X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুনরায় প্রেসিডেন্ট হতে ট্রাম্পকে সহযোগিতা করবে সোলাইমানি হত্যাকাণ্ড?

বিদেশ ডেস্ক
০৪ জানুয়ারি ২০২০, ১৮:৪২আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২০, ১৯:৩১

বলা হয়ে থাকে, ইন্টারনেটে কেউ কিছু প্রকাশ করলে তা মুছে ফেলা যায় না। যেন তা একেবারে অমোচনীয় কালি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এই অমোচনীয় কালির নাম হলো টুইটার। এই সামাজিক মাধ্যমটিতে ট্রাম্পের এমন অনেক কথাই রয়েছে যা তিনি হয়ত এখন মুছে ফেলতে চাইবেন। কিন্তু ইন্টারনেট বলে তা আর মুছে ফেলা সম্ভব না।

পুনরায় প্রেসিডেন্ট হতে ট্রাম্পকে সহযোগিতা করবে সোলাইমানি হত্যাকাণ্ড?

বৃহস্পতিবার ভোরে মার্কিন বিমান হামলায় কাসেম সোলাইমানি নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ২০১১ সালে ট্রাম্পের কয়েকটি টুইট বার্তা সামনে নিয়ে আসেন। ওই সময় ট্রাম্প তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে অভিযুক্ত করেছিলেন পুনরায় নির্বাচিত হতে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ পরিকল্পনা করার।

ট্রাম্পের পুরনো টুইট বার্তা সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ায় তার নির্বাচনি প্রচারণা পূর্ব অবস্থান নিয়ে সমালোচনার সুযোগ করে দিয়েছে।

'ক্ষমতায় থাকা হলো বড় একটি শক্তি। বেশিরভাগ প্রেসিডেন্টই পুনরায় নির্বাচিত হন। এর আংশিক কারণ হলো, তাদের নিয়ন্ত্রণে বা পক্ষে থাকে দেশের প্রভাবশালী সেনাবাহিনী'

- পাবলিক অ্যাফেয়ার্স অধ্যাপক ইথান পোর্টার

২০১৮ সালে মে মাসে ট্রাম্প বহুজাতি ইরানি পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন এবং নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেন। এর ফলে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়।

গত সপ্তাহে ইরাকের কিরকুকে একটি রকেট হামলায় ইরানকে দায়ী করার পর এই উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। যে হামলার সূত্র ধরে পাল্টাপাল্টি হামলার পর বাগদাদে রকেট হামলায় নিহত হন ইরানের প্রভাবশালী জেনারেল।

ট্রাম্পের নিন্দুকেরা দ্রুতই তাকে অভিযুক্ত করেন সাত বছর পূর্বে তিনি ওবামার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছিলেন। ট্রাম্পের দাবি ছিল, রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করতে ওবামা যুদ্ধ শুরু করতে চাইছেন।

জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া ও পাবলিক অ্যাফেয়ার্স বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক ইথান পোর্টার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যখনই কোনও যুদ্ধের মুখোমুখি হয় মার্কিন নাগরিকরা যুদ্ধ পরিচালনার জন্য প্রেসিডেন্টকে সমর্থন দেওয়ার অতীত প্রমাণ রয়েছে। এটি হলো পতাকার প্রভাব।

সত্যিকার অর্থেই সোলাইমানি নিহত হওয়ার ট্রাম্প প্রথম যে টুইট করেছেন তাতে কম রেজুলেশনের যুক্তরাষ্ট্রের একটি পতাকা ছিল।

তবু পরিস্থিতি এখনও জটিল বলে মনে করেন পোর্টার। তার মতে, যদি এই সংঘাত খারাপ দিকে মোড় নেয় তাহলে রাজনৈতিক সুবিধা খুব কম থাকবে।

এছাড়া মার্কিন নির্বাচন এখনও ১০ মাস দূরে। যদি নভেম্বরের পূর্বে এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া শেষ হয়ে যায় তাহলে হয়ত  ভোটাররা ঘটনাটি ভুলে যাবে। পোর্টারের মতে, এর ফলে ভোটে এই হত্যাকাণ্ডের প্রভাব পড়বে খুব কম।

পুনরায় প্রেসিডেন্ট হতে ট্রাম্পকে সহযোগিতা করবে সোলাইমানি হত্যাকাণ্ড?

যুদ্ধ ও নির্বাচন

এমনটিই ঘটেছিল জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ ও প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধে। ১৯৯০ সালের গ্রীষ্মে কুয়েতে সাদ্দাম হোসেনের অভিযানের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে বিশ্বের ৩৫ টি দেশ চষে বেড়িয়েছেন। এই জোট যুদ্ধে জয়ী হয় এবং ইরাকি সেনাবাহিনীকে হটিয়ে দেয়। কিন্তু ১৯৯২ সালে নির্বাচনের মৌসুম চলে আসার আগেই। বিল ক্লিনটন জনগণের মনোযোগ দেশের ভেঙ্গে পড়া অর্থনীতির দিকে ফেরাতে সক্ষম হন। অথচ বুশ তখনও যুদ্ধের ইতি টানতে ব্যস্ত।

 বলার অপেক্ষা রাখে না, ওই বছর নির্বাচনে সহজ জয় পান ক্লিনটন। আর এতে করে এক মেয়াদের প্রেসিডেন্টে পরিণত হন বুশ।

পোর্টার বলেন, ট্রাম্প যদি রাজনৈতিক সুবিধার জন্য সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েও থাকেন- তা আমরা জানি না। কেন তিনি এমন করলেন তা যারা জানতে চান তাদের জন্য শুভকামনা। যা অর্জনের জন্য ট্রাম্প এই নির্দেশ দিয়েছেন সেটির মূল্যায়ন করার সময় এখনও আসেনি।

