উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে ব্যাপক বিক্ষোভের পরেও ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার অনুমোদন পেয়েছে বহুল আলোচিত নাগরিকত্ব বিল (সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল)। বুধবার বিতর্ক শেষে বিলটির পক্ষে ভোট দেয় ১২৫ আইনপ্রণেতা আর বিপক্ষে ভোট পড়ে ১০৫টি। বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে যাওয়া অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতে আনা বিলটি আগেই পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার অনুমোদন পেয়েছে। এখন রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিলেই বিলটি আইনে পরিণত হবে। এর আগে বিলটিকে মুসলিমবিরোধী আখ্যা দিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
গত সোমবার (৯ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে ৩১১-৮০ ভোটে লোকসভার অনুমোদন পায় ‘দ্য সিটিজেনশিপ (অ্যামেন্টমেন্ট) বিল, ২০১৯’ শীর্ষক বিতর্কিত বিল। ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের আনা বিলটি বুধবার রাজ্যসভায় উত্থাপন করা হয়। বিজেপি সরকার বলছে, এই বিল পাসের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় কারণে নিপীড়িত মানুষের আশ্রয়স্থল হবে ভারত। তবে সমালোচকদের মতে, বিজেপি’র মুসলমান জনগোষ্ঠীকে কোণঠাসা করার নীতির অংশই এই বিলটি। এর আগে ২০১৬ সালে একবার পার্লামেন্টে এ বিলটি লোকসভার অনুমোদন পেলেও রাজ্যসভার অনুমোদন পেতে ব্যর্থ হয়। তখন আসামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলজুড়ে বিলটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়।
বুধবার রাতে বিলটি রাজ্যসভায় পাশের পর এক টুইট বার্তায় দিনটিকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিলটির পক্ষে ভোট দেওয়া সব আইনপ্রণেতাকেই ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে বহু বছর ধরে নিপীড়িত মানুষের দুর্ভোভ লাঘব হবে।
তবে মানবাধিকার গ্রুপ ও বিরোধী দলগুলো বিলটিকে মুসলমান শরণার্থীদের জন্য বৈষম্যমূলক বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের দাবি এই বিলের মাধ্যমে ভারতীয় সংবিধানের লঙ্ঘন ঘটেছে। বিরোধী দলগুলো বলছে বিচারিক আদালতে বিলটি টিকবে না। এই বিলের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়েরের ঘোষণা দিয়েছে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল।
এদিকে নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে ছাত্র সংগঠনগুলোর ডাকা বনধ আর প্রতিবাদ বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ১২ ঘণ্টার জন্য মোবাইল-ইন্টারনেট এবং এসএমএস পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব সরকার। উত্তর-পূর্ব ফ্রন্টিয়ার রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে,অবরোধের ফলে বহু ট্রেন যাত্রা বাতিল করা হয়েছে।