বাংলাদেশের শিল্প, সরকারি ও বিজ্ঞান বিষয়ক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি প্রকল্পে কাজ করছেন স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব স্টার্লিংয়ের বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশের মৎস্য-খাতের গুরুত্বপূর্ণ মাছের স্বাস্থ্যের উন্নতির ঘটাতে এই কাজ করছেন তারা।
ইন্সটিটিউট অব অ্যাকুয়াকালচার (আইওএ) একটি নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছে, যা চিংড়ি চাষে প্রবায়োটিকের ব্যবহারে পরিবেশগত ও পেশাগত স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমিয়ে আনবে। প্রবায়োটিক হলো অণুজীব, বেশিরভাগই ব্যাকটেরিয়া; চিংড়ি ও মাছে প্রবেশ করানো বা পানিতে যুক্ত করা হলে স্বাস্থ্যগত সুবিধা পাওয়া যায়।
প্রধান গবেষক ড. ফ্রান্সিস মুরে বলেন, বাংলাদেশে প্রায় আড়াই লাখ চিংড়ি চাষি রয়েছেন, এদের বেশিরভাগই ক্ষুদ্রাকৃতির চাষি। এসব চাষি ও হ্যাচারির মালিকরা রোগের সংক্রমণ ও পানির মান ঠিক রাখতে প্রোপাইল্যাক্টিকসের মতো প্রবায়োটিক ব্যবহার শুরু করেছেন।
ড. ফ্রান্সিস আরও বলেন, চিংড়ি চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশি চাষীরা যে প্রবায়োটিক ব্যবহার করছেন ভারত ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রবায়োটিক যেহেতু ওষুধের ভেতরে পড়ে না সংজ্ঞানুসারে, ফলে এটি নজরদারীর বাইরে রয়েছে।
ফিজ ডট ওআরজি’র মতে, আন্তঃবিভাগীয় বিশেষজ্ঞদের একটি দল বাংলাদেশে কম্পিউটার-ভিত্তিক একটি ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশে চিংড়ি ও মাছ চাষে প্রবায়োটিকের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞানীদের প্রত্যাশা, ভবিষ্যতে এমন উদ্যোগে অন্যান্য দেশও উপকৃত হবে। বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি স্কটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে সফর করে প্রযুক্তির উন্মোচন চূড়ান্ত করেছেন।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে আইএমএকিউলেট’র একটি গবেষণাকে বাস্তব রূপ দিতে যাচ্ছেন গবেষকরা। উভয় প্রকল্পেই অর্থায়ন করেছে বায়োটেকনোলজি ও বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস রিসার্চ কাউন্সিল। এই প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হলো বাংলাদেশ অ্যাকুয়া প্রোডাক্টস কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন। এই সংস্থাটি বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য প্রবায়োটিক আমদানিকারক ও পরিবেশকদের প্রতিনিধিত্ব করে।
ড. ফ্রান্সিস বলেন, উচ্চ মানের পণ্যের ব্যবহারে ঝুঁকির বিভিন্ন মাত্রা নির্দেশ করবে এই প্রযুক্তি। এতে করে চাষি ও নিয়ন্ত্রণকরা যেখানে প্রয়োজন সেখানে মনোনিবেশ করতে পারবে। পণ্যের গায়ে লেখা তথ্য ও ওয়েব গবেষণা থেকে এসব নির্দেশক তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারত থেকে পণ্যের নমুনা নিয়ে গবেষণাগারে পর্যালোচনার পর ঝুঁকি ফ্যাক্টর চিহ্নিত করা হয়েছে।
এই প্রযুক্তি 'ট্রাফিক-লাইট সিস্টেম’-এ কাজ করে। কোনও পণ্যের কার্যকারিতা ও ব্যবহার নিরাপদ হলে তাতে সবুজ লাইট জ্বলে উঠবে।
স্টার্লিং ইউনিভার্সিটির গবেষকদের আশা, এতে করে আমদানিকারক ও পরিবেশকরা নিজেরাই পণ্যের মান নিশ্চিত করতে ন্যূনতম মাপকাঠির প্রচলন করতে পারবেন।