতিসংঘ। তুরস্ক, ইতালি ও যুক্তরাজ্যও এ সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। আর হাফতার বাহিনীর সমর্থনে রয়েছে মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও ফ্রান্স। তবে আন্তর্জাতিক সমর্থনের বিষয়টি স্পষ্ট নয়। যেমন যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে (জিএনএ) সমর্থন করে এবং শান্তি আলোচনার আহ্বান জানায়। কিন্তু গত এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খলিফা হাফতারকে ফোন দিয়ে লিবিয়ার ব্যাপারে ‘যৌথ স্বপ্নের’ কথা বলেন।

কে এই খলিফা হাফতার

লিবিয়ার সাবেক নেতা মুয়াম্মর গাদ্দাফির এক সময়ের ঘনিষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা খলিফা হাফতার পরে হয়ে উঠেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র মদতপুষ্ট বিদ্রোহী। গত চার দশকে লিবিয়ার রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে পরিণত হন তিনি। এ সময়ের মধ্য তার অনেক উত্থান-পতন রয়েছে। কখনও ছিলেন লিবিয়ার ক্ষমতা কেন্দ্রের কাছাকাছি খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, কখনও তাকে ক্ষমতা থেকে দূরে সরে যেতে হয়েছে। পরে আবার তার প্রত্যাবর্তন ঘটেছে ক্ষমতার কেন্দ্রে।

খালিফা হাফতারের অধীনে থাকা বাহিনী এখন লিবিয়ার প্রধান তেল টার্মিনালগুলোর দখল নিয়েছে। তার নিয়ন্ত্রণাধীন পূর্বাঞ্চলীয় শহর টবরুকের পার্লামেন্টের হাতে (এই পার্লামেন্টকে স্বীকৃতি দেয়নি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়) দেশটির গুরুত্বপূর্ণ তেল সম্পদের নিয়ন্ত্রণ।

১৯৪৩ সালে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর আজডাবিয়ায় খালিফা হাফতারের জন্ম। ১৯৬৯ সালে কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির নেতৃত্বে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে সেনা কর্মকর্তারা রাজা ইদ্রিসকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেন, তিনি ছিলেন তাদের একজন।

পতন এবং নির্বাসন

গাদ্দাফির শাসনামলে খালিফা হাফতার বেশ দ্রুত উপরে দিকে উঠে যান। ১৯৮০-এর দশকে লিবিয়ার বাহিনী যখন প্রতিবেশী দেশে সংঘাতে লিপ্ত, তখন তাকে সেই লড়াইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে এটিই তার পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ ফ্রান্সের সমর্থনপুষ্ট শাদের বাহিনীর হাতে তার বাহিনী পরাজিত হয়। খালিফা হাফতার এবং তার বাহিনীর ৩০০ সেনা ১৯৮৭ সালে শাদের সামরিক বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। অন্যদিকে লিবিয়া যে শাদে যুদ্ধ করতে বাহিনী পাঠিয়েছে, গাদ্দাফি বরাবরই তা অস্বীকার করছিলেন। কাজেই যখন খালিফা হাফতার এবং তার বাহিনী সেখানে ধরা পড়লে তাদের দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান গাদ্দাফি। এ ঘটনা খলিফা হাফতারকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। পরবর্তী দুই দশক ধরে তার প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ালো কিভাবে গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করা যায়, সেই চেষ্টা করা।

এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছিলেন তিনি। সেখান থেকেই চলছিল তার গাদ্দাফি-বিরোধী তৎপরতা। থাকতেন সিআইএ সদর দফতরের খুব কাছে। তার সঙ্গে সিআইএ-র বেশ ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল বলে প্রতীয়মান হয়। গাদ্দাফিকে হত্যার বেশ কয়েকটি চেষ্টায় সিআইএ তাকে সমর্থন দেয়। ২০১১ সালে লিবিয়ায় গাদ্দাফির পতনের পর খলিফা হাফতার দেশে ফিরে আসেন। লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহী বাহিনীর অন্যতম অধিনায়ক ছিলেন তিনি। তবে গাদ্দাফির পতনের পর ২০১৪ সালের মে মাসে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেন। এক পর্যায়ে ত্রিপোলি দখলের মাধ্যমে পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেন তিনি। এ প্রচেষ্টায় তিনি সমর্থন পান যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবের মতো দেশগুলোর। সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি, টিআরটি ওয়ার্ল্ড, বিবিসি।

/এমপি/
সম্পর্কিত
সমলিঙ্গের বিয়ে অনুমোদনের পথে থাইল্যান্ড
রাজনীতিকদের বিরোধে ক্ষোভ বাড়ছে ইসরায়েলি সেনাদের
দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৭
সর্বশেষ খবর
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭
কানে ডিভাইস নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্রে বোন, বাইরে থেকে উত্তর বলার অপেক্ষায় ভাই
কানে ডিভাইস নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্রে বোন, বাইরে থেকে উত্তর বলার অপেক্ষায় ভাই
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়