সোলাইমানি হত্যা যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া রাজনীতিতে কী ভূমিকা রাখবে তা এই মুহূর্তে স্পষ্ট নয়। সবচেয়ে বেশি অস্পষ্ট হলো ট্রাম্প রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন কিনা। তবুও পোর্টারের মতে, ট্রাম্প প্রায়ই বিবেচনা করে থাকেন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তার পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে কেমন ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, প্রশাসন ও দলের ভেতরে প্রেসিডেন্ট সাধারণ তার মেয়াদের শেষ বছর দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার জন্য তাদের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন। ক্ষমতায় থাকা হলো বড় একটি শক্তি। বেশিরভাগ প্রেসিডেন্টই পুনরায় নির্বাচিত হন। এর আংশিক কারণ হলো তাদের নিয়ন্ত্রণে বা পক্ষে থাকে দেশের প্রভাবশালী সেনাবাহিনী।

সফল যুদ্ধের পর জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ নির্বাচনে হেরে গেলেও তারই ছেলে ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধে জড়িয়েও ২০০৪ সালে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। এমনকি বুশের পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার চার বছর পর্যন্ত রিপাবলিকান পার্টির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ছিল।

একটি ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হয়, ২০০৮ সালের নির্বাচন ছিল ইরাক যুদ্ধের গণভোট। ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করতে চাওয়া ওবামা প্রয়াত সিনেটর জন ম্যাককেইনকে হারিয়ে দেন। ম্যাককেইন প্রয়োজনে শত বছর ইরাকে সেনা রাখার পক্ষে ছিলেন।

এমনকি দেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে সাংঘর্ষিক বক্তব্য দেওয়ার পরও  ট্রাম্প ২০১৬ সালে নির্বাচনে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুদ্ধের ইতি টানার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

শান্তির প্রার্থী থেকে যুদ্ধের প্রেসিডেন্ট

ওবামা-ম্যাককেইনের আট বছরের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া রাজনীতির পেন্ডুলাম উল্টে যায়। রিপাবলিকান মনোনীত প্রার্থী ডেমোক্র্যাটিক প্রতিদ্বন্দ্বির বিরুদ্ধে যুদ্ধবাজ হওয়ার অভিযোগ তুলেন। একটি নতুন বিচ্ছিন্নতাবাদী ডানপন্থী অংশ, যারা সামরিক হস্তক্ষেপের বিরোধী তারা রিপাবলিকান প্রাইমারিতে ট্রাম্পকে সমর্থন দেয়। ট্রাম্প ছিলেন বুশের নয়া রক্ষণশীল নীতির কাছাকাছি নীতি গ্রহণ করেছিলেন।

'পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে হিলারি হলেন ট্রিগার হ্যাপি'

- ডোনাল্ড ট্রাম্প, ২০১৬

এমনকি ট্রাম্প বুশের ইরাক যুদ্ধের সম্ভাব্য বিরোধীতাকারীর বক্তব্য তুলে ধরেন ২০১৬ সালের এপ্রিলে তার পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে দেওয়া ভাষণে। ট্রাম্প বলেছিলেন, অন্যান্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মতো যুদ্ধ ও আগ্রাসন আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া হবে না। কূটনীতি ছাড়া পররাষ্ট্রনীতি হতে পারে না।

ওই ভাষণে তিনি ওবামার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের হস্তক্ষেপ নীতির সমালোচনা করেন। বিশেষ লিবিয়া নিয়ে মার্কিন নীতি। ভাষণটির একমাস পর এক সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে হিলারি হলেন ট্রিগার হ্যাপি।

ফলে, 'শান্তির প্রার্থী' থেকে চার বছরের মাথায় 'যুদ্ধের প্রেসিডেন্টে' রূপান্তর ট্রাম্পকে কি সুবিধা দেবে?

পুনরায় প্রেসিডেন্ট হতে ট্রাম্পকে সহযোগিতা করবে সোলাইমানি হত্যাকাণ্ড?

জনমত জরিপ অনুসারে, ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধের ফল মার্কিনিরা এখনও উদ্বেগে রয়েছে। তারা চায় না সরকার আরেকটি সামরিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ুক।

ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় নয়। আগস্টে প্রকাশিত গ্যালাপ জরিপ অনুসারে, ৭৮ শতাংশ মার্কিন নাগরিক তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে বেসামরিক পদক্ষেপের পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন। ৬৫ শতাংশ বলেছেন হয়ত যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যবহার করে ফেলতে পারে উদ্বিগ্ন তারা।

তবে বড় ঘটনার পর জনমত বদলে যায় এবং সোলাইমানিকে হত্যা এখন বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে প্রধান হয়ে উঠেছে। পোর্টার বলেন, জনগণের মনোযোগ এখন এই হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে। আগামী কয়েক দিন বা সপ্তাহে কী ঘটতে যাচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে সামরিক সংঘাত ও ইরানের প্রতি আচরণ নিয়ে হয়ত বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। সূত্র: মিডল ইস্ট আই 

/এএ/
সম্পর্কিত
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, গ্রেফতার ১
স্থায়ী সংঘাতে পরিণত হচ্ছে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা: তুরস্ক
সর্বশেষ খবর
কুকি চিনকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা: নুর
কুকি চিনকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা: নুর
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
কান উৎসব ২০২৪১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস, সিপিআই-এম ইন্ডিয়া জোট নয়, বিজেপির এজেন্ট: মমতা
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস, সিপিআই-এম ইন্ডিয়া জোট নয়, বিজেপির এজেন্ট: মমতা
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী